সরকারী চাকরির মেয়াদ তিন বছর বাড়ছে- বয়সসীমা হচ্ছে ৬০ মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২ by তপন বিশ্বাস

 সরকারী চাকরির মেয়াদ তিন বছর বাড়ছে। বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৬০ করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে ৬২ বছর। তবে আদেশ জারির আগে যাঁরা অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে (এলপিআর) যাবেন তাঁরা এই সুবিধা পাবেন না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। চলতি সপ্তাহে এই প্রস্তাব সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বেড়েছে কর্মক্ষমতাও। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী মূলত দক্ষ ও পরিপক্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। কিন্তু দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠার অল্পদিনের মধ্যেই অবসরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। বিশেষ করে এলপিআর যাওয়ার এক বছর আগে থেকে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে বড় কোন সিদ্ধান্ত নিতে চান না। এতে পরোক্ষভাবে দেশ ৰতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃতপৰে দেশ দক্ষ ও পরিপক্ব কর্মকর্তাদের সার্ভিস কম পায়।
এ ছাড়া প্রসত্মাবে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশের সরকারী চাকরিতে অবসরের মেয়াদ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বেশি জোর দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের কথা। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় সরকারী চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর। এ ছাড়াও জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং বিগত জোট সরকারের সময় সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয়াসহ মোট ছয়টি বিষয় বিবেচনায় এনে সরকারী চাকুরেদের অবসরে যাওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০০৪ সালে বিগত জোট সরকার সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের মাধ্যমে সুপ্রীমকোর্ট বিচারকদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর এবং মহাহিসাব নিরীৰকের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার সময়সীমা ৬৫ বছর অথবা উক্ত পদে দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া, এর মধ্যে যা আগে ঘটে সে সময় পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পাশাপাশি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রসায় ইংরেজী, গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিষয়ের শিক্ষকদের শর্তসাপেৰে ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ সব বিষয়ে সমন্বয় করতে সরকারী চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার মেয়াদ ৬০ বছর করা জরুরী বলে মন্তব্য করা হয় প্রস্তাবে।
এ ছাড়া ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকারী চাকরির বয়সসীমা ৬০ বছর করার সুপারিশ করেছিল। সপ্তম জাতীয় বেতন কমিশনও সরকারী চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করে।
সরকারী চাকরির মেয়াদ বাড়ালে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে প্রচলিত এমন যুক্তির বিপরীতে বলা হয়েছে, অবসরে যাওয়ার মেয়াদ বাড়ালে এতে উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাব পড়বে না। বরং এতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমবে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অফিস-আদালতের কলেবর বাড়ছে। নতুন অনেক পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আর দেশে যে পরিমাণ বেকার রয়েছে তার তুলনায় অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিবছর অবসরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তিন বছর পর থেকে এ জাতীয় সমস্যা আর থাকবে না।
বিগত আওয়ামী লীগ আমলে সরকারী চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে ফাইল বন্দী হয়ে থাকে। এরপর বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও সরকারী চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। জোট সরকারের শুরুতে একবার এবং শেষ দিকে একবার এই উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ফল শূন্য। এই আমলের দুইবার নেয়া উদ্যোগও ভেসত্মে যায়। আবারও এই প্রস্তাব ফাইল বন্দী হয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক আমলেও একবার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ সময়ে সরকারী চাকরির বয়সসীমা ৬২ বছর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তাও আলোর মুখ দেখে না।
অবশেষে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ৫৭ থেকে ৫৯ করা হয়। এই সময় সরকারের পক্ষে আভাস দেয়া হয়, ' টেস্ট কেস' হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হলো। এতে সুফল পাওয়া গেলে ২০১০ সালে সরকারী চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হবে। সে উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রস্তাব তৈরি করেছে।

No comments

Powered by Blogger.