রাজধানীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কাল, অঘটন ঠেকাতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ-রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতা

কাল রোববার ঢাকায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, তাঁদের কর্মসূচিতে বাধা দিতেই সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। কেননা, বিএনপি ২০ দিন আগে গণমিছিলের ঘোষণা দিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ জনসভার পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গত বৃহস্পতিবার।


তবে আওয়ামী লীগ বলছে, ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র’ মোকাবিলা করতে দেড় মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল ঢাকায় জনসভার কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের মহানগর শাখার বর্ধিত সভায় এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বহু সহ্য করেছি, আর ছাড় দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না।’
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মহানগর পুলিশ।
জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই দিনে বড় দুটি দলের কর্মসূচি আছে। বাড়তি নিরাপত্তা তো নিতেই হবে।’ তিনি বলেন, কর্মসূচি ঘিরে কেউ কোনো ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতা চালায় কি না, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আজ শনিবার এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হবে।
বিএনপি জানিয়েছে, সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল বিকেলে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গণমিছিল শুরু হবে।
চট্টগ্রাম অভিমুখে চারদলীয় জোটের রোডমার্চ শেষে ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জনসভায় খালেদা জিয়া ২৯ জানুয়ারি ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কাল প্রায় একই সময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। দলটির ঢাকা মহানগর শাখা এ জনসভার আয়োজন করলেও কেন্দ্রীয় নেতারাও এতে বক্তব্য দেবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ প্রথম আলোকে বলেন, এটা শাসক দলের অসহিষ্ণু আচরণ, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা। তিনি বলেন, বিএনপি ২৯ জানুয়ারি ধরে দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপির এ কর্মসূটি দেশব্যাপী পালিত হবে। এর এক দিন আগে বা পরে আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচি পালন করলে তো কোনো ক্ষতি ছিল না।
বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি, বরং সহায়তা করেছে। আওয়ামী লীগ তার কর্মসূচি পালন করবে, বিএনপি তারটা। এখানে কোনো সমস্যা তো থাকতে পারে না।
আওয়ামী লীগের আরও কর্মসূচি: বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কালকের জনসভা ছাড়াও ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও ১৬টি নির্বাচনী এলাকায় জনসভা, কর্মিসভা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
গণমিছিল সফল করার আহ্বান: রোববারের গণমিছিল সফল করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রচারও চালিয়েছে দলটি।
ইসলামি ও সমমনা ১২ দলের সম্মেলন: সংবিধানে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করাসহ আরও কিছু দাবিতে আজ শনিবার জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেছে ইসলামি ও সমমনা ১২ দল। সকাল নয়টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সম্মেলন হবে।
ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মোর্চা ইসলামি ও সমমনা ১২ দলের অন্যতম সমন্বয়ক খলিলুর রহমান মাদানি জানান, সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট আলেমদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.