বিপর্যয়ের মুখে গার্মেন্টস খাত- ৬ মাসে ১১ হাজার কোটি টাকার রফতানি আয় হ্রাস ॥ ১৩ লাখ লোক কর্মসংস্থান বঞ্চিত by কাওসার রহমান

দেশের তৈরি পোশাকের রফতানি বিপর্যয়ের মুখে। গত ছয় মাসে এ খাতে রফতানি আয় কমেছে প্রায় ১৬৫ কোটি ডলার। যার পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
রফতানি আয় পতনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এ খাতে আয় হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়াবে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। রফতানি আয় হ্রাসের কারণে বছরে প্রায় তিন লাখ প্রত্যৰ কর্মসংস্থান থেকে দেশ বঞ্চিত হয়েছে। পরোক্ষভাবে আরও প্রায় সাড়ে ১০ লাখ লোক কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে দেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে অব্যাহতভাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি চলছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিট পোশাক রফতানি ১৩ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক রফতানি ১৬ শতাংশ কমে গেছে। গত ছয় মাসে এ খাতে যে পরিমাণ রফতানি আয় কমেছে তার মূল্য দাঁড়ায় ১১৬ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া বৈশ্বিক মন্দা ও মন্দা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাদের তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারিনি।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে যখন মন্দা বিশ্ব অর্থনীতিকে পুরোপুরি গ্রাস করে, তখন আমরা তৈরি পোশাকের প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ভারত ওই সময় তাদের মুদ্রার ২৮ শতাংশ অবমূল্যায়ন এবং সুদের হার হ্রাস করে। ভতর্ুতি দেয় কৃষকদের যাতে তারা কম দামে তুলা উৎপাদন করতে পারে। চীনও এ খাতের ওপর থেকে ১৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। পাকিস্তান ও ভিয়েতনামও তাদের মুদ্রার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করে। ওই সময় আমরাও বিজিএমইএ থেকে সরকারকে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম এ খাতের প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু নীতিনির্ধারক মহল এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেন, 'ওই সময় সরকারের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেও কোন ইতিবাচক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করাতে পারিনি। বরং নীতি নির্ধারক মহলের মাঝে এমন ধারণা জন্ম নেয় যে, বৈশ্বিক মন্দায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আমদানিকারকদের বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।'
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মূলত ২০০৮ সালের জুন থেকে দেশের রফতানি আয় হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে বিশ্বের প্রধান তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই রফতানি আয় হ্রাস পেয়েছে চার শতাংশ। অথচ প্রয়োজনীয় পদৰেপ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্পোডিয়ার রফতানি আয় বৃদ্ধি পায়। এরমধ্যে চীনের ১১ শতাংশ, ভারতের আড়াই শতাংশ, ভিয়েতনামের দুই দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং কম্পোডিয়ারও আড়াই শতাংশ রফতানি আয় বৃদ্ধি পায়। ওই দেশগুলোর রফতানি আয় বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে তারা বাংলাদেশের চেয়ে কম মূল্যে তাদের তৈরি পোশাক রফতানি করতে পেরেছে।

No comments

Powered by Blogger.