মিডিয়া ট্রায়াল by একরামুল হক শামীম

মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে সম্প্রতি দেশের বিচারাঙ্গনে আলোচনা উঠেছে। একজন সিনিয়র সহকারী জজকে গ্রেফতার করে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে স্বীকারোক্তি নেওয়া থেকে ঘটনার শুরু। ঢাকা মহানগর হাকিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর ইডেন কলেজের সামনে থেকে ভোলার সিনিয়র সহকারী জজ জাবেদ ইমামকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পুলিশ তার মাইক্রোবাস থেকে ৩৪২ বোতল ফেনসিডিল ও একটি রিভলবার উদ্ধার করে। নিউমার্কেট থানার পুলিশ জাবেদ ইমামের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে আটককৃত সিনিয়র সহকারী জজকে মিডিয়ার সামনে স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য হাজির করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা হাজির হলেও আদালত তাদের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বিচার বা তদন্ত শুরুর আগে গণমাধ্যমকে ডেকে সাংবাদিকদের সামনে স্বীকারোক্তি নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন আদালত। আদালতের লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, 'যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে বিচারক জাবেদ ইমামকে হাজির করা হয়েছে, তা ফৌজদারি কার্যবিধির পরিপন্থী। পুলিশ বিচার বিভাগকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিডিয়া ট্রায়াল করেছে, যা পুলিশ কর্মকর্তারা করতে পারেন না। এ ছাড়া একজন আসামিকে গ্রেফতার করে তার গলায় নামফলক ঝুলিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন আদালত।' আদালত ক্ষমতার অপব্যবহার ও জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তাদের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে অন্য কোনো বিভাগে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আসামিকে গ্রেফতার করে এভাবে মিডিয়ার সামনে হাজির করার বিষয়টি নতুন নয়। এর আগেও বহুবার গ্রেফতারের পর গলায় নামফলক ঝুলিয়ে তাদের হাজির করা হয়েছে সাংবাদিকদের সামনে। স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে। এর ফলে মিডিয়ার সামনেই তারা দোষী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছেন। এ রকম মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে এর আগে কখনোই অভিযোগ ওঠেনি। এর আগে কোনো আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ধরনের মিডিয়া ট্রায়ালের বিরুদ্ধে রুল জারি করেননি। প্রথমবারের মতো এমন ঘটনায় জড়িত পুলিশদের আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে দেশের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদপত্রগুলোরে অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত খবরের নিচে পাঠকদের মন্তব্য এবং সামাজিক মিডিয়াগুলোকে নাগরিকদের লেখার মাধ্যমেই এটি স্পষ্ট হয়েছে। এমন অনুযোগ কেউ কেউ করেছেন যে, এমন ঘটনা এর আগে বহুবার ঘটার পরও আদালত এতদিন কেন ব্যবস্থা নেননি।
আদালত অবশ্য নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা এর আগে অনেক ঘটেছে। কিন্তু আদালতের নজরে আনা হয়নি। জানি না এ বিষয়টি দেশের জনগণ কীভাবে গ্রহণ করবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে গলায় নামফলক ঝুলিয়ে হাজির করা হয়েছে সাংবাদিকদের সামনে এবং তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তা ছবিসহ ছাপা হয়েছে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে কিংবা দেখা গেছে টেলিভিশনের পর্দায়। জানি না আমাদের দেশের কোনো আদালতের বিচারক এমন নিউজ কভারেজ কখনও দেখতে পেয়েছেন কি-না। সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বিলম্বে হলেও যদি গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ হয়, তবে ক্ষতি কী।

No comments

Powered by Blogger.