জীবনের প্রয়োজনেই বিজ্ঞান

ম্প্রতি বাংলাদেশে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ উদযাপিত হলো। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর কার্যক্রমের উৎসাহ জোগাতে জাতিসংঘের খ্যাতনামা দুই মহাকাশ বিজ্ঞানী বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারা হলেন যুক্তরাজ্যের নর্থ আয়ারল্যান্ড স্পেস অফিসের পরিচালক ড. রবার্ট হিল এবং ফক্স টেলিস্কোপ প্রজেক্টের শিক্ষাবিষয়ক পরিচালক ড. সারাহ রবার্ট। ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞানকর্মী শামসুদ্দিন আহমেদ, আজাদ, টাঙ্গাইলের কালিহাতীর কলেজ শিক্ষক


মোঃ আলী হাসান, বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহম্মদী, বিজ্ঞান বক্তা আসিফের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ আলাপে ড. সারাহ রবার্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে অনেক কথা বলেছেন। কালস্রোতের পক্ষ থেকে তারই সারাংশ তুলে ধরেছেন মোঃ আলী হাসান ও শামসুদ্দিন আহমেদ
কালস্রোত: ড. সারাহ রবার্টর্ আপনাকে স্বাগতম। কেমন বোধ করছেন।
সারাহ রবার্ট : প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে আমি খুবই উপভোগ করছি। ২৪ ঘণ্টার লম্বা ভ্রমণ ছিল। আমার মনে হয় বাংলাদেশে আমার হয়তো এটাই শেষ আসা।

কিালস্রোত:তন দিনের এই কর্মশালার সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে কিছু বলবেন?
সারাহ : খুবই ভালো, বিশেষত সব অংশগ্রহণকারীই ল্যাপটপ নিয়ে এসেছেন এবং তা ভালোভাবে ব্যবহার করেছেন দেখে আমি অভিভূত। তারা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সফটওয়্যার চর্চাও করেছেন। ফলে তারা যখন ক্লাসরুমে থাকেন বিশেষজ্ঞ না হয়েও কী করে এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয় তা ছাত্রদের শেখাতে পারবেন বেশ ভালোভাবেই।
এই কর্মশালায় ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলো কি ইউকেতেও ব্যবহৃত হয়?
অবিকল। ইউকেতে কিছু আগ্রহী শিক্ষক এসব সফটওয়্যার নিজেরা ভালোভাবে ব্যবহার করে ছাত্রদেরও শেখাচ্ছেন। আবার অন্যেরা হয়তো সময়াভাবে নিজেরাই দেখতে পারছেন না। ফলে ৬ মাসের মধ্যে তারা ভুলেই যান এর প্রয়োগ। ব্রিটেনেও অনেক শিক্ষক পাওয়া যাবে, যারা কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু শেকি বোধ করেন। সফটওয়্যার, গেম বা এ ধরনের অন্যান্য ক্ষেত্রে মনে করেন ছাত্ররাই তাদের চেয়ে ভালো জানে। আমার মনে হয় এই কর্মশালায় যদি আমরা কিছু ছাত্র পেতাম তারা হয়তো আরও দ্রুত শিখতে পারত।
আপনি কর্মশালায় যা দিতে চেয়েছেন তা কি পেরেছেন বলে মনে করেন?
আমাদের পরিকল্পনার ৯৫ শতাংশ দিতে পেরেছি। তবে পাওয়ার ফেইলিওর স্পষ্টতই কিছু সমস্যায় ফেলেছে যা কম্পিউটার ব্যবহারে অনভিপ্রেত।
ব্রিটেনের যেসব ছাত্রছাত্রী অ্যাস্ট্রোনমি পড়বে না তারাও এসব ভিজ্যুয়াল অবজেক্ট দেখে বিজ্ঞানে উৎসাহী হয়ে পড়ে। ফলে গণিত ও পদার্থবিদ্যার মতো বিষয়গুলোতে তারা ভালো রেজাল্ট করতে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

এখানে একটু ফিলোসফিক্যাল বিষয় জানতে চাচ্ছি। যেমন ধরুন আমাদের এই দিকটায় মানে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞানভিত্তিক আবার কোরিয়া, আমেরিকায় তা প্রায়োগিক। তাই যখন ক্লাস এইটের ছাত্র আপনাদের দেশে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়, তখন সে করে খাওয়ার মতো কিছু দক্ষতা নিয়েই তা করে। আমাদের প্রশ্ন হলো, উন্নয়নশীল বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত?
হুম্ম্ম্। আমার মতে, শিক্ষা শুধু জ্ঞানভিত্তিক হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ইউকেতেও সময়াভাবে শিক্ষকরা তথ্যভিত্তিক শিক্ষাই ছাত্রদের দিয়ে থাকেন এবং সংকীর্ণ, সীমিত সময়ে পাস করার লক্ষ্যে ছাত্ররাও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগের আনন্দময় দিকটি আবিষ্কার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত এবং মনে করে ভালো নম্বর পেয়ে পাস করাই বিবেচ্য। প্রশ্ন করার সুযোগ সেখানে সীমিত। অথচ প্রশ্ন করার সুযোগ পেলে সেই ছাত্র কী করে উত্তর খুঁজে পেতে হয় তা-ও শিখতে পারত।

আপনি কি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পদ্ধতি এবং আমাদের পার্থিব জীবন সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির মধ্যে কোনো সাযুজ্য দেখাবেন যাতে শিক্ষার্থীরা জ্যোতির্বিজ্ঞানে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে।
আবার আমি প্রায়োগিক দক্ষতার কথাই বলব। জ্যোতির্বিজ্ঞানী যেমন কেন ও কীভাবে প্রশ্ন দিয়ে পর্যবেক্ষণলব্ধ উপাত্তগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন তেমনি দৈনন্দিন জীবনেও আমরা সমস্যা সমাধানে কোনো না কোনো ধরনের সিসটেমেটিক এপ্রোচ করি।
বিজ্ঞানে উৎসাহী হলেন কেমন করে?
উৎসাহী শিক্ষকদের কারণেই আমি ছেলেবেলায় বিজ্ঞান-পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিতে উৎসাহী হই। তবে জীববিজ্ঞানেও তার আগ্রহে বিশেষ কমতি ছিল, তা নয়। কিন্তু তার পদার্থবিজ্ঞানের অত্যুৎসাহী শিক্ষকের উৎসাহ নিজের মধ্যে সঞ্চারিত হওয়ার ফলে জীববিদ্যার পরিবর্তে পদার্থবিদ্যায়ই নিজেকে খুঁজে পাই এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জ্যোতির্বিজ্ঞানেই নিজেকে সমর্পণ করি। কাজেই মহাকাশ বিজ্ঞানে পদার্পণ শুরুই পেশা নয়, নেশা এবং প্যাশনও।

No comments

Powered by Blogger.