টাইগারদেরই হতে পারত ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটা by আরিফুর রহমান বাবু

প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে? শনিবার খেলা শেষের অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে প্রশ্ন উঠল। টাইগার ওপেনার তামিমের মূল্যায়ন, আমরা আছি মাঝামাঝি।
মানে, দু'দল সমান সমানই আছে। তবে আরও তিন উইকেট কম হারালে এই রান করেও আমরা উপরে থাকতে পারতাম। তামিমের কথাই প্রতিফলিত হয়েছে ইংলিশ অফস্পিনার ট্রেডওয়েলের কণ্ঠেও। তাঁর কথা, শুরম্নতে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও দিন শেষে দু'দল সমান সমানেই দাঁড়িয়ে। শুধু ওদের কথা নয়, যে কোন বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত ও বিশ্লেষক এমনই বলবেন। ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটি আসলে দু'দলের সমান কেটেছে। স্কোরলাইনের একাংশ দেখলে মনে হবে স্বাগতিকরাই বুঝি এগিয়ে। রান তিন শ' পেড়িয়ে সাড়ে তিন শ' ছুঁইছুঁই (৩৩০)। কিন্তু আট উইকেট খোয়ানোয় হিসেব বরাবর হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম প্রথম টেস্টের তুলনায় এটা অনেক ভাল অবস্থা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচের প্রথম দিন শেষেই ইংলিশরা এগিয়ে গিয়েছিল অনেকখানি। এ্যালেস্টার কুক ও কলিংউডের জোড়া সেঞ্চুরিতে ইংলিশ স্কোর গিয়ে ঠেকেছিল তিন উইকেটে ৩৭৪-এ। খেলা না দেখা কাউকে বোঝানো হয়ত কষ্ট হবে। তাঁরা ভাববেন, ইংল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে ঐ রকম পেছনের পায়ে পড়া শাকিব বাহিনী ঢাকার মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন সোয়া তিন শ' রান করেছে, সেটাই অনেক। কিন্তু খেলা দেখা সবাই উল্টো আফসোসে দগ্ধ। তাদের হিসেব, এর চেয়েও ভাল অবস্থায় থাকা যেত। সে সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই_ই ছিল। কিন্তু টাইগাররা তা কাজে লাগাতে পারেননি। যে রান ৫ উইকেটে তোলা যেত, সেটা করতেই খোয়া গেছে আট উইকেট। ইংলিশ ফাস্ট বোলারদের দুর্দমনীয় গতি, উইকেট সংহারি সুইং ও বিপজ্জনক বাউন্স আর স্পিনারদের স্পিন ঘূর্ণিতে স্বাগতিকরা বেশি উইকেট হারালে এ আফসোস হতো না।
কিন্তু তা হয়নি। একজন ইংলিশ বোলারও সমীহ জাগাতে পারেননি। যে অফস্পিনার গ্রায়েম সোয়ান চট্টগ্রামে পাঁচটি করে ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন, কাল প্রথম ঘণ্টায় তামিমের মারের উত্তাল তোড়ে তাঁর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। ঐ অফস্পিনারের এক ওভারে তিন বাউন্ডারি আর এক ছক্কা হাঁকিয়ে মাঠ গরম করে ফেলেন তামিম। তারপরও সোয়ানের ঝুলিতে জমা পড়েছে সর্বাধিক তিন উইকেট। অভিষেক হওয়া অফস্পিনার ট্রেডওয়েল তুলনামূলক কম মার খেয়ে পেয়েছেন দুই উইকেট (২৯ ওভারে ৮৫ রানে দুই উইকেট)। যার প্রচ- গতি ও বাউন্সে চট্টগ্রামের প্রথম ইনিংসে ইমরম্নল কায়েস ও জুনায়েদ বিব্রতবোধ করে শরীর বাঁচাতে গিয়ে কোজইনে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন সেই স্টুয়ার্ট ব্রড পেয়েছেন মোটে এক উইকেট। আর দুই ফাস্ট বোলার ফেন_ব্রেসম্যানও পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
টাইগাররা ওয়ানডে মেজাজে খেলেই নিজেদের অবস্থান নষ্ট করেছেন। এই ভুল পথের যাত্রী কম-বেশি সবাই। তারপরও তামিম, রিয়াদ ও অধিনায়ক শাকিব বাকিদের চেয়ে একটু বেশিই দায়ী। দিন শেষে তামিম নিজে তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তাঁরও কথা, আমরা যেভাবে খেলেছি, সেটা ওয়ানডেতে হলে খুব ভাল হতো; টেস্টের জন্য মোটেই ভাল নয়। এ কথা যদিও বলেননি। বলার আসলে প্রয়োজনও পড়ে না। প্রথম ৬০ মিনিটে ৯৫ আর প্রথম দুই ঘণ্টায় ১৩৯ রান কোনভাবেই পাঁচদিনের খেলার প্রথম সেশনের চিত্র হতে পারে না। কিন্তু কাল সেভাবেই খেলেছে শাকিবের দল। তামিম নিজেই দেড়ঘণ্টার সামান্য বেশি সময়ে ৭১ বলে ১৩ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ৮৫ রান করে অভিষেক হওয়া অফস্পিনার ট্রেডওয়েলের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। রিয়াদ অসাধারণ ব্যাটিং করতে করতে ৫৯ রানে ব্রেসন্যানের ফুল-লেন্থ ডেলিভারিতে আলগা হাতে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। আর অধিনায়ক শাকিব একদম পঞ্চাশের দোরগোড়ায় গিয়ে আবার অফস্পিনে সুইপ খেলতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েছেন লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে। এই তিন ইনিংসের যে কোন একটি দীর্ঘ হলেই পুরো চালচিত্র অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু অতিমাত্রায় শটস খেলার কারণেই তা হয়নি। এছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ সংযমী ব্যাটিং করা জুনায়েদ_ মুশফিকুর রহিম আবার সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি। জুনায়েদ ৩৯ আর মুশফিক ৩০ রানে আউট হয়েছেন। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে মধ্য তিরিশে পেঁৗছে যাওয়া নাইম ইসলাম আবার পা রেখেছেন তিরিশে। বাংলাদেশ শেষ পর্যনত্ম কতদূর যাবে, তা রাজশাহীর এই তরম্নণের ওপরই নির্ভর করছে। তামিমের আশা, নাইম ভাই আছেন। সফিউলের সাপোর্ট পেলে হয়ত ৩৬০/৩৭০ হতে পারে। তা হলে ভালই হবে। আদৌ ভাল হবে কি-না, তা সময়ই বলে দেবে।

No comments

Powered by Blogger.