হাতকড়া পরা লাশ-রহস্য উদ্ঘাটনের দায় পুলিশেরই

নতুন বছরের শুরুতেই একটি চাঞ্চল্যকর ও আতঙ্ক সৃষ্টির মতো হত্যাকাণ্ডের খবর সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির নিজেদের বেডরুমে নির্মমভাবে খুন হওয়া এবং রাজধানীতে ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধের
সময়ে নিরীহ তরুণ বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যার দুঃখজনক স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বলে। ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজুমদারের মৃত্যু কি এইসব নির্মম ঘটনারই ধারাবাহিকতা? এর পেছনে কে বা কারা দায়ী সেটা এখনও স্পষ্ট না হলেও ইতিমধ্যে ঘটনাটি রাজনৈতিক রূপ পেয়েছে। পুলিশ বলতে পারে যে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এটাও তাদের মনে রাখতে হবে যে, একটির পর একটি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটতে থাকলে তা আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকে না। বরং অনেক বড় ইস্যু হয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং অন্য ক্ষেত্রের অনেক ভালো কাজও চাপা পড়ে যায়।
রফিকুল ইসলাম মজুমদারের লাশ পাওয়া গেছে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রামের মাঠে। পাশের জেলা ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার শ্বশুরবাড়ি থেকে শনিবার সন্ধ্যায় র‌্যাব পরিচয়ে কয়েকজন অস্ত্রধারী তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় 'পুলিশ' লেখা হাতকড়ায় বাঁধা ছিল দুই হাত। পরিবার ও বিএনপি নেতাদের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই এ হত্যার পেছনে এবং রাজনৈতিক কারণেই তার এমন করুণ পরিণতি। অন্যদিকে র‌্যাব ও পুলিশ উভয় বাহিনীই এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। তা হলে কে দায়ী এ হত্যার জন্য? এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই। কেউ বলতে পারেন যে রফিকুল ইসলাম বিএনপির এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন না, যাকে শাসক দল রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে মনে করে 'শেষ করে দেওয়ার' মতো ঝুঁকি নিতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ-গুম-খুনের মতো ঘটনা ঘটলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দোষারোপের প্রবণতা স্পষ্ট। কেন জনমনে এমন ধারণা সৃষ্টি হলো এবং যদি রফিকুল ইসলাম মজুমদারের হত্যার পেছনে আদৌ পুলিশ-র‌্যাবের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকে, তাহলে তাদের প্রতি সৃষ্ট সন্দেহ কীভাবে দূর করা যায় সে উপায় খুঁজে পেতে হবে তাদেরই। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বাজারে 'পুলিশ' লেখা হাতকড়া পাওয়া যায় এবং ঘটনার দায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো অপশক্তি এর ব্যবহার করে থাকতে পারে। এটা বেআইনি শুধু নয়, গুরুতর অপরাধমূলক কাজ। পুলিশ-র‌্যাবের উচিত হবে রফিকুল ইসলাম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি 'পুলিশ' লেখা হাতকড়া তৈরি ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত চক্রকেও খুঁজে বের করা। এ কাজ করতে তাদের উদ্যোগী দেখা না গেলে এ হত্যাকাণ্ডকে 'ক্রসফায়ার' ধরনের ঘটনা বলেই জনগণ মনে করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঘটনাটিকে যারা বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে ক্ষমতাসীনদের সুগভীর চক্রান্তের অংশ বলে মনে করে, তাদের দাবিই প্রতিষ্ঠিত হবে। যদি পারিবারিক কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এ মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে, তার রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্বও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। মোট কথা, হত্যার কারণ যা-ই হোক এবং এ জন্য যারাই দায়ী হোক, সে রহস্য উদ্ঘাটন এবং দোষীদের আইনের হাতে সোপর্দের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এবং সেটা দ্রুতই করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.