রাজধানীতে ‘গাজা রেলপথ’, এক মাসে আটক ৩০

কারওয়ান বাজার সংলগ্ন রেলপথকে রাজধানীতে গাজা বিক্রির অন্যতম প্রধান স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ রেলপথ ও দুপাশের ঝুপড়ি ঘরগুলোতে অভিযান চালিয়ে গত একমাসে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ প্রায় ৩০ জন মাদক বিক্রেতাকে আটক করে, ২৭টি মাদকের মামলা করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদফতর করেছে ৩টি মামলা।

তবে অভিযোগ রয়েছে, থানায় আটকের পরও এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা জামিনে বের হয়ে এসে আবারও  পুরোনো পেশায় ফিরে যাচ্ছেন। ফলে পুলিশি গ্রেফতার কোনো কাজে আসছে না।
কারওয়ান বাজার মাছের আড়তের কাছ থেকে তেজগাঁও ট্রাকস্টান্ড হয়ে তেজগাঁও রেলস্টেশন পর্যন্ত রেলপথে ও দুপাশের ঝুপড়ি ঘরগুলো থেকে এ মাদক ব্যবসার আস্তানা উচ্ছেদের দাবি করে আসছেন এলাকাবাসীরা। তবে এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে,  এ এলাকাটি মূলত রেলপথ কর্তৃপক্ষের রেলপথ থানার অধীনে। তারা চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারেন। পুলিশ শুধু আইন শৃঙ্খলা দেখবে। নিজ থানা সীমানার বাইরের কাউকে উচ্ছেদের এখতিয়ার পুলিশের নেই।

অন্যদিকে নিজেদের জায়গা হলেও রেল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কখনো কোনো থানায় অভিযোগ করেননি। সরেজমিন দেখা গেছে, রেলওয়ে ১ নং কমিউনিটি পুলিশের কমান্ডার সিরাজ এর জন্য তৈরি হওয়া কার্যালয়ের সিড়িতেই গাজা বিক্রি করছেন এক নারী। তাকে সবাই ‘খালা’ নামে ডাকছে। এলাকায় কেউ এলে প্রথমে চোখের ইশারায় কাছে ডাকেন এ নারী। তারপর করেন গাজার দরদাম। কমিউনিটি পুলিশ কার্যালয়ের পাশে মেয়ে শিশুরা তাদের প্যান্টের পকেট থেকে পুরিয়া বের করে ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন। তারপর ক্রেতাকে সব সাবধানে চলে যেতে হুশিয়ার করে দেন বিক্রেতা।

গাজা কিনতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিবর জানান,  এখানে এলাকার স্থানীয় দালালরা মাঝে মাঝে ‘ফাপর’ (ধমক) দিয়ে চাঁদা দাবি করে। তবে তাদের পাল্টা ফাপর দিলে কিছু বলে না। রেলওয়ে কমিউনিটি পুলিশও কিছু বলে না।

কারওয়ান বাজার এলাকার শ্রমিক ও গাজা ক্রেতা ফরিদ বলেন, ‘‘আমি মাজারের মুরিদ। বিভিন্ন মাজারে ঘুরে বেড়াই। গাজা খাই সত্য,তবে নেশা করি না। গাজা হইল গাছের ফুল। নিয়মিত খাইলে বউয়ের সাথে ঝগড়া লাগে না, মাথা ঠান্ডা থাকে। গাজা খাইয়া ঝিম মাইরা পইরা থাকি। তারপর দুধ খাই। শরীর শক্তি পায়। কারওয়ান বাজার রেল লাইনের গাজা ঢাকা শহরের সব জায়গায় চইলা যায়। অনেক বড় বড় মানুষ নেয়।’’

একদিকে রেল পুলিশের উদাসীনতা, অন্যদিকে থানা পুলিশ এই মাদক ব্যবসায় জড়িত কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘কারওয়ান বাজারের রেলপথের জায়গাটা রেল কর্তপক্ষের হলেও আমরা সেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করি। গত এক মাসে প্রায় ৩০ জন ভ্রাম্যমান গাজা বিক্রেতাকে আটক করে ২৭ টি মাদকের মামলা দিয়েছি। অথচ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদফতর করেছে মাত্র ৩টি মামলা। পুলিশ যদি ঘটনার সাথে জড়িত থাকতো তাহলে এত মামলা হোত না।’’

No comments

Powered by Blogger.