কর্মসংস্থান কর্মসূচি-অনিয়মই যেখানে নিয়ম

সরাইলে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে সমকালে সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাঝে মধ্যেই অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হতে দেখা যায়।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সামাজিক কর্মসূচি পর্যন্ত অনিয়ম ও দুর্নীতি বিস্তৃত হওয়ার বিষয়টি এক ধরনের বৈধতা পেয়ে গেছে যেন! আমাদের সমাজ কি এই নীতিহীনতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না? গরিবদের সাহায্যের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলোতে দেখা যায়, অনিয়মের অংশভাগটা বেশি হয়ে থাকে। গরিবরা সংঘবদ্ধ নয় এবং তাদের অনেকেই আবার অতটা সচেতন নয় যে, নিজেদের অধিকার বা ন্যায্য পাওনা বুঝে নেওয়ার মতো বুদ্ধি ও সাহস রাখে। এ কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নির্বিবাদে নয়কে ছয় করতে পারেন। গরিবের ধনে পোদ্দারি করতে অনেক তথাকথিত ভদ্রঘরের লোকজনকেও দেখা যায়। একজন অবস্থাপন্ন মানুষের নাম অবলীলায় দিনমজুরের মজুরি তালিকায় উঠে যায়। এহেন নিকৃষ্টতম অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রশ্রয়ও দেওয়া হয়। সরাইলের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে সমকালের প্রতিবেদনে প্রকাশ। আর এ ধরনের ঘটনা যে ঘটেছে এবং আরও অনিয়ম হয়েছে, সেটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান স্বীকার করে তিনি বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তবে প্রকল্পের ৮১ লাখ টাকা নিয়ে যে হরিলুট চলছে, সেটা আগে প্রকল্প পরিচালক জানতেন না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আসলে সমাজ ও রাষ্ট্র সবাইকেই গরিবদের জন্য গৃহীত এবং যে কোনো সামাজিক কর্মসূচি যাতে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়, সেটা নিশ্চিত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের ব্যত্যয়ের বিরুদ্ধে উলি্লখিত দুই জায়গা থেকেই প্রতিরোধ আসা উচিত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, সব জায়গাতেই দুর্নীতি-অনিয়মের ঘুণ বাসা বেঁধেছে। এ জন্যই সরাইলের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির অর্থ নামে-বেনামে অন্যরা উঠিয়ে নিতে পারছে। এ অবস্থার অবসান জরুরি। এ জন্য সরকারকে অবশ্যই কঠোর ও সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অনিয়ম মেনে নেওয়ার সর্বনাশা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.