রহস্যময় হত্যাকাণ্ড-রোধ করতে হবে এ প্রবণতা

আবারও একটি রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। এমন রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এসব ঘটনার সঙ্গে আগের প্রায় সব ঘটনারই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেন একই চিত্রনাট্যে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ঘটছে ঘটনাগুলো।
হত্যাকাণ্ডের শিকার কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী। তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম করে। এরপর কোথাও না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে মৃতদেহ। তাও যাঁদের মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের স্বজনদের জোর বরাতই বলতে হবে। অনেকের তো কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরের দৃশ্যগুলোতেও সেই আগের পুনরাবৃত্তি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে যথারীতি এ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করা হয়। কেবল একটি প্রশ্নের উত্তর মেলে না- তাহলে কে বা কারা এই কাজটি করেছে? আর কতকাল এই নিরাপত্তাহীন জীবন? অদৃশ্য আততায়ী আর কত দিন এই দেশের মানুষকে ছায়ার মতো অনুসরণ করবে?
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার। সেখান থেকেই সন্ধ্যার পর তাঁকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আর রফিকুলকে জীবিত ফিরে পাওয়া যায়নি। কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার একটি গ্রামে মাঠের পাশে হাতকড়া পরা অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওই হাতকড়ায় 'পুলিশ' লেখা ছিল। হাতকড়ায় পুলিশ লেখা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অমন হাতকড়া বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সেই সুযোগটিই নাকি নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব জিনিস কেন এত সস্তা কিংবা সহজপ্রাপ্য হয়ে গেল? পুলিশ কর্মকর্তা যখন বলেছেন ওই সব হাতকড়া বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, তখন বুঝতে হবে কোথায় কী কিনতে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ওয়াকিবহাল। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকা কী? পুলিশ কি এখানেও নীরব দর্শক হিসেবে আগের মতোই কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে?
বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা নতুন কোনো বিষয় নয়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুদূর অতীত থেকেই গুপ্তহত্যার ঘটনা দেশে ঘটে আসছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা সাম্প্রতিক। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কোনোটিরই রহস্য ভেদ করা সম্ভব হয়নি। অথচ এটা করা জরুরি ছিল।
রফিকুল ইসলাম রাজনীতি করতেন। তাঁর রাজনৈতিক শত্রু থাকা অসম্ভব নয়। ধরা যেতে পারে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই র‌্যাব সেজে তাঁকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। তার পরও তো সে রহস্য ভেদ করতে হবে। প্রতিকারহীনভাবে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চলতে থাকলে এবং এ ধরনের গুপ্তহত্যা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মানুষের উদ্বেগ বাড়তেই থাকবে। সন্ত্রাসীরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে।
আমরা মনে করি, এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ হওয়া উচিত। জনসাধারণের মনে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে আস্থা ফেরাতে এটা অত্যন্ত জরুরি। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের। নিরাপত্তাহীনতার দায়ও তাই রাষ্ট্রকেই বহন করতে হয়।

No comments

Powered by Blogger.