যুবককে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ র‌্যাবের বিরুদ্ধে

রাজধানীর শুক্রাবাদের বাসিন্দা ইউসুফ আলী সুজনকে (৩১) অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে। ৯ মাস ধরে নিখোঁজ সুজনকে অপহরণের অভিযোগে র‌্যাবের দুজন সোর্সকে আসামি করে শেরে বাংলানগর থানায় করা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এরই মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া এক সোর্সের বরাত দিয়ে সুজনের পরিবার দাবি করেছে, র‌্যাব-২-এর কিছু কর্মকর্তা এ ঘটনায় জড়িত।
সুজনের ভাই ৫১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন,
�আমার ভাইকে র‌্যাব-২-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী জোসনার দেওয়া তথ্যে র‌্যাব সদস্যদের নাম পাওয়া গেছে। ভিডিও ফুটেজ ও মোবাইল কললিস্টেও এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। সুজনের শোকে বৃদ্ধ মা উম্মেতুন্নেছা (৭০) এখন মৃত্যুশয্যায়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।�
অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ নাকচ করে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, এ রকম নানা অভিযোগ জমা পড়ে। তা যাচাইও করা হয়। র‌্যাব সুজন নামে কাউকে অপহরণ করেনি। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথা। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আলোচিত এ নিখোঁজ ঘটনাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। আর তদন্তের স্বার্থেই এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না।
ভাই অপহরণ প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান জানান, ২৪ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় এক মেয়ের ফোন পেয়ে ২৯ নম্বর শুক্রাবাদের বাসা থেকে বের হয় সুজন। এরপর বাসায় না ফিরলে সন্ধ্যায় তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাতভর তার খোঁজ করা করা হয়। পরের দিন সকালে জানা যায়, ফার্মগেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁর সামনে থেকে সুজনকে র‌্যাব-২-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। র‌্যাবের সোর্স জোসনা ও তাঁর স্বামী আনিস এ ব্যাপারে র‌্যাবকে সহযোগিতা করেন। জোসনা ও তাঁর স্বামী আনিস একসময় শুক্রাবাদ এলাকায় থাকতেন। এ ঘটনার পর তাঁরা লাপাত্তা হয়ে যান। গত ২৯ মার্চ এ ঘটনায় শেরে বাংলানগর থানায় জোসনা ও আনিসকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। এরপর পুলিশ সিরাজগঞ্জের একটি গ্রাম থেকে জোসনাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের জড়িত থাকার তথ্য জানতে পারে। র‌্যাব-২-এর লেফটেন্যান্ট ফরহাদসহ কয়েকজন সুজনকে ধরে নিয়ে যান বলে তথ্য মেলে। জোসনা বর্তমানে জেলে রয়েছেন।
সুজনের পরিবারের দাবি অনুসারে, ঘটনার দিন বিকেলে আনিসের ফোন পেয়ে জোসনা ফার্মগেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় পৌঁছে র‌্যাবের অফিসার ইকবালসহ আরো কয়েকজনকে দেখতে পান। তখন সুজনকে টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তুলে র‌্যাব-২ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে ফরহাদ স্যারের হাতে সুজনকে তুলে দেওয়া হয় বলে জোসনা পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুলিশকে দেওয়া জোসনার জবানবন্দি ভিডিও ফুটেজসহ সুজনের পরিবারের হেফাজতে রয়েছে বলে মাহবুবুর জানান। ঘটনার দিন লেফটেন্যান্ট ফরহাদ এবং র‌্যাবের ডিএডি রফিক ও ডিএডি সামসু সোর্স জোসনার সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করেছেন এবং সুজনকে ফার্মগেটে ডেকে নেওয়াসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রমাণ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলেও মাহবুবুর জানান।
পুলিশের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে লেফটেন্যান্ট ফরহাদ ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সুজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ২৫ বার এবং ডিএডি সামসু ১৭ বার ও ডিএডি রফিক তিনবার কথা বলেছেন বলে রেকর্ড পাওয়া গেছে।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট ফরহাদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাব-২ কার্যালয় থেকে জানানো হয়, অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে র‌্যাব থেকে নৌবাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.