সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা শেখ হাসিনা- দিলস্নীতে সংবাদ সম্মেলন

নয়াদিলী, ১৩ জানুয়ারি, বাসস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ুধা, দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে দণি এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরম্নত্বারোপ করেছেন।
ভারতে চারদিনের সফর শেষে বুধবার জয়পুরের উদ্দেশে নয়াদিলী ত্যাগের আগে হোটেল মৌর্য শেরাটনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ছোট-বড় নির্বিশেষে ুধা, দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে এ অঞ্চলের সকল দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। জয়পুর থেকে শেখ হাসিনা মহান সুফি সাধক হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী (রহ)'র মাজার জেয়ারতের জন্য আজমীর শরীফ যান।
ভারত সফরকে খুবই সফল বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমঝোতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঢাকা ফিরে যাচ্ছেন। তাঁর এ সফরের মধ্য দিয়ে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের েেত্র এক নতুন দিগনত্ম উন্মোচিত হওয়ার কথা উলেখ করে তিনি বলেন, 'এ সফর সম্পর্কে অন্যরা (বিরোধী) কী বলবে আমি জানি না। কিন্তু আমি মনে করি সফর পুরোপুরি সফল।'
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত ও তাঁর জনগণের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তাঁরা আমাদের জনগণকে আশ্রয় ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিৰণ দিয়েছে। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। 'বাংলাদেশের ভূমি কখনই সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না'_এ কথা পুনর্ব্যক্ত করে ভারতীয় এক সাংবাদিককে তিনি বলেন, 'সন্ত্রাসীদের দমনে পূর্বের সরকার কি করেছিলেন আমি তার জবাব দিতে পারব না। এ ব্যাপারে তারাই ভাল বলতে পারবেন।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি নিজেই সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। এক জনসমাবেশে আমাকে ল্য করে ১২টি গ্রেনেড নিৰেপ করা হয়। এ হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানসহ দলের ১২ নেতাকর্মী নিহত হন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সকল দেশে নির্বাচিত সরকার রয়েছে এবং আমরা এ অঞ্চলের কোথাও সন্ত্রাসীদের সমর্থন করি না।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই, দেশ নেই এবং সীমানত্মও নেই। তারা শুধুই সন্ত্রাসী এবং তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। তিসত্মা নদীর পানি বন্টন নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে টেকনিক্যাল কমিটি বৈঠক করেছে এবং সচিব পর্যায়েও আলোচনা হয়েছে। 'যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে' উলেখ করে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে।
টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘি্নত হতে পারে এমন কোন কিছুই করা হবে না বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বসত্ম করেছেন। এ ধরনের একজন নেতার অঙ্গীকার সাদরে গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া টিপাইমুখ এলাকায় কোন স্থাপনা না থাকায় এ নিয়ে আলোচনারও কিছু নেই। 'বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল যা আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর প্রশমিত হয়েছে'_ এ সংক্রানত্ম এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, এই মনোভাব অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, 'তারা যা করতে চায় তাদের তা করতে দিন। কিন্তু আমাদের সময়ে এই মনোভাব কাজ করবে না। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সব সময়ই বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতাকেই প্রাধান্য দেব।' তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী ও রেলওয়েমন্ত্রী মমতা ব্যানাজর্ীর সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
পশ্চিম বাংলা সফর বাতিল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ব্যসত্মতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, 'কিন্তু জ্যোতি বসুর স্বাস্থ্য নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। তিনি এ উপমহাদেশের সবচেয়ে বর্ষীয়ান নেতা। আমি তাকে সবসময়ই শ্রদ্ধা করি।' খাদ্য নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিশ্বখাদ্য পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। 'বর্তমানে আমাদের ১১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলেই আমরা খাদ্য কিনতে পারি। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের উদ্ধৃত্ত থাকায় বাংলাদেশ সেসব দেশ থেকে চাল আমদানি করতে পারে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'সবার জন্য খাদ্য' তাঁর দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার। গত এক বছরে দেশে কোন খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়নি। এমনকি পঞ্চগড়ে ১৫ শতাংশ খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। তিনি বলেন, সমপ্রতি ভারতের কৃষিমন্ত্রী ঢাকা সফর করেছেন এবং খাদ্য বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী নয়াদিলী সফর করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারম্নল কায়েস, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও বাংলাদেশ মিশনের প্রেস মিনিস্টার এনামুল হক চৌধুরী এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে জয়পুরের উদ্দেশে নয়াদিলস্নী ত্যাগ কনে। কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রণীত কাউর ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিরম্নপমা রাও পালাম এয়ার ফোর্স বেজ বিমানবন্দরে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
জয়পুর থেকে প্রধানমন্ত্রী আজমীর যান এবং সেখানে মহান সুফী সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ)'র মাজারে ফাতেহা পাঠ করেন। প্রধানমন্ত্রী জয়পুর থেকে হেলিকপ্টারযোগে আজমীর পেঁৗছলে বিভাগীয় কমিশনার ও রাজস্থান সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। দরবার শরীফে যাওয়ার পথে সর্বসত্মরের মানুষ রাসত্মার দু'পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের নেতাকে শুভেচ্ছা জানান। শেখ হাসিনা হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেনে।
দরবার শরীফের প্রধান খাদেম দরবার চত্বরে শেখ হাসিনা, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও সফরসঙ্গী দলের সদস্যদের অভ্যর্থনা জানান। শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা মাজারে ফাতেহা পাঠ করেন।
শেখ হাসিনা এই মহান সুফী সাধকের মাজারে একটি গিলাফ বিছিয়ে দেন। মাজারের প্রধান খাদেম তাঁকে একটি গিলাফ দেন। প্রধানমন্ত্রী ওই গিলাফটিও মাজারে বিছিয়ে দেন।
ধমর্ীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে শেখ হাসিনা জয়পুরে ফিরলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক ঘাটল তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

No comments

Powered by Blogger.