বিষফোঁড়াগুলো অক্টোপাসে পরিণত হচ্ছে by ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ

প্রথম দিকে সামান্য বুঝতে পারলেও এখন সরকারের এগিয়ে চলার পরিকল্পনা কি আমার কাছে যথেষ্ট ধোঁয়াটে মনে হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে নয়, দিন বদলের স্লোগানে আমি অনেকের মতোই বেশি উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম।
ডিজিটাল যুগে আজ হোক কাল হোক সভ্যতার এগিয়ে চলার নিয়মেই প্রযুক্তিনির্ভর হবে বাংলাদেশ। কিন্তু দিনবদলের চিন্তা সম্পূর্ণ আলাদা। এর আগে অনেক কলামেই এই খেদের কথা বলেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন রাজনীতিবিদরা নিপীড়িত হচ্ছিলেন, অতি ক্ষমতাধররাও দুর্নীতি করে পার পাচ্ছিলেন না, তখন মনে হয়েছিল এই শিক্ষা রাজনীতিকদের মনে শুভ বুদ্ধির জন্ম দেবে। সুবিধাবাদ থেকে বেরিয়ে এসে দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলবেন। বদলে যাবে দিন। নতুন সুন্দর বাংলাদেশে পঙ্কিলতামুক্ত রাজনীতি প্রতিষ্ঠা পাবে। ধারণা ছিল এই প্রথমবারের মতো পরাজিত চারদলীয় জোট আত্মসমালোচনা করবে। নিজেদের অন্যায় অতীতের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ইতিবাচক রাজনীতির পথে হাঁটবে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের অঙ্গ থেকে ছেটে ফেলে কলঙ্কমুক্ত হবে। এভাবে সুবাতাস বইবে আমাদের রাজনীতিতে। মহাবিজয়ের পর আওয়ামী লীগ বনেদী ধনীর মতো নিজেকে সংযত রাখবে। নেতৃত্বনির্ভর হয়ে নিশ্চিত হবে এই ভেবে যে নিজের দলীয় ঐতিহ্য আর গণমানুষের বিপুল সমর্থনে সে এখন অতি শক্তিমান। এ কারণেই বলব, মানসিক প্রশান্তি নিয়ে দিন বদলে ফেলার প্রকৃত ক্ষমতা তো এখন আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকারেরই থাকার কথা। তাই প্রত্যাশা ছিল জরাগ্রস্ত রাজনীতির খোল নলচে পাল্টে দেবে আওয়ামী লীগ। দলীয়করণ সংস্কৃতির কবর রচিত হবে। সমাজের নানা অঞ্চলের যোগ্য মানুষ এই সরকারের আমলে মূল্যায়িত হবেন। অঙ্গচু্যত হয়ে ছাত্ররাজনীতি ছাত্র কল্যাণমুখী সংগঠনে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাবে। দেশ প্রেমিক সদস্যদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুনর্গঠন করা হবে। আর এদের নেতৃত্বে সন্ত্রাস অনেকটাই অবদমিত হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। দ্রব্যমূল্য উর্ধগতির লাগাম টেনে ধরতে পারবে দুর্নীতি কমিয়ে আনা রাজনীতি ও প্রশাসন থাকার সুবাদে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার শুরুতে বিস্ময় তৈরি করে পরিবর্তনের হাওয়াই যেন বইয়ে দিতে চেয়েছিল। নড়েচড়ে বসেছিল আশাবাদী মানুষ। কিন্তু আশার ফানুস চুপসে যেতে দেরি হলো না। বিএনপি বদলালো না একটুও। নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যে, আচরণে সেই পুরনো গাড়ল রাজনীতিরই প্রকাশ ঘটতে থাকল। অন্যদিকে এত বড় বিজয় আর জনসমর্থন আওয়ামী নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারল না। প্রকৃত অর্থে দিন বদলাবার পথে পা ফেলবার সাহসই দেখাতে পারল না। দলীয় রাজনীতির সেই বসত্মাপচা সঙ্কীর্ণ বৃত্তেই আটকে গেল। ফলে ছাত্র রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন তো কমলোই না বরঞ্চ তা রেকর্ড ছাড়াতে লাগল। সরকারের ছ'মাস না যেতেই ব্যবসায়ীদের জালে আটকে যেতে থাকল সরকার। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ল বাজার। নানা নামের নিয়ন্ত্রক বাহিনী সক্রিয় থাকলেও খুন রাহাজানি ছিনতাইয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ল দেশবাসী। সেই পুরনো স্টাইলে ভাগাড়ে পরিণত হতে থাকল জাতীয় সংসদ।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই সরকারের প্রতি মুক্তমনের মানুষদের অনেক বেশি আশা বলেই পত্রপত্রিকা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছিল সম্ভাব্য পরিণতির কথা বলে। বরাবরের মতো আন্তরিতায় পেয়ে বসা সরকারের নীতিনির্ধারকরা থোড়াই কেয়ার করেছেন এসব অভাজনদের কথা।
আজ ছাত্রলীগের লাগামহীন দুর্বৃত্তপরায়ণতা, নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, বিদ্যুত গ্যাসের সঙ্কট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি-সরকারের এমনতরো বিষফোঁড়া তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে এখন অক্টোপাসে রূপ নিয়েছে। আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরেছে সরকারকে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগকেও রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ নজিরবিহীন নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি আর দলীয় সন্ত্রাসে আওয়ামী লীগের গৌরবকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে থাকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ, কড়া হুঁশিয়ারী- কোনটাই কাজে আসছিল না। শেষে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণাও দিলেন তিনি। হতাশ দেশবাসী লক্ষ্য করল এসব টোটকা দাওয়াই সকলই নিষ্ফল হয়েছে। দলীয় প্রধানের চাওয়া পাওয়ার চেয়ে ছাত্রলীগ নামধারীদের হল দখল, সিট দখল, ভর্তি বাণিজ্য এবং এর সূত্রে চাঁদাবাজির অর্থলাভ অনেক বেশি লোভনীয় মনে হলো। তাই আওয়ামী নেতৃত্বের 'কঠোর' অবস্থানের সময়ে ছাত্রলীগের ছাত্রদের পাশাপাশি ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরাও সিট বাণিজ্য ও চাঁদা বাণিজ্যের অগ্রযাত্রায় সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়ে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট আকারে দেখা দিতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব ছাত্রলীগের স্থানীয় ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের মধ্যে ঘটতে থাকে। এর অর্থ চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির ভাগ বাটোয়ারা নিয়েই এই সকল দ্বন্দ্ব। এই সূত্রের শেষ মন্তব্য হচ্ছে ছাত্রলীগের মধ্যে এখন আদর্শিক ছাত্র রাজনীতির কোন নৈতিক অবস্থান নেই। তাই বলা যায়, বর্তমান ধারার ছাত্রলীগ সরকারকে বিব্রত করার এক পচা শামুক বৈ কিছু নয়।
অনন্যোপায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের উন্মাদনায় রাশ টানার জন্য এদের দেখভাল করতে আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদককে দায়িত্ব দিলেন। তাঁরাও রীতিমতো খাবি খাচ্ছেন। এখন প্রতিদিন কাগজ খুললেই দেশজুড়ে ছাত্রলীগের একাধিক দুষ্কর্মের খবর বেরুচ্ছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে ছাত্ররাজনীতির বর্তমান ধারা বজায় রেখে ছাত্র সংঘাত বন্ধ করা সম্ভব নয়। গত ১৮ মার্চ কালের কণ্ঠ 'নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ' শিরোনামে লীড নিউজ করে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের বক্তব্য এবং অনুসন্ধানী রিপোর্ট থেকে বোঝা যায় বরাবরের মতো সর্ষের ভেতর লুকিয়ে আছে ভূত। জননেত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হওয়ার বিষয়টি আন্তরিক হলেও তা ফলপ্রসূ হওয়ার উপায় নেই। স্থানীয় আওয়ামী নেতা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের কারও কারও আশ্রয় থাকায় পুলিশ প্রকৃত ভূমিকা রাখতে পারছে না। ঢাকা কলেজের ঘটনার পর ছাত্রলীগের অর্ধশত কর্মী গ্রেফতার হওয়া তেমন কোন তাৎপর্য রাখে না। নেতাদের কথা শুনতে বাধ্য এসব পুঁচকেরাই মূলত আটক হয়েছে। দুই গ্রুপের নেতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এরা আবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের লাঠিয়াল। সুতরাং পুলিশের সাধ্য কি এদের আটক করে!
১৯ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায়, ঢাকা কলেজে সংঘর্ষ চলাকালে আকতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিভিন্ন হলে হামলা হয়। অন্যদের সঙ্গে পুলিশ আকতারুজ্জামানকেও গ্রেফতার করে। কিন্তু নেতাকে আটকানো যায়নি। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের তদ্বিরে পুলিশ এই সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেয়। একই দিনে প্রকাশিত জনকণ্ঠের রিপোর্টে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার মদদপুষ্ট হয়ে ছাত্রলীগ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাস সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত হচ্ছে বিশ্বাস বিল্ডার্স ভবন। এখানে চাঁদাবাজি করার জন্যই প্রয়োজন পড়েছিল দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাসে আধিপত্য বিস্তার। রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এই সংঘর্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল শিহাব-রনি গ্রুপ ও তারেক-টিটু গ্রুপ। সংঘর্ষের সময় শিহাব নিজে অস্ত্র পরিচালনা করেছে। একইভাবে তারেক-টিটু ঘটনাস্থলে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বোধগম্য কারণেই এইসব সন্ত্রাসী নেতাদের পুলিশ গ্রেফতার করেনি। এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারীর মূল্য থাকে কোথায়? আর এভাবে সাধারণের কাছেও তারা খেলো হয়ে যান।
আমরা বাস্তব পর্যবেক্ষণে বিশ্বাস করি বর্তমান কাঠামোর ছাত্র রাজনীতি বহাল রেখে কোন দাওয়াই কাজে লাগবে না। বরঞ্চ এই সব অপকর্মের বাড়বাড়ন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে দুর্বল করে দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত করবে সরকারের পথ চলা। সুতরাং এখনই প্রয়োজন ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রে দিন বদলের বাস্তবায়ন। সংসদে আইন করে ঠিক করে দেয়া হোক ছাত্র রাজনীতির কর্মপরিধি। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলো কেবল ছাত্র ও শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনেই যুক্ত থাকতে পারবে। চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি এবং অস্ত্রবাজিতে যুক্ত ছাত্রকে অভিযোগ পাওয়া মাত্র দল থেকে বহিষ্কারের বিধান রাখা হোক। একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হোক এসব ছাত্র নামধারী দুষ্কৃতকারীর পক্ষে সুপারিশকারীর জন্য।
সরকারের দ্বিতীয় বিষফোঁড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। ছাত্র সংঘাত ও ছাত্র রাজনীতির নৈরাজ্য এ দেশের এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ক্ষতের সৃষ্টি করে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীন বাজারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সকল শ্রেণীর মানুষ। তাই এখান থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের যাত্রা শুরু হয় সবার আগে। এখন আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর 'কঠোর হুঁশিয়ারী'র প্রতি মানুষের আস্থা নেই। এইসব হুঁশিয়ারী এখন কাগুজে বাঘ এবং বিরক্তিকর শব্দ। কোন বাস্তব প্রয়োগ নেই। মূল্যবৃদ্ধি এখন ব্যবসায়ীদের হাতে। সাধারণ মানুষের চোখে সরকার এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ। অথৈ পাথারে হাবুডুবু বাণিজ্যমন্ত্রী একবার বলছেন ব্যসায়ীদের সিন্ডিকেট মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে, আবার পরক্ষণেই বলছেন খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছে। যেই বাড়াক এসব তথ্য আবিষ্কার করে জনগণের সামনে প্রচার করা অসহায় সরকারের কাজ। দায়িত্ববান সরকারের কাজ হচ্ছে এই সঙ্কট থেকে দেশবাসীকে উদ্ধার করা।
আসলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না করে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব? নির্বাচনে টাকা ছড়ানোর প্রথা ব্যবসায়ীদের কাছে নতজানু করে তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। অভিযোগ আছে ব্যবসায়ীরা দলগুলোকে চাহিদা মতো মোটা টাকা দেন বলে তাদের অখুশি করার সাধ্য থাকে না কোন সরকারেরই। দলবাজ সরকারগুলোর অনৈতিক কাজের মাসুল এভাবেই গুনতে হয় সাধারণ ভোক্তাকে? আমাদের সরকারী দলের নেতৃত্বকে বেশি করে ভাবা উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোন বক্তৃতাই কাজে আসবে না। এই বিষফোঁড়া ক্রমে অক্টোপাস হয়ে এক সময় আঁকড়ে ধরবে সরকারী দলের কণ্ঠনালীকে।
এই সঙ্কটগুলোর পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর গ্যাস ও পানি সঙ্কট। সরকার পরিচালকরা যখন জোট সরকারে আমলে এক ইউনিট বিদ্যুত যোগ হয়নি বলে বক্তব্য দেন তখন ভুক্তভোগী মানুষ এই সরকারের কৃতিত্বের ফসল পেতে চায়। কিন্তু সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণেই হোক বা দক্ষতার অভাবেই হোক ভোক্তা ক্ষুব্ধ হচ্ছে। এ বাস্তবতাকে হাল্কা করে দেখা যাবে না।
আমাদের দেশে একটি সমস্যা রয়েছে। তা হচ্ছে সব সরকারের আমলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে সত্য লুকোতে চায়। অথবা তুলনা করে অমুক আমলের চেয়ে খুন দশটা কম হয়েছে। ছিনতাই কম হয়েছে পাঁচ ভাগ। হয়ত মানুষের মনোবল বাড়াতে এসব বলে থাকে। এখন কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির যুগে অতি দ্রুত সকল খবর মানুষের দরজায় চলে আসে। টিভি চ্যানেল তাৎক্ষণিকভাবে সকল অঘটনের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করে। পরদিনই সংবাদপত্রে বিস্তারিত খবর পাওয়া যায়। তাই মানুষের কষ্টের বিষয়গুলোর সমাধানে সক্রিয় না থেকে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সত্য লুকোতে থাকে তখন মানুষের হতাশা বাড়ে। বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভাল যাচ্ছে তেমন দাবি করলে কিন্তু মানুষ মেনে নেবে না।
আমাদের সরকারগুলো সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চায় কিনা আমি জানি না। অথবা জানি না এসব প্রতিক্রিয়ার মূল্য তাদের কাছে আছে কিনা। তবে মানতে হবে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন ও প্রতিবাদী। গত নির্বাচনে ভোটের মূল্য তারা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। নিজেদের শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অনেক বেড়েছে। এই শক্তিশালী ভোটারদের কাছে নেতা-নেত্রী বা দলের প্রতি ভালবাসার চেয়ে মুক্তচিন্তায় অধিকার প্রতিষ্ঠাই বড়। তাই শক্ত হাতে অক্টোপাসের বাঁধন মুক্তি সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতার উঠোনে দাঁড়িয়ে সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই হবে।
shahnawazju@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.