সেচ ব্যবস্থা-সময় থাকতেই ভাবতে হবে

চলতি বোরো মৌসুমে নাটোরের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকচাষিরা সেচযন্ত্রের মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তা এই সংকটের খণ্ডচিত্রই বিবেচিত হবে। বস্তুত দেশের প্রায় সবখানেই প্রান্তিকচাষিরা কমবেশি এমন পরিস্থিতির শিকার।
সঙ্গত কারণেই দরিদ্র কৃষকের পক্ষে অগভীর নলকূপ কিনে চাষাবাদ করার মতো অর্থ কিংবা পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি থাকে না। তারা অন্যের সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য। মালিকপক্ষ সেই সুযোগই ষোলোআনা গ্রহণ করে। কেবল পানির দাম বৃদ্ধি নয়, উপযুক্ত সময়ে পর্যাপ্ত পানি না দেওয়াসহ স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগ রয়েছে সেচযন্ত্র মালিকদের বিরুদ্ধে। অবশ্য সেচযন্ত্র মালিকদের এমন দাবিও আমলযোগ্য যে, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় জ্বালানি খরচ বেশি হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে মাত্র এক মৌসুম পরেই বিঘাপ্রতি দুই হাজার টাকা বেশি খরচ হবে_ এমনটি মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু এর প্রতিকার কী? নাটোরের কয়েকজন কৃষক সমকালের কাছে যথার্থই বলেছেন, এ ব্যাপারে নীতিমালা থাকা উচিত। আমরাও চাই সেচের সামগ্রিক বিষয়ে একটি নীতিমালা গৃহীত হোক। কেবল পানির দাম নয়, সেচের পানির উৎস ও ব্যবহার প্রণালি নিয়েও সেখানে দিকনির্দেশনা থাকুক। সেচের কাজে আমরা যেভাবে নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছি, তা-ইবা কতখানি টেকসই তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। এর ফলে ইতিমধ্যে দেশের উল্লেখযোগ্য অংশে আর্সেনিক দূষণ ঘটেছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ না করলে তা আরও ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা। উপরন্তু যেভাবে বছরের পর বছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, তাতে করে একসময় আর তা উত্তোলন কারিগরিভাবেই সম্ভব হবে না। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে তখন সেচের কী ব্যবস্থা হবে, তা কি নীতিনির্ধারকরা ভাবছেন? নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর পানি সেচের কাজে ব্যবহারই ছিল সবচেয়ে সহজ, গ্রহণযোগ্য ও টেকসই পদ্ধতি। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে নদীগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। কম সেচ প্রয়োজন হয়_ এমন মৌসুমের ফসলের প্রতি জোর দেওয়ার কথা কিছুদিন আগে কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন। সে ক্ষেত্রে কতদূর অগ্রগতি হয়েছে? আমরা চাই সেচ ব্যবস্থা নিয়ে নীতিনির্ধারণী মহল গুরুত্বসহকারে চিন্তা-ভাবনা করুক। নীতিমালা হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকচাষিরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.