দুর্নীতির সূচকে পিছিয়েছে দেশ-আইনের শাসন না থাকার ফল

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ২০১২ সালের ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে। জার্মানির রাজধানী বার্লিন ভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের ধারণা সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নক্রম অনুসারে ১৩তম। এই ১৩তম অবস্থান গত বছরও ছিল।
কিন্তু এবার ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে অর্থাৎ ভালো থেকে খারাপের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৪ ধাপ পিছিয়েছে। যেমন গত বছর ১৮৩টি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যে সূচক করা হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম। এবার ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৪৪তম। বুধবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলন করে টিআইয়ের দুর্নীতিবিষয়ক বৈশ্বিক জরিপের এ ফল প্রকাশ করে। টিআইবি একে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে। উল্লেখ্য, এ সূচকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিপ্রবণ দেশ হিসেবে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের নাম ১ নম্বরে উঠে এসেছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি সম্পর্কে পর্যবেক্ষণে টিআইবি বেশ কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে এবং কী কী করলে দুর্নীতি কমবে, তার কিছু ধারণা দিয়েছে।
নিশ্চয়ই এ জরিপের ফল দেশবাসীর জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ে তোলার। কিন্তু দুর্নীতি না কমে যদি আরো পেছনের দিকে হাঁটতে থাকে, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কী, সে কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হতে হয়। এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ পেলে তা শাসকগোষ্ঠীর ওপর জনগণের আস্থা হারাতে বাধ্য করে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কুখ্যাতি নতুন নয়।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ তিনবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতি এ দেশে প্রকাশ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ তা পালন করেনি। আরো দুঃখের বিষয় হলো, কোন কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে, সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল পর্যবেক্ষক মহল আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েও কোনো সরকারের ঘুম ভাঙাতে পারছে না। আমরা মনে করি, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে বাংলাদেশের নাম আর দুর্নীতির সূচকে লজ্জাজনক অবস্থানে থাকবে না। এর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি দুর্নীতিপরায়ণ দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারে না। দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত করে। অন্তত এই স্বার্থের দিকে তাকিয়ে দেশ যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটা ভুলে গেলে চলবে না, দুর্নীতি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকাই প্রধান। একটি সরকার চাইলে দ্রুত ও কার্যকরভাবে বহুলাংশে দুর্নীতি লাঘব করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.