সবজির দাম-জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির খেসারত

বাজারে শাকসবজির দাম বরাবরই চড়া। অর্থাৎ উৎপাদন ও বাজার চাহিদা অনুসারে যে মূল্য থাকা উচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে, অন্যায্য মূল্যে ক্রেতাসাধারণকে বাজার থেকে সবজি কিনতে হয়। সবজির এই বর্ধিত মূল্য ক্রেতাসাধারণকে আবার উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
সর্বশেষ বাজারে আরো একবার সবজির দাম বেড়েছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর চরম আঘাত হেনেছে। ফড়িয়াদের বেপরোয়া মুনাফা, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির মতো বিষয় তো আছেই, অধিকন্তু সরকারের কিছু নীতি ও সিদ্ধান্তের কারণেও সবজির মূল্য চড়ে গেছে। যেমন- অতি সম্প্রতি সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে সব ধরনের পণ্যের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা থেকে সবজিবাজারেরও নিস্তার নেই। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কিংবা এই অজুহাতে সব স্তরের বিক্রেতাই সবজির বর্ধিত দাম হাঁকছে। অথচ কারো দেখার ফুরসত নেই যে আদৌ কতটা দাম বাড়লে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর কোনো কোনো সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে বা ক্রেতারা দ্বিগুণ দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। সবজির মূল্য নিয়ে যে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে থাকে তার প্রমাণ হলো, যেসব সবজি ঋতুর সময় অপেক্ষাকৃত কম দাম থাকার কথা, তারও দাম কমছে না। অথচ উৎপাদনকারী কৃষক সবজির সঠিক মূল্য পায় না। এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই।
উপায় যে নেই, তা কিন্তু নয়। নানা অব্যবস্থাপনার কারণেই বাজারে যথাযথ মূল্যে সবজি পাওয়া থেকে ক্রেতারা বঞ্চিত হচ্ছে। যেমন- সরকারের একটি বাজার মনিটরিং সেল রয়েছে। কিন্তু সে মনিটরিংয়ের কাজ কখনোই হতে দেখা যায় না। অবস্থার উন্নতি করতে হলে কিংবা জনগণকে সঠিক মূল্যে সবজিপ্রাপ্তিতে সহায়তা করতে হলে সরকারকে শক্ত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে তা বাজারে এসে ব্যবসায়ীর ন্যায্য লাভ ধরে কত দামে বিক্রি করা উচিত তা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বেঁধে দিতে হবে। এ ছাড়া বাজার আপনিতেই নিয়ন্ত্রণ হওয়া সম্ভব নয়। সরকারের মনে রাখা খুবই প্রয়োজন, সাধারণ মানুষের আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ দ্রব্যমূল্য একটি দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। এই সংগতি সৃষ্টি না করলে সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা খুবই দুষ্কর হয়ে উঠবে।

No comments

Powered by Blogger.