চাল মজুদদারির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে- সরকারের মজুদ ১০ লাখ থেকে ৮ লাখ টনে নেমেছে by মিজান চৌধুরী

অবৈধ মজুদদারির কারণে হুমকির মধ্যে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অধিক মুনাফার আশায় রাইস মিলগুলোতে অবাধে মজুদের কারণে সরকার হুমকির মধ্যে পড়ে।
কারণ মজুদদারি ভাঙতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক ভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু ওই কর্মসূচী শেষ করার আগেই খাদ্য নিরাপত্তার মজুদ ঝুঁকি মাত্রার নিচে নেমে এসেছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সরকার নিজেই উৎকণ্ঠায় রয়েছে।
এদিকে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি মাত্রা অতিক্রম করতে আগামী এক মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী শনিবার রাশিয়া থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন গম চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছেছে। আগামী সোমবার রাশিয়া থেকে আনা দ্বিতীয় চালানের ৩৯ হাজার ৫শ' মেট্রিক টন গম চট্টগ্রামে এসে পৌঁছবে। সংশিস্নষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে রাইস মিলগুলোতে প্রচুর ধান চাল মজুদ করা হয়েছে। বিশেষ করে এ বছর পাশর্্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের প্রধান চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি দেশে উৎপাদন কম হয়েছে। দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ওই সুযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বেশি মুনাফা লোটার আশায় চাল মজুদ করে। মজুদের বিষয়টি সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ধরা পড়ে। এই মজুদের কারণে মোটা চালের মূল্য মৌসুমে ৩০ টাকা এবং মিনিকেট চাল ৪৫ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে। মোটা চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে গরিব মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। এই দুর্ভোগ থেকে সাধারণ মানুষকে রৰা করতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকার ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছে। কম দামে ওই চাল মানুষের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ ছাড়া কাবিখার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন ও টিআরের মাধ্যমে ১১ লাখ এক হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়। বর্তমানে আইলা এলাকায় ভিজিএফ কর্মসূচী চলছে। এসব কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে গিয়ে সরকারের হাতে খাদ্য মজুদের পরিমাণ নেমে আসে ৮ লাখ মেট্রিক টন। সাধারণত খাদ্য মজুদের নিরাপত্তার সিলিং হচ্ছে ১০ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান ওই নিরাপত্তা সিলিং থেকে খাদ্য মজুদ নেমে এসেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, অবৈধ মজুদের কারণে বর্তমান খাদ্য নিরাপত্তা মজুদ হুমকির মধ্যে পড়েছে।
এদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি করেছে সরকার। ওই চুক্তি অনুযায়ী মেসার্স মনোয়ারা ট্রেডিং কোম্পানি ওই গম সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া আগামী ২২ মার্চ মেসার্স সোনালী ট্রেডার্সের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে আনা ৩৯ হাজার ৫শ' মেট্রিক টন গম চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে। মেসার্স ইমপেক্স কনসালট্যান্সসের মাধ্যমে তুর্কি থেকে এক লাখ মেট্রিক টন গম আনা হচ্ছে। ওই গম আগামী ২৭ মার্চ ৩৯ হাজার ৫শ' মেট্রিক টন এবং ১২ এপ্রিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন গমের জাহাজ চট্টগ্রামে এসে পেঁৗছবে। রাশিয়া থেকে অপর গমের চালান_ আগামী পহেলা এপ্রিল মেসার্স এস আলম ট্রেডিং কোম্পানির সরবরাহকৃত ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম ও ৩ এপ্রিল মেসার্স পূর্বালী ট্রেডিংয়ের সরবরাহকৃত ৪৪ হাজার মেট্রিক টন ও ৭ এপ্রিল ১৯ হাজা্র মেট্রিক টন গম নিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরে এসে জাহাজ ভিড়বে।
এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে জানান, সরকারের গুদামে গম প্রবেশ করার পর মজুদ পরিস্থিতি আরও ভাল হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাম্য নয়। এর পরও বোরো ধান ওঠার আগে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে এই মজুদ খাদ্যশস্য কাজে লাগবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে চাল বিতরণ হচ্ছে। আশা করি বোরো ধান উঠলে মজুদ পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভাল হবে। এজন্য সরকার পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছে।
সূত্রমতে এ বছর মিলগুলোতে অধিক মাত্রায় মজুদ হয়েছে। এদিকে অবৈধ মজুদ ভাঙতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক পদৰেপ নেয়া হয়েছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মিল মালিকরা যাতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বেশি দিন ধান চাল মজুদ করতে না পারে সে জন্য ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। আগে ব্যাংক থেকে নেয়া সিসি ঋণ চাল মিল মালিকরা ৯০ দিনে পরিশোধের বিধান ছিল। কিন্তু অনেক মালিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করত না। এখন ৯০ দিনের স্থলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৪৫ দিন করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে কোন্ কোন্ মিল মালিক চাল মজুদ করছে সে ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাকে খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.