মিউজিক এ্যাওয়ার্ড_ সন্জীদা খাতুনকে আজীবন সম্মাননা- সংস্কৃতি সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রদান করা হলো সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক এ্যাওয়ার্ডস। এ উপলৰে মঙ্গলবার হোটেল শেরাটনের উইন্টার গার্ডেনে এক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিগত দিনে সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ কোন প্রভাব ফেলতে না পারলেও, আয়োজনটি ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। জনপ্রিয় তারকাদের অনেকেই এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। এদিন ১৫টি ক্যাটাগরিতে শিল্পী ও কলাকুশলীদের পুরস্কৃত করা হয়। আজীবন সম্মাননা জানানো হয় শিল্পী সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুনকে। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন ওসত্মাদ সোহরাব হোসেন। এ সময় আগত দর্শকদের সকলেই শিল্পীকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। পুরস্কার গ্রহণের অনুভূতি ব্যক্ত করে সন্জীদা বলেন, এমন পুরস্কারের জন্য আমরা কাজ করি না, এটা সত্য। তবে কাজের স্বীকৃতিতে মন খুশি হয়। বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে সবার উপরে স্থান দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাঙালীর সংস্কৃতি বলতে আমি বুঝি_ বাঙালীর স্বভাবঅর্জিত ধর্মটিকে। এ ধর্মটি অটুট রেখে বিশ্ব সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালী সংস্কৃতির আদান প্রদানের ওপর জোর দেন তিনি। অন্য অনেক ধরনের সঙ্গীতের চর্চা ওসত্মাদদের সাহায্য নিয়ে করলেও, রবীন্দ্র সঙ্গীত তিনি নিজে স্বরলিপি দেখে দেখে করতেন জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যরাও এভাবে শিখলে অনেক ভাল করবেন। যে কোন ধরনের সঙ্গীতের জন্যই একটু লেখা পড়া প্রয়োজন বলে মনত্মব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে আয়োজকদের অনুরোধে ওসত্মাদ সোহরাব হোসেন ও সন্জীদা খাতুন একসঙ্গে একটি গানের কিছু অংশও গেয়ে শোনান। বার্ধক্যের ভারে নু্যব্জ শিল্পীদ্বয়ের কণ্ঠে 'সেদিনও বলেছিলে এই সে ফুলবনে আবার হবে দেখা' শুনে আবেগাপস্নুত শ্রোতা করতালিতে ফেটে পড়েন। সকলেই দাঁড়িয়ে সম্মান জানান প্রিয় ব্যক্তিত্বদের। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এদিন অনুষ্ঠানে সেরা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর পুরস্কার পান রম্নকাইয়া হাসিনা নিলি। নজরম্নলের গানের জন্য সেরা নির্বাচিত হন পারভীন সুলতানা। পলস্নীগীতিতে সেরা নির্বাচিত হন বিশ্বজিত রায়। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে কণ্ঠ ও যন্ত্র এ দু'টি পুরস্কার রাখা হলেও, কণ্ঠের জন্য কোন প্রার্থিতা ছিল না। এটাকে দুর্ভাগ্যজনক উলেস্নখ করে উপস্থাপিকা ঘোষণা করেন উচ্চাঙ্গসঙ্গীত যন্ত্র বিভাগের পুরস্কারটি। এ পুরস্কার পান সত্যজিৎ চক্রবতর্ী। সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পান মানাম আহমেদ। গীতিকারের পুরস্কার পান জুলফিকার রাসেল। পুরস্কার দেয়ার পাশাপাশি সংশিস্নষ্ট বিভাগগুলোতে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাওয়া বাকি শিল্পী ও কলাকুশলীদের নামও তুলে ধরা হয়। অধিকাংশ ৰেত্রেই তালিকাটি সমৃদ্ধ ছিল না।
এর আগে জনপ্রিয় কম্পোজার ফুয়াদের ইন্সট্রুমেন্টাল দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরম্ন হয় অনুষ্ঠান। এরপর সাইড স্ক্রিনে আয়োজকরা তুলে ধরেন বিগত চারটি আয়োজনের খ-চিত্র। এরপর সংৰিপ্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা বলেন, পুরস্কারের জন্য কেউ গান করেন না, আমরা তা জানি। কিন্তু তবুও উৎসাহ দেয়ার একটি ব্যাপার থাকে। আমরা সে ইচ্ছা থেকেই এ পুরস্কারের আয়োজন করছি। সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী মাইকেল সীমোর বলেন, সঙ্গীত বাংলাদেশের সংস্কৃতির গুরম্নত্বপূর্ণ অংশ। এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এ অংশটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি।
এদিন আধুনিক গান, ছায়াছবির গান, গীতিকার, নবাগত গায়ক গায়িকা, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কভার ডিজাইন, মিউজিক ডিরেক্টর, মিউজিক ভিডিও বিভাগে দেয়া হয় বাকি পুরস্কারগুলো। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড বিভাগে কোন প্রাথর্ী ছিল না।
অন্যান্যবারের মতো সাধারণ শ্রোতা এবং দর্শকদের মতামতের ওপর নির্ভর করে এসএমএস ভোটিংয়ের মাধ্যমে চারটি বিশেষ ক্যাটাগরেিত ৫ম সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক এ্যাওয়ার্ড বাই পপুলার চয়েস ঘোষণা করা হয়। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে- শ্রেষ্ঠ ব্যান্ড, শ্রেষ্ঠ নবাগত গায়ক/গায়িকা, শ্রেষ্ঠ আধুনিক গান এবং শ্রেষ্ঠ ছায়াছবির গান।
মোট তিনটি ধাপে মিউজিক এ্যাওয়ার্ডসের বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য শিল্পীদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং অডিও ক্যাসেট এবং অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ২০০৮ সালের রিলিজ করা এ্যালবাম চেয়ে চিঠি পাঠানোর মধ্য দিয়ে এ্যাওয়ার্ডের মূল কার্যক্রম শুরম্ন হয়েছিল। এই আহবানে সাড়া দিয়ে সারাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৮০০ এ্যালবাম জমা পড়ে। প্রতিটি পর্বের বাছাইয়ের েেত্র সম্মানিত জুরিদের রায়ই চূড়ানত্ম বলে বিবেচিত হয়েছে। বিভিন্ন পযর্ায়ে যাঁরা এবার বিচারক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সুধীন দাশ, সোহরাব হোসেন, মুসত্মাফা জামান আব্বাসী, ফেরদৌসী রহমান, শেখ সাদী খান, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, হাশেম খান, ফেরদৌস আরা অন্যতম।
আজ শেষ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রদর্শনী আজ শেষ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত মুক্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক চতুর্থ আনত্মর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উৎসব। ১৩টি দেশের ২৮টি প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে আয়োজিত এ উৎসবের শেষদিন আজও থাকছে প্রদর্শনী। 'লঙ্কা : দি আউটসাইড অব ওয়ার এ্যান্ড পিস', 'জেনোসাইড ইন দ্য ফার্স্ট হাফ অব দ্য টুয়েন্টিনথ সেঞ্চুরি', 'দ্য স্প্যানিশ আর্থ' ও 'দারফুর নাউ' নামের চারটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে আজ। মঙ্গলবার উৎসবের ষষ্ঠ দিনও দেশ-বিদেশের পাঁচটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি উৎসবের উদ্বোধন হয়। এখানে অলিভার স্টোন, সুপ্রিয় সেন, কন লচ, নিকোলাস গেহ্যাটেন ও ইয়োরিস ইভেন্সের মতো আনত্মর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। পাশাপাশি দেশের প্রতিষ্ঠিত ও নবীন নির্মাতাদের অংশগ্রহণও ছিল। প্রদর্শিত প্রামাণ্যচিত্রগুলোর মাধ্যমে আমরা গত শতকে পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি। উৎসবের ছিল গণহত্যা ও গণহত্যাকারীদের বিচার প্রসঙ্গ।
উলেস্নখ্য, উৎসবটি দেশের দু'জন বরেণ্য সংস্কৃতি যোদ্ধা ও আলোকচিত্রী নাইব উদ্দিন আহমেদ ও নওয়াজেশ আহমেদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.