পশ্চিমবঙ্গের বাগড়ায় আটকে গেল তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি- টিপাই বাঁধ প্রকল্প ৰতির কারণ হবে না ॥ জেআরসি বৈঠকে ফের ভারতের আশ্বাস by সোহেল রহমা
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বেড়াজালে শেষ মুহূর্তে আটকে গেছে তিস্তার
পানি বন্টনে অন্তবর্তীকালীন চুক্তি। কেন্দ্রীয় সরকারের সায় থাকলেও এখনই
চুক্তি স্বাক্ষর করার বিপক্ষে অবস্থান নেয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।
ফলে
অনেক আশা নিয়ে ভারত সফরে গেলেও কার্যত অনেকটা নিরাশ হয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে
পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে।
তবে দ্রুত তিস্তা চুক্তির আশা, গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির বাস্তবায়নসহ
শুষ্ক মৌসুমে চুক্তি অনুযায়ী পানি প্রাপ্তির আশ্বাস এবং টিপাইমুখ বাঁধ ও
আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না ভারতীয়
নীতিনির্ধারকদের এমন নিশ্চয়তা দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত জেআরসি
বৈঠক থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, নয়াদিলস্নীতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে উপনীত হতে উভয়পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বৈঠক শুরু করেছিল। সে অনুযায়ী প্রথম দিনেই বৈঠক শেষে দুই দেশের প্রতিনিধিরাই ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। চুক্তির ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবও ছিল অনেকটাই ইতিবাচক। তবে দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে চুক্তির বিপৰে অবস্থান নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা। তিস্তার চুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় পানির প্রবাহ কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় বিধানসভা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে চুক্তি স্বাৰর না করতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর অনেক চাপ প্রয়োগ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতের পৰ থেকে জানানো হয়, চুক্তির ব্যাপারে তাদের পৰ থেকে কোন আপত্তি নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গের অসুবিধা হবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চয়তা না পাওয়ার আগ পর্যন্ত চুক্তি করতে চায় না কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে বাংলাদেশের দাবি মেনে নিলেও চূড়ানত্ম চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ভারত। তিস্তার পানির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাংলাদেশকে দিলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা সমীৰা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সে অনুযায়ী আগামী অক্টোবরে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষার পর এবং গত ১০ বছরের পানি প্রবাহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের গোটা প্রক্রিয়াটি সচিব পর্যায়ের কমিটির ওপর হস্তান্তর করা হয়। বৈঠক শেষে একটি যৌথ কার্যবিবরণীতেও স্বাৰর করেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বানসাল জেআরসি বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পথে বড় পদৰেপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দু'দেশের পানি সম্পদ সচিবদের দায়িত্ব দিয়েছি। তারা বিষয়টি নিয়ে একত্রে কাজ করে একটি পয়েন্টে উপনীত হবে যেখানে আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারব। পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেনও বৈঠকে ইতিবাচক পদৰেপ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। বৈঠককে অগ্রগতি হিসাবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টনের মাধ্যমে উভয়দেশ কিভাবে সমানভাবে লাভবান হতে পারে সে ব্যাপারে এখানে আমরা আমাদের মনোভাব তুলে ধরেছি।
জেআরসি বৈঠক সম্পর্কে শনিবার নয়াদিলস্নীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুই দেশের পানি সম্পদমন্ত্রী পর্যায়ে এই বৈঠক খুবই আন্তরিকতার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ৫০ দফা যৌথ ঘোষণার আলোকে সকল মীমাংসিত সমস্যা সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, বৈঠকে উভয়পৰ তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টন, খাবার ও কৃষিৰেত্রে ব্যবহারের জন্য ফেনী নদীর পানি ব্যবস্থাপনা, ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির বাস্তাবায়ন, নদীর তীর সংরক্ষণ এবং সীমান্ত সংলগ্ন নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা, বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ, ইছামতি নদীর খনন কাজ এবং ভারতের প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ এবং আনত্মঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পৰ থেকে তিস্তার নদীর পানি বন্টনে অন্তার্বর্তীকালীন চুক্তির একটি খসড়া ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে চূক্তির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সচিবপর্যায়ের কমিটির কাছে খসড়া হস্তান্তর করা হয়। ভারতের পক্ষ থেকে কমপৰে ৫৭ ঘণ্টা আগে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত হস্তান্তরের কথা জানানো হয়। বৈঠকে, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে থেকে ২০১০ সালের ১০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ফারাক্কা পয়েন্টে অনেক কম পানি পেয়েছে। বৈঠকে ভবিষ্যতে অনুযায়ী ন্যায্য পানি প্রাপ্তি বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদৰেপ গ্রহণের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। গঙ্গা চুক্তির ৮ নম্বর ধারা তুলে ধরে বাংলাদেশের পৰ থেকে শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশের পৰ থেকে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালকে নিয়ে ত্রিদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা কাঠামো গঠনের প্রসত্মাব দেয়া হয়।
বৈঠকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সংক্রান্ত তথ্য বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকে টিপাইমুখ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য কোন ৰতির কারণ হবে না হলে ভারতের পক্ষ থেকে পুনরায় আশ্বস্ত করা হয়। এছাড়া ভারতের প্রস্তাবিত আনত্মঃনদী সংযোগ প্রকল্পও বাংলাদেশের ওপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না বলে বৈঠকে আশ্বস্ত করা হয়।
বৈঠকের পর পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণার সঙ্গে সাৰাত করেছেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ নানা ইস্যু স্থান পেলেও বাংলাদেশের পৰ থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিসত্মার পানি বণ্টন নিয়ে জেআরসি বৈঠকের ব্যাপারে একমত হয় দুদেশ। সে সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে স্বাৰরিত ৫০ দফা যৌথ ইশতেহারেও তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। এর আগে তিস্তা ইস্যুতে জানুয়ারির শুরুতে ঢাকায় দু'দেশের সচিবপর্যায়ের এবং ডিসেম্বরের শেষ দিকে জেআরসি কারিগরি কমিটির বৈঠক হয়েছিল। এই বৈঠকে বাংলাদেশের পৰ থেকে তিসত্মার পানি বণ্টন চুক্তির একটি খসড়া ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। খসড়ায় ২০ শতাংশ পানি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য রেখে অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ পানি দুই দেশের মধ্যে সমহারে ভাগ করার কথা বলা হয়। এৰেত্রে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নদীর পানিপ্রবাহে দু'দেশ পরস্পরের কাছে যে তথ্যউপাত্ত হস্তান্তর করেছে, তার ভিত্তিতেই আপতত চুক্তি হতে পারে। তিসত্মার উজানে গজলডোবা নামক স্থানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘি্নত হয়। এরপর নদীর পানি প্রবাহ নিয়ে আর কোন তথ্যআদান প্রদান হয়নি। তবে বাংলাদেশের খসড়ার সঙ্গে একমত না হয়ে ভারত চুড়ান্ত চুক্তির আগে নদীর হাইড্রোলিক সার্ভের দাবি জানায়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন ৫৪ নদী রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে শুধুমাত্র গঙ্গা নদীর পানি নিয়ে চুক্তি হয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা, গোমতী, মনু, মাতামহুরী, খোয়াই, দুধকুমার ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয়পৰই প্রথম তিসত্মার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী।
সূত্র জানায়, নয়াদিলস্নীতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে উপনীত হতে উভয়পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বৈঠক শুরু করেছিল। সে অনুযায়ী প্রথম দিনেই বৈঠক শেষে দুই দেশের প্রতিনিধিরাই ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। চুক্তির ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবও ছিল অনেকটাই ইতিবাচক। তবে দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে চুক্তির বিপৰে অবস্থান নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা। তিস্তার চুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় পানির প্রবাহ কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় বিধানসভা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে চুক্তি স্বাৰর না করতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর অনেক চাপ প্রয়োগ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতের পৰ থেকে জানানো হয়, চুক্তির ব্যাপারে তাদের পৰ থেকে কোন আপত্তি নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গের অসুবিধা হবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চয়তা না পাওয়ার আগ পর্যন্ত চুক্তি করতে চায় না কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে বাংলাদেশের দাবি মেনে নিলেও চূড়ানত্ম চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ভারত। তিস্তার পানির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাংলাদেশকে দিলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা সমীৰা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সে অনুযায়ী আগামী অক্টোবরে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষার পর এবং গত ১০ বছরের পানি প্রবাহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের গোটা প্রক্রিয়াটি সচিব পর্যায়ের কমিটির ওপর হস্তান্তর করা হয়। বৈঠক শেষে একটি যৌথ কার্যবিবরণীতেও স্বাৰর করেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বানসাল জেআরসি বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পথে বড় পদৰেপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দু'দেশের পানি সম্পদ সচিবদের দায়িত্ব দিয়েছি। তারা বিষয়টি নিয়ে একত্রে কাজ করে একটি পয়েন্টে উপনীত হবে যেখানে আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারব। পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেনও বৈঠকে ইতিবাচক পদৰেপ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। বৈঠককে অগ্রগতি হিসাবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টনের মাধ্যমে উভয়দেশ কিভাবে সমানভাবে লাভবান হতে পারে সে ব্যাপারে এখানে আমরা আমাদের মনোভাব তুলে ধরেছি।
জেআরসি বৈঠক সম্পর্কে শনিবার নয়াদিলস্নীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুই দেশের পানি সম্পদমন্ত্রী পর্যায়ে এই বৈঠক খুবই আন্তরিকতার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ৫০ দফা যৌথ ঘোষণার আলোকে সকল মীমাংসিত সমস্যা সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, বৈঠকে উভয়পৰ তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টন, খাবার ও কৃষিৰেত্রে ব্যবহারের জন্য ফেনী নদীর পানি ব্যবস্থাপনা, ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির বাস্তাবায়ন, নদীর তীর সংরক্ষণ এবং সীমান্ত সংলগ্ন নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা, বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ, ইছামতি নদীর খনন কাজ এবং ভারতের প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ এবং আনত্মঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পৰ থেকে তিস্তার নদীর পানি বন্টনে অন্তার্বর্তীকালীন চুক্তির একটি খসড়া ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে চূক্তির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সচিবপর্যায়ের কমিটির কাছে খসড়া হস্তান্তর করা হয়। ভারতের পক্ষ থেকে কমপৰে ৫৭ ঘণ্টা আগে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত হস্তান্তরের কথা জানানো হয়। বৈঠকে, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে থেকে ২০১০ সালের ১০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ফারাক্কা পয়েন্টে অনেক কম পানি পেয়েছে। বৈঠকে ভবিষ্যতে অনুযায়ী ন্যায্য পানি প্রাপ্তি বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদৰেপ গ্রহণের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। গঙ্গা চুক্তির ৮ নম্বর ধারা তুলে ধরে বাংলাদেশের পৰ থেকে শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশের পৰ থেকে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালকে নিয়ে ত্রিদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা কাঠামো গঠনের প্রসত্মাব দেয়া হয়।
বৈঠকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সংক্রান্ত তথ্য বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকে টিপাইমুখ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য কোন ৰতির কারণ হবে না হলে ভারতের পক্ষ থেকে পুনরায় আশ্বস্ত করা হয়। এছাড়া ভারতের প্রস্তাবিত আনত্মঃনদী সংযোগ প্রকল্পও বাংলাদেশের ওপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না বলে বৈঠকে আশ্বস্ত করা হয়।
বৈঠকের পর পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণার সঙ্গে সাৰাত করেছেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ নানা ইস্যু স্থান পেলেও বাংলাদেশের পৰ থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিসত্মার পানি বণ্টন নিয়ে জেআরসি বৈঠকের ব্যাপারে একমত হয় দুদেশ। সে সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে স্বাৰরিত ৫০ দফা যৌথ ইশতেহারেও তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। এর আগে তিস্তা ইস্যুতে জানুয়ারির শুরুতে ঢাকায় দু'দেশের সচিবপর্যায়ের এবং ডিসেম্বরের শেষ দিকে জেআরসি কারিগরি কমিটির বৈঠক হয়েছিল। এই বৈঠকে বাংলাদেশের পৰ থেকে তিসত্মার পানি বণ্টন চুক্তির একটি খসড়া ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। খসড়ায় ২০ শতাংশ পানি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য রেখে অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ পানি দুই দেশের মধ্যে সমহারে ভাগ করার কথা বলা হয়। এৰেত্রে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নদীর পানিপ্রবাহে দু'দেশ পরস্পরের কাছে যে তথ্যউপাত্ত হস্তান্তর করেছে, তার ভিত্তিতেই আপতত চুক্তি হতে পারে। তিসত্মার উজানে গজলডোবা নামক স্থানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘি্নত হয়। এরপর নদীর পানি প্রবাহ নিয়ে আর কোন তথ্যআদান প্রদান হয়নি। তবে বাংলাদেশের খসড়ার সঙ্গে একমত না হয়ে ভারত চুড়ান্ত চুক্তির আগে নদীর হাইড্রোলিক সার্ভের দাবি জানায়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন ৫৪ নদী রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে শুধুমাত্র গঙ্গা নদীর পানি নিয়ে চুক্তি হয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা, গোমতী, মনু, মাতামহুরী, খোয়াই, দুধকুমার ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয়পৰই প্রথম তিসত্মার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী।
No comments