পিচ্চি হেরাল- 'অপারেশন জিরো টু'

ফজলে নোমানী অপারেশন কোড নেম জিরো টু। কারাগারে আটক রাজধানীর এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর অপারেশনাল ফেভারিট কোড নেম এটি। কাউকে হত্যার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলে সেই টার্গেটের ও কোড নেম হয়ে যায় জিরো টু।
অভিযোগ রয়েছে, কারাগারের অভ্যনত্মরে বসেই সুইডেন আসলামের পর রাজধানীর আন্ডার ওয়ার্ল্ড কিলিংসহ বড় ধরনের হত্যাকা-গুলোর মূল হোতা সে। কারাগারে বসেই টার্গেটের নাম জিরো টু দেয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীটির নাম পিচ্চি হেলাল। বর্তমানে যার আয় কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ে তার কিলার গ্রম্নপের ভাড়াটে খুনীরাই জড়িত বলে গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য মিলেছে। তবে, কারা কতর্ৃপৰের দাবি, কারাগারে এরা কঠোর নিয়ন্ত্রণেই থাকে। আদালত বা অন্যত্র স্থানানত্মরের সময় বাইরে যোগাযোগ হলে তাদের করণীয় থাকে না।
বর্তমানে সক্রিয় অত্যনত্ম প্রভাবশালী আলোচ্য কিলার গ্রম্নপের একাধিক সদস্যের পুলিশে প্রদানকরা জবানবন্দী এবং প্রত্যৰদর্শীর বিবরণ থেকে থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কোড নেম জিরো টুর উত্থানকালীন একটি উলেস্নখযোগ্য হত্যাকা- ছিল লালবাগের রাশেদ সিকদার ওরফে এতিম রাশেদ হত্যাকা-। হত্যাকা-ের খ- চিত্র তুলে ধরা হলো-বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে, এক শুক্রবার বিকেলের কথা। বিগত দু'সপ্তাহ ধরে পুরো একটি দল দিন রাত তাকে অনুসরণ করে টার্গেট সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর সংগ্রহ করেছে। খবর সংগ্রহ এতই অনুপুঙ্খ যে, আগের রাতে টার্গেট তার সর্বৰণের সঙ্গী জার্মান মেইড ওয়ালথার পিপিটি গান ওয়েল ব্যবহার করে পরিষ্কার করেছিল-সেই তথ্যও রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে টার্গেট এখানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। এখান থেকে মেরে বেরিয়ে যাবার পথও অনেক থাকায় ঘটনাস্থল নির্বাচিত হয়েছে বুয়েট ক্যাফেটারিয়া। কাজেই ফাস্ট শর্ট পয়েন্ট বস্নাঙ্ক রেনজে গিয়ে মাথায় নিতে হবে। টার্গেট বিগ শর্ট । তাই তিনজন একসঙ্গে গুলি চালাবে। মিস করলে উল্টো জীবন যাবে। তার চাইতেও বড় কথা কন্ট্রাক্ট গ্রহীতা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম এক বড় ভাইয়ের প্রেস্টিজ ইসু্য। অভিযোগ রয়েছে, এলাকার সাংসদের অনুরোধ এবং উপযোগ দুই যোগ হয়েছে এই কাজে। কাজেই সবাই খুব সিরিয়াস।
ঘটনাস্থল বুয়েট ক্যাফেটারিয়া। মোবাইলে কথা চলছে কিলার গ্রম্নপের সদস্যদের মধ্যে। কিলার গ্রম্নপের সদস্য অধিকাংশই তরম্নণ এবং কিশোর। টার্গেটের নাম ঠিক করা হয়েছে 'কোড জিরো ট'। কোড-০২ আধা ঘণ্টার মধ্যেই আসার কথা। সঙ্গে লোক আছে। মোবাইলের কখোপকথনে ওপাশ থেকে নির্দেশ এলো। কোন অবস্থাতেই যেন চোখের আড়াল না হয়। ওকে বস। বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে একটি দল দাঁড়ানো। অপারেশনের মূল দায়িত্ব তাদের। পলাশীর মোড়ে একটি দল দাঁড়ানো ছিল যারা ব্যাকআপ টিম। পলাশীর মোড়ে দাঁড়ানো দলটি থেকে মোবাইলে ফোন দিয়ে জানানো হলো-কোড ০২ এস এম হলের সামনে মোটরসাইকেলে অবস্থান করছে। দাঁড়িয়ে কথা বলছে। হয়ত নামবে না। এখনই চলে আসতে পারে। মোটরসাইকেলে তিনজন এক সঙ্গে। পেছনে একটি মোটরসাইকেলে সেও আছে (নিজেদের লোক)। টার্গেটের মোটরসাইকেল স্টার্ট নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা এলো-অপারেশন টাইম অন ওভার। জিরো টুর সঙ্গে একটা জার্মান ওয়ালথার পিপি থাকার কথা। শাদা পাঞ্জাবি আর জিনস ওভার। কয়েক দফা কয়েকটি উপদলের মধ্যে এইভাবে কথোপকথনের পর কোড জিরো টু তিনজনসহ মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েট ক্যাফেটারিয়া চত্বরে প্রবেশ করল। জিরো টুর সঙ্গে থাকা কয়েকজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে ক্যাফেটারিয়া চত্বরের পাশে থাকা ঘাসের উঁচু বেদিতে চড়ে বসল। এর মধ্যেই অপারেশনাল দলটি যে যার মতো অন্য মনস্কভাবে হেঁটে তার পিছু নিয়ে কাছাকাছি চলে এসেছে। জিরো টু পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা বলে পাশের দু'জনকে চিনিয়ে দেয়ার পর পরিকল্পনামাফিক সে আসত্মে আসত্মে তার দিকে এগিয়ে গেল। সে যেতে ততটুকু সময় নিল যে সময়ে অন্য দু'জন ঘাসের বেদির পাশ দিয়ে হেঁটে জিরো টু'র ঠিক পেছনে চলে যেতে পারে। প্রথম ব্যক্তি কাছে গিয়ে সালাম দিল, 'সালামু আলাইকুম ভাইজান' কেমন আছেন বলেই পরিচিত ভঙ্গিতে হাত আগে বাড়াল। জিরো টু হাত বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সশব্দে একের পর এক গর্জে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সামনের জনও অস্ত্র বের করে আরও কয়েক দফা গুলি করে মৃতু্য নিশ্চিত করল। তার পেছনের পকেটে থাকা পিসত্মল এবং মোবাইল সেটটি উঠিয়ে নিল। এর মধ্যে পুরো এলাকাই প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রী যে যেখানে ছিল গুলির শব্দে মাটিতে শুয়ে পড়ল। তারা আরও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে আসতেই কয়েকটি মোটর সাইকেল এসে তাদের তুলে নিয়ে গেল। ঘটনাস্থলেই নিহত হলো রাশেদ সিকদার।
টপ কিলারের আয় বাণিজ্য
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দশ সেল। শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং খ্যাতনামা কিলার গ্রম্নপের সদস্যদের অবস্থান। সুইডেন আসলামের স্থানে এখন জায়গা নিয়েছে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল। এখন সেই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় বলে তথ্য মিলেছে। তথ্য রয়েছে, রাজধানীতে কিশোর এবং তরম্নণদের নিয়েই তার কিলারবাহিনী গঠিত। যে কারণে, অনেক অপারেশনে বের হবার সময় তার সাগরেদরা স্কুল ড্রেস পরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে আরামসে রাজধানীর এ মাথা থেকে সে মাথা ঘুরে বেড়াতে পারে। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর থেকে কারাগারে আগের মতো রাজকীয় হালে থাকতে না পারলেও অন্যদের মতো কড়াকড়ি জেলকোডের আওতায় এরা বন্দী নয় বলেই তথ্য মিলেছে। জেলগেটে দেখা সাৰাতে সাগরেদদের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানে মিয়া সাহেব বা পিটু জেল সেন্ট্রি একটি মাধ্যম হিসেবে এদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে বলে অভিযোগ। মোবাইলে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে রাজধানীর আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের তথ্য পত্র-পত্রিকায় ছাপা হবার পর থেকে জেল কতর্ৃপৰ মোবাইলের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করায় তারা এখন ব্যক্তিকে তথ্যের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ছাড়া এদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আদালতে কোন হাজিরা থাকলেই এরা প্রায় সে সময় স্বাধীনই বলা চলে। অথচ এত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের আদালত চত্বরে নেবার সময় ডান্ডাবেড়ি পরানোর নিয়ম। যা মানা হয় না। আদালতে অবস্থানকালীন সময়ে এরা জেল গারদে না থেকে আদালতের বারান্দায় বা আশপাশে ফ্রি মুভমেন্ট করে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজস্ব খাবার দাবার গ্রহণ করা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, নানা পরিকল্পনা এবং বাসত্মবায়নের পথ বাতলে দেয়ার অঢেল সময় পায়। সংশিস্নষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের এসব সুযোগ করে দিয়ে নিজেরাও আখের গুছিয়ে নেয় বলেও সংশিস্নষ্ট সূত্রের তথ্য। সেখানেই অজকাল টার্গেটের ছবি তাদের মক্কেলরা তাদের কাছে পেঁৗছে দেন। এর পর পুরো পস্নান অব এ্যাকশন তৈরি হয় কারাগারে। কোন তথ্য লাগলে কারা পুলিশের কাউকে কাউকে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। সূত্র মতে, প্রায় ১৩/১৪টি মামলা থাকার পরও পিচ্চি হেলালের অদ্যাবধি কোন মামলাতেই সাজা না হওয়ায় সে নিয়মিত আসামির কঠোর নিয়ম কানুনের মধ্যে পড়ে না। দিনভর তার সঙ্গে বিভিন্ন মাঠকমর্ীরা যোগাযোগ করতে আসে এবং কৌশলে তথ্যের আদান-প্রদান করে থাকে। প্রতিমাসে অনত্মত ৬টি থেকে ৮ টি মামলাতেও তার হাজিরা দিতে আদালতে যেতে হয়। এই জানুয়ারি মাসেই ৩ তারিখ, ১২ তারিখ এবং ১৩ তারিখ সে আদালতে গিয়েছিল বলে কারা কর্তৃপৰ সূত্রে তথ্য মিলেছে।
কারা কর্তৃপৰের বক্তব্য
ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার বলেন, কারাগারের ১০ সেলে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে সত্য কিন্তু তাদের মোবাইলে যোগাযোগের কোন সুযোগ নেই। সেখানে মোবাইল জ্যামার লাগানো থাকায় কোন মোবাইল নেটওয়ার্কই কাজ করবে না। আদালতে যাওয়ার পরে বাইরে ফ্রি মুভমেন্ট বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা তার এখতিয়ারভুক্ত নয়। এ সম্পর্কে সহকারী জেলার তৌহিদুল ইসলাম জানান, কারাগারে কেউ মোবাইল লুকিয়ে নিয়ে প্রবেশ করে কোনকিছু করার চেষ্টা করে অতীতে পার পায়নি। এখন তো আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া, নেটওয়ার্ক ফ্রিজ করাও রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.