কিবরিয়া হত্যায় বিএনপি হাইকমান্ড সরাসরি জড়িত ॥ রিমান্ডে বাবর by রফিকুল হাসান ,চৌধুরী তুহিন

 রিমান্ডে নিয়ে হুজি নেতা মিঠুর মুখোমুখিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসায় আওয়ামী লীগ নেতা শামস্ কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপি-জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে শনিবার সকালে হবিগঞ্জের আদালতে হাজির করে সিআইডি।
পূর্বের রিমান্ড শেষ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডির পক্ষে আর নতুন কোন আবেদন না থাকায় ওই দিন স্পেশাল কোর্টের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল আমিন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরকে পুনরায় কারাগারে নিয়ে যাবার আদেশ দেন। এর পূর্বে বাবরকে ঢাকার কাশিমপুর কারাগার থেকে অত্যন্ত কড়া পুলিশী প্রহরায় হবিগঞ্জের আদালতে নিয়ে আসা হয়। সূত্র জানায়, দ্বিতীয়বারের মতো রিমান্ডে নিয়ে একই মামলায় গ্রেফতারকৃত হুজি নেতা মিজানুর রহমান মিঠুর মুখোমুখি করা হয় বাবরকে। সিআইডি কর্মকর্তারা এ সময় উভয়কে সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার পেছনে কি উদ্দেশ্য ছিল, কারা মূল পরিকল্পনাকারী, গ্রেনেড কারা ছড়ে ও কোথা থেকে আনা হয়েছে তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নবাণে মিঠু-বাবরকে জর্জরিত করে। শুধু তাই নয়, ওই জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমে মিঠু-বাবর একে অপরকে না চেনার কথা বললেও বিএনপির হাই কমান্ড এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সিআইডিকে বাবর জানায়। হাওয়া ভবন থেকেই মূলত কলকব্জা নাড়ানোসহ হত্যাকাণ্ড পরবর্তী সকল গোপন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া সূত্র আরও জানায়, কিবরিয়া হত্যায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানের নির্দেশে তাজ উদ্দিনকে গ্রেনেড ছুড়ে মারতে সহযোগিতা করে হবিগঞ্জের ৪ যুবক। এই যুবকদের মধ্যে মিজানুর রহমান মিঠু ও বদরম্নল আলম মিজান ছাড়া অন্য দু'যুবক হচ্ছে আদ্যরের 'ম' এবং 'ব' নামধারী ব্যক্তি। সূত্র মতে, তারা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইতোমধ্যে আদ্যরের নামধারী ওই দু'যুবক হবিগঞ্জ থেকে সটকে পড়েছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে এই দু'জনকে পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গ্রেফতারের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর এ কারণে ওদের পুরো নাম সিআইডি মিডিয়ায় প্রকাশ করা সমুচীন নয় বলে মনে করছে। এদিকে কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে আদ্যরের 'ম' নামধারী এক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জড়িত থাকার বিভিন্ন প্রকাশিত খবর সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ইতোমধ্যে এই শিবির ক্যাডারের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে অপর একটি সূত্র জানায়, এই শিবির ক্যাডারকে বাঁচাতে ওপর মহল থেকে শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে দৌড়ঝাঁপ। আর এ সুযোগে হবিগঞ্জ শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও প্রগতিমনা অনেক মানুষের ধারণা, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় ওই শিবির ক্যাডারকে হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজার, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল এমনকি বারডেম হাসপাতালেও দেখা গেছে। যা অনেক ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়ও তাকে অবস্থান করার বিষয়টি তখন ফুটে ওঠে। সুশীল সমাজের মতে, তাকে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনলে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের অনেক কু বের হয়ে আসবে। মাত্রা নেবে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নতুন মোড়। সিআইডি সূত্র জানায়, হত্যাকা- সংঘটিত হবার আগে এবং পরবর্তী সময়ে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মেলেছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সিআইডি কর্মকর্তারা এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। তবে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেছেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মিডিয়ায় যেমন সব কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না তেমনি দ্রম্নত এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত মোটিভ জাতিকে উপহার দেয়া সম্ভব হবে বলে তার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.