শুধু বাংলাদেশেই নয় উপকৃত হবে দৰিণ এশিয়া- দিলস্নী থেকে ফিওে সফর সম্পর্কে শেখ হাসিনা সংবর্ধনায় জনতার ঢল

স্টাফ রিপোর্টার বিমানবন্দর টু যমুনা। সর্বত্রই এক অন্যরকম পরিবেশ। দীর্ঘপথের চারদিকে উৎসবের আমেজে শুধু মানুষ আর মানুষ। জনতার ঢলে যেন জনসমুদ্র। শত শত পুলিশ, র্যাব, সোয়াত, গোয়েন্দা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাবলয় আর নিরাপত্তায় এসএসএফ।
কিন্তু শেষ পর্যনত্ম কিছুই টেকেনি তীব্র জনস্রোতের কাছে। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়া সত্ত্বেও মানুষের রীতিমতো ঢল নেমেছিল এ সুদীর্ঘ সড়কপথে। হাজার হাজার মানুষ এ দীর্ঘপথে মানবঢাল রচনা করে বুধবার নিংড়ানো ভালবাসা আর পুষ্পবৃষ্টি ছিটিয়ে দেশে ফিরে আসা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেন। সফল ভারত সফর আর মর্যাদাপূর্ণ ইন্দিরা গান্ধী শানত্মি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে যমুনা পর্যনত্ম কয়েক কিলোমিটার পথে দাঁড়িয়ে থাকা দলের নেতাকমর্ীসহ সর্বসত্মরের জনগণ প্রধানমন্ত্রীকে এক অন্যরকম গণসংবর্ধনা দেয়। অভূতপূর্ব সংবর্ধনা এবং মানুষের আবেগ, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী আলস্নাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বাংলাদেশের মাটিতে নেমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভারত সফরকে শতভাগ সফল উলেস্নখ করে বলেছেন, ভারত সফর দুই দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন দিগনত্ম উন্মোচিত হয়েছে। তাঁর এ সফর শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, নেপাল-ভুটানসহ দণি এশিয়ার সব দেশ উপকৃত হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।
দু'দেশের মধ্যে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্বাৰরের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, যে কোন সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে দু'দেশই ঐকমত্য হয়েছি। গণতান্ত্রিক সরকার ৰমতায় রয়েছে বলেই দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। তাঁর পাওয়া ভারতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইন্দিরা গান্ধী শানত্মি পুরস্কারটি দেশবাসীর উদ্দেশে উৎসর্গ করেন এবং পুরস্কারের অর্থ গরিব-মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে প্রদানের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, দু'এক দিনের মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সফরের বিসত্মারিত জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে।
ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরে পেঁৗছে সাংবাদিকদের কাছে এসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁর সফরকে অত্যনত্ম সফল দাবি করে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ে সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতে তাঁর চারদিন ব্যসত্মতার মধ্য দিয়ে কেটেছে। এ সফর দণি এশিয়ার জন্য অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ। দুই দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগনত্ম উন্মোচিত হলো।
ভারত সফরে ৩টি চুক্তি ও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাৰরিত হয়েছে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন সহজ হয়, এ সফর তা প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, সফরে অনেক সমঝোতা হয়েছে, যা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অবদান রাখবে। আমরা সন্ত্রাসের বিরম্নদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করেছি। এ অঞ্চলের ড্রাগ, নারী ও শিশু পাচার, অস্ত্র ও চোরাচালান বন্ধ হওয়া দরকার। এসব নিয়ন্ত্রণে দু'দেশের মধ্যে আরও সহযোগিতা দরকার। এসব নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দৰিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে শানত্মিময় দেশ হিসেবে গড়তে চাই। তিনি জানান, কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী ভারত ও বাংলাদেশ এক সঙ্গে উদ্যাপন করবে বলে এ সফরে সিদ্ধানত্ম হয়েছে।
ইন্দিরা গান্ধী শানত্মি পুরস্কারের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেছি। এ সময় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের জনগণকে এ সম্মানজনক পুরস্কারটি উৎসর্গ করে তিনি বলেন, এ পুরস্কার আমার নয়, এটা বাংলাদেশের জনগণের। সফর সফল হলে ফুলের শুভেচ্ছা, ব্যর্থ হলে পথে কাঁটা বিছানোর বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোন উত্তর দেননি।
প্রাণঢালা সংবর্ধনা
বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন যমুনা, সর্বত্রই নেমেছিল মানুষের ঢল। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়া ঠেকাতে পারেনি মানুষের এ ঢল। এ দীর্ঘপথের প্রতিটি মোড় ছিল রীতিমতো লোকে লোকারণ্য। তীব্র জনতার ঢলে প্রায় দু'ঘণ্টা থমকে গিয়েছিল যানবাহনের চাকা। দুপুর সাড়ে তিনটার পর থেকেই বাদ্যবাজনা, শত শত পস্নাকার্ড, রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা, ব্যানার-ফেস্টুন, ট্রাকের অজস্র মিছিল নিয়ে বিশাল বিশাল শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটপের মধ্যেও দীর্ঘপথে জনস্রোত থেকে অবিরাম পুষ্পবৃষ্টি, গগণবিদারী সেস্নাগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে সফল ভারত সফরের জন্য শেখ হাসিনাকে হাজার হাজার মানুষ তাদের অবিচল শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও সমর্থনের বহিপর্্রকাশ ঘটান। তবে মানুষের তীব্র এ জনস্রোতের কারণে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক হতে প্রায় দু'আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।
নির্ধারিত ৫টা ৪৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যদের বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ভিভিআইপি টার্মিনালে নামলে সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী ও দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সরকারের মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য, উপদেষ্টাগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিকবৃন্দ, পুলিশের আইজিসহ সামরিক-বেসামরিক উর্ধতন কর্মকর্তারা তাঁকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিভিআইপি টার্মিনালের অভ্যর্থনাক েমন্ত্রিসভার সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। এ সময় নেতাকমর্ীরা শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়।
শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশে আসেননি। তিনি ভারতের রাজধানী দিলস্নী থেকে তাঁর কর্মস্থল লন্ডনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে একই বিমানে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাগ্নে রেদোয়ান সিদ্দিক ববি, ভাগি্ন আজমিনা সিদ্দিক রম্নপনত্মী, ভাগ্নে বধূ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি, পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ড. মসিউর রহমান, অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম আবদুল করিম, প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাসসের প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম হেলাল, এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি অসিত বরণ বিশ্বাস। পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সফর সম্পর্কে সংৰিপ্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সাড়ে ৬টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ির বহর বিমানবন্দর টার্মিনাল ত্যাগ করে মূল সড়কে আসলে সেখানে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। চারদিক গগনবিদারী সেস্নস্নাগান আর পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণ করা হয় বুলেটপ্রম্নফ কাঁচে ঘেরা প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে। কিন্তু সন্ধ্যা নেমে আসায় নিরাপত্তার কারণে গাড়ি থেকে বেরিয়ে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে কোন বক্তব্য রাখতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে যমুনা পর্যনত্ম প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে হাজার হাজার মানুষ মানবঢাল রচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা জানান। পুরো পথেই প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে মানুষের ভালবাসার জবাব দেন।
মানুষের এ ঢলের কারণে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির বহর স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। মিছিলের স্রোত ঠেলে গাড়ির বহরকে ধীরে ধীরেই চলতে হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তারৰীদের গলদঘর্ম অবস্থার সৃষ্টি হয়। এভাবে মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় সিক্ত হয়েই প্রায় সোয়া সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে করে নিজ সরকারী বাসভবন যমুনাতে প্রবেশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিল, বেগম মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবুল মাল আবদুল মুহিত, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সতীশচন্দ্র রায়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবদুল মান্নান, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, উপাধ্যৰ আবদুস শহীদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) ফারম্নক খান, ডা. মোসত্মফা জালাল মহিউদ্দিনসহ উলেস্নখযোগ্য সকল কেন্দ্রীয় নেতাই উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে। ঢাকা মহানগরী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পথের বিভিন্নস্থানে বিশাল বিশাল শোডাউন করে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.