পানি চুরি-ওয়াসা কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতাই সর্বাগ্রে জরুরি

'পুকুর চুরি' একদা এ দেশে চালু কথা ছিল। বড় কোনো চুরির ঘটনা ঘটলে লোকে ঘটনাটিকে পুকুর চুরি অভিধা দিয়ে এর বিশালত্ব ও অভিনবত্ব বোঝানোর চেষ্টা করতেন। বলাবাহুল্য, তখন মনে করা হতো পুকুর চুরি অসম্ভব ব্যাপার।
কিন্তু যুগের পরিবর্তনে চুরির ধরন ও পদ্ধতি এতটাই পাল্টে গেছে যে, আজকাল নদী-নালা-খাল-বিল পর্যন্ত চুরি যাওয়ার মতো ঘটনাও বিস্তর ঘটে চলেছে। শুধু চুরি নয়, প্রকাশ্য দিবালোকে জলাশয় ছিনতাই কিংবা ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটে। নদী-নালা-খাল-বিলের মতো বড় বড় জলাশয় চুরি যখন প্রায় ডালভাত হয়ে গেছে, তখন পানি চুরিকে সামান্য ব্যাপারই মনে হবে অনেকের কাছে। সকলেই স্বীকার করেন, রাজধানীতে পানির অভাব আছে। বছরের সবসময় কমবেশি অভাব থাকলেও গ্রীষ্ম মৌসুমে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকরা সকলে প্রয়োজন অনুসারে পানি পান না, এটি বাস্তবতা। পানির এ সংকটের কারণে সকলকেই কম-বেশি সাশ্রয় করেই চলতে হয়। দিনের একটা বড় সময় পানি থাকবে না বলে প্রায় গৃহস্থালিতেই পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকে। পানি সংকট যে সহজে মিটবে না, এ সংকট মোকাবেলায় যে নাগরিকদের আরও সচেতন হতে হবে এমন কথা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা প্রায়ই বলেন। গণমাধ্যমেও নিয়মিত পানির অপচয় রোধ করার জন্য নানা প্রচারণা চলে। প্রচারের উদ্দেশ্য সাধারণ জনগোষ্ঠী। সাধারণের সচেতনতা নিশ্চয়ই বাড়াতে হবে। যেভাবেই হোক পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের সামান্যতম অপচয়ও রোধ করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে একথা পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারেও সত্য। কথায় আছে, নিজে পালন করে তবেই নীতিকথা অপরকে শেখাতে হয়। কিন্তু বাস্তবে এমন কর্মপদ্ধতির দেখা মেলা ভার। রাজধানীর সরবরাহ লাইন থেকে পানি চুরির ঘটনা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবারের সমকালে। রাজধানীর পানি বিতরণের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ওয়াসার নাকের ডগায় ফকিরাপুল পাম্প থেকে সরাসরি বাণিজ্যিক ভবনে অবৈধ পানি সরবরাহ লাইনের সন্ধান পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এমন একটি নয়, বেশ কিছু ঘটনার সন্ধান মিলেছে। শুধু এবারের অভিযানেই নয়, মাঝে মধ্যেই পানি বিতরণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সুযোগে, কিংবা এ প্রতিষ্ঠানের অসাধুদের যোগসাজশে পানি চুরি করে যাচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল। একটি হিসাব মতে, ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭২ কোটি লিটার পানি চুরি যাচ্ছে। এ পানি দিয়ে ৬০ লাখ মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, এ পানি সিস্টেম লসের কারণেই নষ্ট হচ্ছে। যুক্তির খাতিরে সে কথাকে সত্য ধরে নিলেও সমর্থন করা যায় না। এত বেশি সিস্টেম লস যদি নিয়মিত ঘটনা হয়, তবে লস কমানোর যথার্থ ব্যবস্থা সর্বাগ্রে নেওয়া উচিত। লস সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা উচিত। নাগরিকদের কষ্টের মধ্যে রেখে, সিস্টেম লসের কাছে আত্মসমর্পণ করার যুক্তি কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। পাশাপাশি চুরির ঘটনাগুলো রোধ করে দ্রুত স্বচ্ছ সেবা ব্যবস্থা চালু করা উচিত। দিনের পর দিন পানি চুরি যেতে থাকবে এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সেটি নিয়ে নিজেদের অজ্ঞতাকে সামনে তুলে ধরবে সেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ঢাকায় নাগরিকদের মধ্যে পানির সুষম বণ্টনের স্বার্থে যেমন, সরকারি কোষাগারের অর্থ বাঁচানোর জন্যও তেমনি পানি চুরি বন্ধ হওয়া দরকার। আর চুরি ঠেকাতে পানি বিতরণ কর্তৃপক্ষ সচেতন না হলে সমাধান সহসা মিলবে বলে মনে হয় না।

No comments

Powered by Blogger.