শেয়ারবাজার-ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ান

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা চলছেই। টাইম সাময়িকীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকার বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজার বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট বাজার হিসেবে নিন্দিত হয়েছে। কিন্তু তাতেও তো সংশ্লিষ্টদের সম্বিত ফিরছে না।


ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষাতে গঠিত বিশেষ স্কিম প্রণয়ন কমিটি সরকারের কাছে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়_ 'পুঁজিবাজার ধসের কারণে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার বিনিয়োগকারীর ক্ষতি হয়েছে ২২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ১৫ লাখ ২৬ হাজার।' এ ধরনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরার পরও কি সম্বিত ফিরবে? এক বছর আগে অস্বাভাবিক উত্থান কেন ঘটল এবং আকস্মিক পতনের কারণগুলো কী, সেটা ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটি সরকারকে জানিয়েছে। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের করণীয় সম্পর্কেও এতে ধারণা দেওয়া হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময়ে তার ঘোষণা :'ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যা যা করা দরকার সবকিছু করা হবে'_ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মিছিল-সমাবেশ করছেন। মাঝে মধ্যে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটা খান। কেন তারা ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে এসেছিলেন_ সে প্রশ্ন তুলে তাদের দোষারোপ করাই যায়। কিন্তু এটাও অস্বীকার যাবে না যে, তাদের এ পথে টেনে আনার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল নানাভাবে সক্রিয় ছিল। স্বল্প পুঁজির মালিক বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বহারা করার পেছনে পরিকল্পিতভাবে কারসাজি করা হয়। ক্ষতি পোষানোর জন্য বিশেষ স্কিম প্রণয়ন কমিটির ভাষ্যেও সেটা প্রকাশ পেয়েছে। কমিটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের সুদদাতা-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মওকুফ এবং আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসহ আরও কিছু সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেছে। এসবের বাস্তবায়ন সহজ হবে না। আইন-কানুনের জটিলতা ছাড়াও ক্ষতির পরিমাপ করাও জটিল প্রক্রিয়া। কিন্তু সরকারকে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ভুললেও চলবে না। ক্ষতির্ পুিষয়ে নিতে পারে_ এমন কিছু অবশ্যই করতে হবে। অর্থমন্ত্রী এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিবেচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মতো এটা যেন হিমাগারে চলে না যায়, সেটা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা থাকবে। যে কোনো দেশেই বিপর্যয়ের পর বাজার স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। বাংলাদেশেও ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু এটা যে সুস্থ ধারায় চলবে, তার লক্ষণ থাকতে হবে। লাখ লাখ পরিবারের কান্না উপেক্ষা করবেন না। তাদের যন্ত্রণা-ক্ষোভকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় বাজারে সুস্থিতি ফিরে আসতে বিলম্ব হবে এবং একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের জন্য সৃষ্টি হবে রাজনৈতিক ঝুঁকি। কিছু লোক বাজারের ফাটকা খেলায় বিপুল ফায়দা তুলে নিয়েছে। তারা সরকারের কাছের লোক_ এমনই অভিযোগ। এ কারণেই কি কেউ তাদের গায়ে টোকা পর্যন্ত দিতে পারছে না? কিন্তু তাদের ভরসা রেখে কি নিজের বিপদ এড়ানো যাবে না! জাতীয় সংসদে শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনার সময় সরকারদলীয় একাধিক সদস্য কিন্তু দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলেছেন, পাঁচ বছর পর জনগণের একটি দিন থাকে এবং তারা বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে এর প্রয়োগ করলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.