সীমান্তে হত্যা-দিল্লিকে ঢাকার প্রতিবাদ

গত নভেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে সাত বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবাদ জানানোর কথা স্বীকার করেন।
এ সময় তিনি বলেন, 'হত্যা কখনোই কোনোভাবে মার্জনা করা সম্ভব নয়। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই অতিরিক্ত।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে 'নোট ভারবাল' আকারে প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সীমান্তে হত্যা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যদি ঘটনার স্থান, সময় দেখি, তাহলেই কিন্তু আমাদের কাছে বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার হবে। কিছুটা হয়তো আন্দাজ করতে পারব, ঘটনাটি একপেশে কি না।' তিনি বলেন, 'হত্যা কখনোই কোনোভাবে মার্জনা করা সম্ভব নয়। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই অতিরিক্ত। এটি হওয়া নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক।'
তিনি বলেন, 'গত চার বছরে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে, এর আগে কখনো এমনটি হয়নি। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং ভারতেরও সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে। তাঁরা বলেছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা চাই, এ সংখ্যা শূন্যের কোঠায় চলে যাক।'
জিএসপি সুবিধা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই : যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাণিজ্য সুবিধা জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) ইস্যুতে চিঠি দিয়েছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'তিনি আমাকে কোনো চিঠি দেননি। ওই চিঠির একটি কপি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পরে আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, আমিনুল হত্যার বিষয়টি কারো অজানা নয়। তাজরীন গার্মেন্টে আগুনের পর পোশাকশিল্পে নিরাপত্তার বিষয়টি আরো গুরুত্ব পেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দেশের কমপ্লায়েন্স এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাজরীনের দুঃখজনক ঘটনার পর সবাই এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন।
তিনি বলেন, 'জিএসপি নিয়ে এর আগেও বহুবার কথা হয়েছে। আমাদের দিকটি আমরা সময়মতো তুলে ধরব। কাজেই আমি মনে করি না, এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু আছে। এটি দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনারও বিষয়। এটিও মনে রাখা দরকার যে আমাদের জিএসপির দরকার আছে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের মাত্র দশমিক ছয় শতাংশ জিএসপির আওতাভুক্ত।'
নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের তাগিদ : নির্বাচন ও সংলাপ ইস্যুতে ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের তাগিদ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দেশের বিভিন্ন ইস্যু, বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা যেভাবে মন্তব্য করতেন, গত চার বছরে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এটিও পররাষ্ট্রনীতির অর্জন বলে দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, নির্বাচন ও সংলাপ ইস্যুতে সবাই কথা বলছেন না, কেউ কেউ বলছেন। আর এতে সরকারের চাপ অনুভব করার কিছু নেই। কারণ বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে, সেটি আমাদের নিজস্ব বিষয়। বাংলাদেশের সরকার, জনগণ, রাজনৈতিক মহলই বিষয়টি দেখবে।
জরিপগুলোর জরিপ করবে সরকার : রবিবার প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ৩৩ শতাংশ সফল বলা হয়েছে বলে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, 'পাস মার্ক'। এরপর তিনি বলেন, 'অবশ্যই যাঁরা জরিপ করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণ করেছেন, আমি নিশ্চয়ই তাঁদের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। তার পরও জরিপ অনেক রকম হয়। প্রশ্ন কেমন, প্রশ্নটি কিভাবে করা হয়, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'জরিপ দেখছি অনেক বের হচ্ছে। অনেক রকমের জরিপ। আর তার সঙ্গে সবগুলো যে খুব সাযুজ্যপূর্ণ বা এটিই ট্রেন্ড- সেটি মনে করার খুব সুযোগ পাচ্ছি না। সে জন্য আমার মনে হয়, সব জরিপ বের হোক। তারপর আমরা সবাই মিলে ওই জরিপগুলোর একটি জরিপ করে বুঝতে পারব, আসলে কী অবস্থা।'
বিশ্বজিৎ হত্যা : বিশ্বজিৎ হত্যার মতো ঘটনার পর বাংলাদেশকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র বলা যাবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'নিশ্চয়ই যাবে। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। নিশ্চয়ই এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। মানবাধিকার রক্ষিত হয় কি না তা বিবেচনা করতে হবে এ ধরনের ঘটনার পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার ভিত্তিতে। হত্যাকারীরা যেই হোক না কেন, অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, রাজনৈতিক দলকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এটি নিশ্চয়ই মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আমাদের উত্তরণকে নেতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ সৃষ্টি করেনি।'
৪০টি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রথমবারের মতো বিশ্বের ৪০টি ভাষায় শিগগিরই অনুবাদ করা হবে।
সিডও : নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের সনদ সিডওতে দুটি ধারায় বাংলাদেশ সংরক্ষণ তুলে নেবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই দুটি ধারায় যা বলা আছে তা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি মালয়েশীয় জাহাজে আটক বাংলাদেশিদের ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে সরকার কাজ করছে। একজন জিম্মি নাবিকের বাবাকে (চাঁদপুরের বাসিন্দা) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দালালদের টাকা দিতে হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন অভিযোগের ব্যাপারে দীপু মনি বলেন, 'আমার এলাকার যে কেউ যেকোনো সময় আমার মন্ত্রণালয়ে আসেন, দেখা করেন। আর আমি এলাকায়ও বেশ নিয়মিতই যাই। তাঁরা সেখানেও দেখা করেন।' প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে তিনি বলেন, ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিলে তিনি নিজেই জিম্মি নাবিকের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের চার বছরের সাফল্য তুলে ধরেন। ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া ও স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে এখনো আশাবাদী কি না জানতে চাইলে তিনি ইতিবাচক উত্তর দেন।

No comments

Powered by Blogger.