প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছেন- দেলোয়ারের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে কিছুই করতে পারেননি, কেবল ভারতের স্বার্থই রৰা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সই করা বিভিন্ন চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বুধবার দলটির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশের কোন স্বার্থ রৰা হয়নি। পুরোটাই ভারতের স্বার্থ রৰা করা হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী পদক ছাড়া এ সফর থেকে বাংলাদেশ কিছু পায়নি। এ ছাড়া বিকেলে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সবকিছু দিয়ে এসেছেন আর নিয়ে এসেছেন আশ্বাস। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের আশ্বাস বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশ থেকে মূল্যবান সম্পদ পাচার এবং বাংলাদেশ ভারতীয় চোরাকারবারীদের বাজারে পরিণত হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থের কথা না ভেবে শুধু ভারতের স্বার্থই দেখেছেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ভারত ১৬ বছর আগে বাংলাদেশকে পানি দিতে চেয়েও দেয়নি। তাই বাংলাদেশের জনগণ ভারতের আশ্বাস বিশ্বাস করে না। বিডিআরকে পঙ্গু করে বাংলাদেশকে ভারতীয় চোরাকারবারীদের বাজারে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে মনত্মব্য করে তিনি বলেন, ট্রানজিট নয়, দ্বিপাৰিক চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যের বাংলাদেশে আনার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এক সময় দেখা যাবে বাংলাদেশের বাজারে শুধু ভারতের পণ্য আছে, বাংলাদেশের পণ্যই নেই। তিনি বাংলাদেশ থেকে মূল্যবান সম্পদ ভারতে পাচারের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ট্রানজিট বহুপৰীয় হয়, দ্বিপৰীয় হয় না। তিনি চট্টগ্রাম বন্দর ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ভারত তো সবই পেল, কিন্তু বাংলাদেশ তো নেপাল যাবার ট্রানজিট পেল না। তিনি ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির সমালোচনা করে বলেন, ভারতের বিদু্যতের ওপর নির্ভর করে যে সব শিল্পকারখানা চলবে, ভারত হঠাৎ যদি বিদু্যত সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তাহলে সে সব শিল্পকারখানার কি হবে। বিদু্যত উৎপাদন করার চেষ্টা না করে কেন ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে_ এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এর জবাব সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে।
মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে কেবল ভারতের স্বার্থই রৰা করেছেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে কিছুই করতে পারেননি। বরং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ভারত সফরে সই করা বিভিন্ন চুক্তি দেখে মনে হয় মহাজোট সরকার নির্বাচনের আগে ভারতকে দেয়া ওয়াদাই রৰা করেছে। প্রধানমন্ত্রী সেই ওয়াদা অনুযায়ী দেশের জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী চুক্তি সই করেছেন। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে ব্যবসার জন্য ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত ভারতকে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করতে দেয়ার বিষয়টি বৈধ করতেই এটা করা হয়েছে। কারণ ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আমাদের খুব বেশি টাকার বাণিজ্য হয় না। তবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য করতে এ সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশ লাভবান হতো বলে তিনি মনত্মব্য করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয় উপেৰিত থেকে গেছে। আমাদের স্বার্থসংশিস্নষ্ট টিপাইমুখ বাঁধ, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন ও ছিটমহল সমস্যার সমাধানসহ বাণিজ্য ঘাটতির মতো বিষয়গুলোর কোন যৌক্তিক সমাধান হয়নি। এতে দেশের জনগণ হতাশ হয়েছে। বাংলাদেশকে ভারতের ১০০ কোটি ডলারের আর্থিক সাহায্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে অর্থ সহায়তার কথা বলা হয়েছে তা দিয়ে ভারতের সুবিধা হয় এমন কাজই করা হবে। ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি ভারত ঠিকমতো বিদু্যত দেয়, তাহলে ভাল। কোন কারণে ভারত যদি বিদু্যত সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে বলে তিনি মনত্মব্য করেন।
বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী তৃণমূল দল। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হানিফ ব্যাপারীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংবর্ধিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, বেগম সারোয়ারী রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউলস্নাহ বুলু, যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও তৃণমূল দলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাচ্চু।
No comments