হুমকির মুখে গ্রেনেডের উৎসের তথ্য ছাড়াই চার্জশীট দেয়া হয়

স্টাফ রিপোর্টার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কে সিআইডির আগের তদনত্ম কর্মকর্তা সব তথ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু চার্জশীটে প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি।
একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার হুমকির মুখে গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য ছাড়াই চার্জশীট দাখিলে বাধ্য করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিসত্মানের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ধুয়া তুলে গ্রেনেডের সরবরাহকারী দেশ হিসেবে পাকিসত্মানের নাম চার্জশীট থেকে বাদ দিতে সিআইডিকে বাধ্য করেছিল প্রভাবশালী ওই গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কয়েকজন কর্মকর্তা। এদিকে গ্রেনেড হামলা মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে। অন্যদিকে ওই সময়ের মতিঝিল থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনের পর গ্রেনেড হামলা মামলার পুনর্তদনত্মেত্ম গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়। তদনত্মে নানাভাবেই একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার বেশ কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তার নাম চলে আসে। এমনকি গ্রেনেডগুলো পাকিসত্মান থেকে এসেছে বলেও নিশ্চিত হয় সিআইডি। গ্রেনেডের উৎস হিসেবে পাকিসত্মানের নাম চলে আসায় একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় উর্ধতন কর্মকর্তা চরম অসনত্মোষ প্রকাশ করেন। বিষয়টি চেপে যেতে সিআইডির তদনত্মকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তাঁরা। এতে তদনত্মকারী কর্মকর্তা আপত্তি করলে তাঁকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়। ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র থেকে খোয়া যাওয়া গ্রেনেড নয়। বাংলাদেশে নাশকতা চালানো ও শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এসব গ্রেনেড পাকিসত্মান থেকে আনা হয়েছিল। এখনও বেশ কিছু গ্রেনেড উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরবতর্ীতে চার্জশীটে গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কে প্রভাবশালী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের চাপের মুখে দ্বিমুখী তথ্য দেয়া হয়। বলা হয়, ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড বিশ্বের মাত্র দু'টি দেশ অস্ট্রিয়া ও পাকিসত্মানে তৈরি হয়। কিন্তু ব্যবহৃত গ্রেনেড কোন্ দেশের তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এসব গ্রেনেড বাইরে থেকে এসেছে বলে উলেস্নখ করা হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, হালনাগাদ বাংলাদেশে উদ্ধার হওয়া সব গ্রেনেডই আর্জেস-৮৪ মডেলের গ্রেনেড। পাকিসত্মানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা এ গ্রেনেড তৈরি করে থাকে। অস্ট্রিয়া সাধারণত আর্জেস-৮৬ মডেলের গ্রেনেড তৈরি করে থাকে। শেষ পর্যনত্ম প্রভাবশালী ওই গোয়েন্দা সংস্থার চাপের মুখে ২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনকে আসামি করে সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবিরকে আদালতে চার্জশীট দাখিল করতে বাধ্য করা হয়। মূলত হরকত-উল-জিহাদপ্রধান মুফতি হান্নান, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ গ্রেফতারকৃত হুজি নেতারা গ্রেনেড হামলার অনেক তথ্য সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে ফাঁস করে দেয়। পাকিসত্মান থেকে গ্রেনেড বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার বেশ কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা জড়িত থাকার তথ্যও প্রকাশ করে দেয় তারা।
সিআইডির এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনত্মত শতাধিক আর্জেস গ্রেনেড এসেছিল পাকিসত্মান থেকে। এসব গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কে তৎকালীন এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া মতিঝিল থানার ওসি মোঃ রফিককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে সিআইডি।

No comments

Powered by Blogger.