বিশ্বকাপে সাকিব অধিনায়ক, তামিম সহ-অধিনায়ক

মাশরাফি বিন মর্তুজা, না সাকিব আল হাসান? বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের সামনে ঝুলে ছিল প্রশ্নটি। উত্তর যাঁদের কাছে, সেই বিসিবির কর্তারা অবশ্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনই মনে করেননি। বিশ্বকাপের মাস দুয়েক আগেও তাই বাংলাদেশ দল জানে না তাদের অধিনায়কের নাম।
এমন সময় ইনজুরিতে পড়ে মাশরাফি এক অর্থে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন দোদুল্যমান বোর্ডকে। তাতেও কি রক্ষা আছে! এবারের গেঁড়াকল সহ-অধিনায়কত্ব নিয়ে। তামিম, মুশফিক, না মাহমুদুল্লাহ�আবার সেই দোলাচল। বিসিবির প্রেসিডেন্ট তো সহ-অধিনায়ক ছাড়া বিশ্বকাপ খেলার তত্ত্বও দিয়েছিলেন!
কাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুছে গেছে সব সংশয় আর অনিশ্চয়তা। সাকিবকে অধিনায়ক এবং তামিমকে সহ-অধিনায়ক ঘোষণা করেছে বিসিবি। তাও শুধু বিশ্বকাপ নয়, পুরো ২০১১ সালের জন্যই। আর এর মাধ্যমেই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে বিসিবির ধারাবাহিক নাটকের অবসান হলো। অবশেষে!
বাতাসে গুঞ্জন ছিল অনেক রকম। বোর্ড পরিচালকদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের সীমা ছাড়িয়ে আবাহনী-মোহামেডানের ক্লাবভিত্তিক সেই চিরকালীন দ্বন্দ্বের গন্ধও ছিল প্রবলভাবে। ছিল কোচ জেমি সিডন্সের ভোট আর সাকিবের সম্মতির অপেক্ষা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের মতো বিসিবির অনুরোধ রক্ষার কথা না আবার মিডিয়ার সামনে অকপটে বলে ফেলেন সাকিব। সর্বশেষ বোর্ড সভায় বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল তাই সম্ভাব্য অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজকে। সাকিব-তামিমের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সম্মতি পাওয়ার পরই বিসিবির ঘোষণা।
অধিনায়ক হলে দীর্ঘমেয়াদে হতে চাই�সাকিব এ কথা ঠারেঠোরে বলেছেন অনেকবার। সরাসরিও কয়েকবার। এক বছরের জন্য দায়িত্ব পাওয়ায় তাঁর ইচ্ছেই পূরণ হলো। সহ-অধিনায়কের ভূমিকায় বন্ধু তামিম ইকবাল বাড়তি প্রাপ্তি। মাশরাফির ইনজুরির কারণে দেড় বছর ধরে বেশির ভাগ ম্যাচেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। অধিনায়কত্ব তাই তাঁর কাছে কোনো অচেনা ভুবন নয়। এনায়েত হোসেন সিরাজ বলেছেন সে কথাই, �অধিনায়কত্ব আসলে অর্জনের ব্যাপার। হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদরা দীর্ঘদিন সেই দায়িত্ব পালন করেছে। এখন করবে সাকিব। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে আর সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে ওর যা পারফরম্যান্স, সেটি ওর প্রাপ্য।� বিসিবির আরেক পরিচালক জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদে অধিনায়কত্বের দৌড়ে সাকিব ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন, �আসলে তো মাশরাফিই আমাদের অধিনায়ক ছিল, কিন্তু বারবার ইনজুরিতে পড়ায় আমরা শঙ্কিত হয়ে যাই। দীর্ঘমেয়াদের অধিনায়ক নির্বাচনে তাই মাশরাফির কথা বিবেচনার সুযোগ ছিল না।�
অধিনায়ক নির্বাচন সহজ হয়ে গেলেও সহ-অধিনায়ক নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল। ছিল অস্ট্রেলিয়ায় ছুটিতে থাকা কোচ সিডন্সের মতামত নেওয়ার ব্যাপারও। ই-মেইল, ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেই বিসিবি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে অবশ্য সিডন্সের দ্বিমত করার কারণ ছিল না। কে না জানে, সাকিব-তামিম তাঁর প্রিয় শিষ্যদের মধ্যেই পড়েন। তামিমের নির্বাচন নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাকিবের সঙ্গে তাঁর রসায়নকে সামনে তুলে এনেছেন এনায়েত হোসেন, �সহ-অধিনায়কত্ব নিয়ে আমাদের বেশ ভাবতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তামিমকে বেছে নেওয়ার কারণ সাকিবের সঙ্গে ওর বোঝাপড়া। আর টিমম্যান হিসেবে ও দারুণ। এত দিন তো বাংলাদেশের কোনো সহ-অধিনায়ক ছিল না। কিন্তু মাঠে, মাঠের বাইরে দেখতাম অধিনায়ককে দারুণ সহযোগিতা করছে তামিম। আর সাকিবের সঙ্গে ওর বন্ধুত্বের কথাও সবাই জানেন। এসব কারণেই তামিমকে বেছে নেওয়া।�
বিচার ঠিক মানলেও তালগাছের দাবি এখনো ছাড়ছে না বিসিবি। বিশ্বকাপের মাত্র ৪৯ দিন আগে অধিনায়ক ঘোষণাও তাঁদের পরিকল্পনামতো হয়েছে বলে ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যানের দাবি, �আমার মনে হয় না আমরা অধিনায়ক ঘোষণায় দেরি করেছি। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরুর আগে অধিনায়কের নাম ঘোষণা করব। সে হিসাবে তো দেরি হয়নি। এখন সবাই প্রিমিয়ার লিগ খেলছে। অধিনায়ক আগে থেকে দিলেও তো তাঁর কোনো কাজ থাকত না।� দুজনকে দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। কোনো কারণে বিশ্বকাপে বিপর্যয় হলেও বিসিবি তাঁদের ওপরই আস্থাশীল বলে জানিয়েছেন এনায়েত হোসেন, �বিশ্বকাপ তো একটি প্রতিযোগিতা মাত্র। এর সঙ্গে অধিনায়কত্বের সম্পর্ক কোথায়? এই একটি টুর্নামেন্টে আমরা খারাপ করতেই পারি। ফর্মে থাকা ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্র�প টপকানো সহজ না। তো বিশ্বকাপে খারাপ করার অর্থ এই নয় যে, সব দোষ অধিনায়কের। আমরা এক বছরের পরিকল্পনা নিয়েছি। বিশ্বকাপে যেমনই করি, অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক হিসেবে সাকিব-তামিমই থাকবে।�
ব্যাটে-বলের পারফরম্যান্সের সাকিব-তামিম জুটি অনেক রঙিন মুহূর্ত উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। দেখা যাক, এবার অধিনায়ক-সহঅধিনায়কের রসায়নে কতটা কী করে! তাঁদের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপ যে!

No comments

Powered by Blogger.