নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি ॥ সঙ্কটে গ্রীস by কামরুল হাসান

গ্রীস নিজেদের চলমান আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় অতিসম্প্রতি কিছু বন্ড ইস্যু করে। আর্থিক সঙ্কট নিরসন এবং ইউরো মুদ্রার মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় এই বন্ড কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে দেশটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন।
বন্ডের শেয়ার বিক্রিতে দেখা যায় বিক্রির জন্য ছাড় দেয়া সংখ্যার চেয়ে আবেদনপত্র বেশি পড়েছে। বন্ড বিক্রির ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাদের সব বন্ড বিক্রি হয়ে যায়। অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি থেকে জানা যায়, ৬.৩ শতাংশ হারে মোট ৫ বিলিয়ন ইউরো (৬.৮ বিলিয়ন ডলার) বিপরীতে ১৫ বিলিয়ন ইউরো (২০.৫ বিলিয়ন ডলার) আবেদন জমা পড়ে। অর্থমন্ত্রী বলেন, "চলমান আর্থিক মন্দা তত্ত্বে বন্ড ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের যে উৎসাহ এবং আগ্রহ দেখা যায় তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। বিনিয়োগকারীদের এই আগ্রহ প্রমাণ করে গ্রীসের অর্থনীতি নিয়ে তারা এখনও আশাবাদী।"
এই বিক্রির মাধ্যমে গ্রীস প্রমাণ করল যে কোন আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় ইউরোপের সাহায্য ছাড়াই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে তারা সৰম, তবে এই সঙ্কট সমাধানে বেসামরিক লোকদের বেতন কর্তন, পেনশন বন্ধ করা এবং সিগারেট, এলকোহল ও অন্যান্য বিলাস দ্রব্যের কর বৃদ্ধি করা হয়। এদিকে শ্রমিক ইউনিয়ন সরকারের এই সিদ্ধানত্মের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতোমধ্যে বিৰোভে ফেটে পড়ে।
গ্রীস সরকার বিভিন্ন বন্ড ইসু্যর মাধ্যমে চলতি বছর ৫৪ বিলিয়ন ইউরো বাজার থেকে তুলে নেয় এবং ট্রেজারি বিল বিক্রি করে আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন ইউরো। আগামী এপ্রিল এবং মে মাসে আনুমানিক ২০ মিলিয়ন ইউরো ঋণ পূর্ণকাল প্রাপ্ত হবে। কিন্তু বাজারের আস্থাহীন ক্রমবর্ধমান ঘাটতি মোকাবেলায় সরকার নিম্ন সুদে ঋণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। অন্যদিকে গ্রীস তার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যদের প্রতি এই সঙ্কটে বাজারের অবস্থানকে পুনরায় স্থিতিশীল এবং আস্থাশীল করতে বিল পাসের অনুরোধ জানিয়েছে। গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপানড্রীন্ড চলতি সপ্তাহেই বার্লিনে জার্মানের চ্যান্সেলর এনজিলা মার্কেল এবং প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গ্রীসের সঙ্কট মোকাবেলায় সাহায্যের প্রতিশ্রম্নতি দেয়। অন্যদিকে জার্মানি এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকসমূহ গ্রীসের বন্ড নিশ্চয়তা দেবে বলে একটি সূত্র জানায়। অনেক বিশেস্নষক আশা প্রকাশ করেন ইউরোপ হয়ত গ্রীসের সঙ্কট মোকাবেলায় সাহায্যের হাত বাড়াবে। অন্যদিকে ইউরোর মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। গ্রীসের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রিম ড্রাওটসাস এআরডি টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাৰাতকারে জানায়, আমরা আমাদের ইউ সহযোগী হতে কিছু সাহায্য প্রত্যাশা করছি। বিশেষ করে জার্মানির সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, "আমরা তাদের কাছ থেকে সরাসরি সাহায্যের দাবি জানাতে পারি না।" আমরা বিশ্বাস করি, এই সঙ্কটের সমাধান আমরা নিজেরাই করতে পারি। বরং তাদের সহমর্মিতা আমাদের এখন প্রয়োজন। অন্যদিকে জার্মানির চ্যান্সেলর মার্কেল জানায়, "গ্রীস সাহায্যের আবেদন জানায়নি, বরং ইউরো অবস্থান সুসংহত করার অনুরোধ জানিয়েছে। বেশিরভাগ জার্মান অবশ্যই এই সাহায্যের বিরোধী। মার্কেল সতর্ক উচ্চারণ করে বলেন, ইউরো এখন সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে। ইউরো রৰা করাই এখন আমাদের মূল দায়িত্ব। মার্কেল আরও জানায়, তিনি মোটেও ট্যাক্স প্রদানকারীদের অর্থ অন্য রাষ্ট্রে প্রদান করবেন না। ৭১ শতাংশ জার্মান মনে করে গ্রীসের প্রতি ইউরোপের সাহায্য প্রদান করা উচিত নয়। জার্মানরা মূলত সঞ্চয়ী তাই তারা চায় না তাদের অর্থ দিয়ে অন্য রাষ্ট্রের ব্যর্থতা ঢাকা হোক। এদিকে গ্রীসজুড়ে শুরম্ন হয়েছে শ্রমিকদের চরম অসনত্মোষ এবং আন্দোলন। কেননা গ্রীসের প্রবৃদ্ধি বর্তমানে নেতিবাচক অবস্থানে বিরাজমান। পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষের খবর ইতোমধ্যে পাওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.