সুযোগ নিতে পারে সেনাবাহিনী

হুগো শাভেজের অনুপস্থিতিতে ভেনিজুয়েলার রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তবে এবার শাভেজের অনুপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও চিন্তায় পড়েছেন বিশ্লেষকরা।
শাভেজ মারা গেলে বা রাজনীতিতে ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে ক্ষমতা দখল নিয়ে যে টানাপড়েন তৈরি হবে, সেনা কর্মকর্তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের শপথ অনুষ্ঠানের তারিখ পেছানো হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন ভেনিজুয়েলার বিরোধী দলীয় এক নেতা। জাস্টিস ফার্স্ট পার্টির নেতা হুলিও বোরহেস শপথ পেছানোর বিষয়টিকে সংবিধান লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেছেন।
১৯৯৯ সাল থেকে ভেনিজুয়েলার ক্ষমতায় আছেন শাভেজ। গত ১৪ বছরে দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। কিন্তু গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে শারীরিক অসুস্থতা ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তাঁর উপস্থিতি নিয়েই শঙ্কা তৈরি করেছে। তবে গত অক্টোবরের নির্বাচনে শাভেজ চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়েছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। তবে গত ১১ ডিসেম্বর ক্যান্সারের জন্য চতুর্থবারের মতো অস্ত্রোপচার করানোর পর থেকেই তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভেনিজুয়েলার সরকার জানিয়েছে, শাভেজের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ তৈরি হয়েছে। তিনি আদৌ সুস্থ হতে পারবেন কি না সে ব্যাপারে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো ও ভেনিজুয়েলার বিরোধী রাজনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ১০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের নতুন মেয়াদের শপথ অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। কিন্তু ভেনিজুয়েলার সরকার বলছে, নির্ধারিত দিনে শপথ নিতে না পারলেও ক্ষমতায় থাকতে কোনো সমস্যায় পড়বেন না শাভেজ। পরবর্তী সময়ে যেকোনো দিন সুপ্রিম কোর্টের কাছে শপথ নিলেই চলবে। তবে বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, নির্ধারিত দিনেই শপথ নিতে হবে। নইলে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। জাস্টিস ফার্স্ট পার্টির জাতীয় সমন্বয়কারী বোরহেস বলেন, 'সংবিধান অমান্য করলে জনগণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করতে রাজি আছে। আমরা সত্যিকারের গণ-আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যে আন্দোলনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য দেশ, দূতাবাস ও বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হবে সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে।' শাভেজ আগামী বৃহস্পতিবার শপথ নিতে না পারলে পার্লামেন্টের স্পিকার কাবেইয়োকে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান করে ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
শাভেজবিহীন ভেনিজুয়েলায় রাজনীতির ময়দানের উত্তাপ ইতিমধ্যেই টের পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা সেনবাহিনীর ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। শাভেজ দৃঢ়তার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। অনুগত কর্মকর্তাদের শীর্ষপদে পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক পদ দিয়েও পুরস্কৃত করেছেন। ভেনিজুয়েলার ২৩টি রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি গভর্নর পদে বসানো হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের। মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদেও আছেন তাঁরা। বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, শাভেজ মারা গেলে বা তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে ক্ষমতার কাড়াকাড়িতে সেনা কর্মকর্তারাও যুক্ত হবেন।
সিমন বলিভার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হোসে মাচিয়ান্দা বলেন, 'সেনাবাহিনী অস্ত্র হাতে তুলে নিতে নাও পারে। তবে ভেনিজুয়েলায় সংকট শুরু হয়ে গেছে এবং যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।'
১৯৫৮ সালে স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর ভেনিজুয়েলায় কোনো সেনা অভ্যুত্থানই সফল হয়নি। ১৯৯২ সালে শাভেজ তরুণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে অভ্যুত্থান ঘটাতে গিয়ে ব্যর্থ হন। ২০০২ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তবে দুই দিন পরেই শাভেজ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। ভেনিজুয়েলার সামরিক বাহিনীবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রসিয়ো সান মিগুয়েল বলেন, 'শাভেজের সাময়িক বা স্থায়ী অনুপস্থিতির ব্যাপারে সশস্ত্র বাহিনী যদি সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকে, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটবে না। কিন্তু তারা সংবিধান বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পরোয়া না করলে অস্পষ্ট পরিস্থিতি তৈরি হবে। সেনাবাহিনীর ভেতরেও কলহ শুরু হতে পারে।' সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.