৭ই মার্চ ॥ বিজ্ঞ জননেতার দায়িত্ব পালন by মুহাম্মদ শামসুল হক
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে
বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে স্বাধীনতার মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে
যুদ্ধপ্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছিলেন 'স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের
সর্বাধিনায়ক' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এর আগে ৩
মার্চ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে পল্টনে এক
ছাত্র- গণসমাবেশে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প থেকে স্বাধীন
বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। আর সেই ইশতেহারের একটি ধারায় বঙ্গবন্ধুকে
'স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক' ঘোষণা করা হয়।
কথা ছিল ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। কিন্তু ১ মার্চ পাকিসত্মানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় ৩ মার্চের প্রসত্মাবিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বাংলার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল এবং ৭ মার্চ রেসকোর্সে জনসভার কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ওই দিনই (১ মার্চ) ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির অনির্ধারিত বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু অপেমাণ সাংবাদিকদের জানান, "আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম এবং সাত কোটি বাঙালির মুক্তির জন্য আমি চরম মূল্য দিতে প্রস্তুত রয়েছি। ষড়যন্ত্রকারীদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে আমরা নতুন ইতিহাস রচনা করবো।" বস্তুত 'নতুন ইতিহাস রচনা করবো' কথাগুলোর দ্বারা বঙ্গবন্ধু পরোভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
এদিকে ৩ মার্চ থেকে চলে আসছিল দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এলো ৭ মার্চ। এখনকার মতো আধুনিক মোবাইল যোগাযোগ, শ' শ' সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে তাৎণিক কর্মসূচী ঘোষণার সহজ কোন পদ্ধতি ছিল না সে সময়। তবু ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের রাজপথ ভেঙ্গে নেমেছিল জনতার ঢল। বিশাল রেসকোর্স ময়দানের (পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, একাংশে স্থাপিত হয়েছে শিশু পার্ক। ৯৭-এর স্বাধীনতা দিবসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই উদ্যানের একাংশে স্থাপন করেন শিখা চিরনত্মন) কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সেদিন শ্বাসরম্নদ্ধকর অপোর প্রহর ভেদ করে অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধু ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন তা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
বস্তুত ৭ মার্চের ভাষণের পর দেশের সাধারণ কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর থেকে গাঁয়ের গৃহবধূর মুখে মুখেও তখন বলাবলি হচ্ছিল, বাংলাদেশ আর পাকিসত্মানের সঙ্গে থাকছে না। যে কোন মুহূর্তে প্রত্য যুদ্ধ শুরম্ন হয়ে যেতে পারে। যেসব বাঙালী সামরিক কর্মকতর্া ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং অস্ত্র তুলে নেবার আহ্বান মনে করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক, (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চেই যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তা উলেস্নখ করে জিয়াউর রহমান লিখেছেন, "এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরিস্থিতির দ্রম্নত অবনতি ঘটছিল। সামরিক বাহিনীর অন্যান্য বাঙালী অফিসাররা অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাদের সবার মনে একটি চিনত্মাই পাক খেয়ে ফিরছিল কি করা যায়? কি করবো? ...এরপর এলো ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন। বললেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হও। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসাররা একে অস্ত্র তুলে নেবার আহ্বান বলেই মনে করলেন।" ('একটি জাতির জন্ম' জিয়াউর রহমান, দৈনিক বাংলা, ২৬ মার্চ, ১৯৭২)।
মুক্তিযুদ্ধের আর এক সেক্টর কমান্ডার পাক বাহিনীর বিরম্নদ্ধে চট্টগ্রামে প্রথম প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী ইপিআর কমান্ডার, মেজর রফিকুল ইসলাম (পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেন, "সমসত্ম পূর্ব পাকিসত্মানে বিােভ মিছিল, হরতাল চলছে এবং ঘোষণা করা হয়েছে ৭ মার্চ রেসকোর্স এর মাঠে বঙ্গবন্ধু গুরম্নত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। আমরা অপোয় আছি যে সে ঘোষণায় তিনি কী দিক নির্দেশনা দেন।... সেদিন আমার অনুভব হয়েছিল, তাঁর ভাষণে আমাদের প্রত্যেকের জন্য শুধু নয়, সামরিক বাহিনীর প্রতিটি বাঙালির জন্য কী করণীয় তিনি সে নির্দেশে সুস্পষ্টভাবে সে ভাষণে দিয়েছিলেন। (চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় দেয়া বক্তৃতা-১৯৯৪ সালে)
সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেন, বঙ্গবন্ধু কেন সেদিন (৭ মার্চ) স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি? যদি তিনি তা করতেন তাহলে আজ এত লোকের জীবন দিতে হতো না ৯ মাসের যুদ্ধে। আসলে রেসকোর্সের সেই সমুদ্রের কিংবা তারও কয়েকদিন আগে থেকেই ছাত্র-জনতার অনেকের ধারণা এবং আকাঙ্া ছিল ওই জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। কিন্তু সে রকম করলে তাৎণিক বিশ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি সংশিস্নষ্টরা মাথায় রাখেন বলে মনে হয় না। তখনও বিশ্বের অন্যতম প্রধান সুপার পাওয়ারের অধিকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শক্তি চীন পাকিসত্মান সরকারের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা মানেই হলো যুদ্ধ ঘোষণা। কিন্তু এই যুদ্ধ শুরম্ন হলে তা দীর্ঘায়িত বা স্বল্পকালীন হওয়ার বিষয়টি আনত্মর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভ ও বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের মৈত্রী চুক্তি তখনও সম্পাদিত হয়নি। এমনই এক পরিস্থিতিতে ৭ মার্চ সকালে পাকিসত্মানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্বল্পকালীন একানত্ম বৈঠকে বসে জানিয়ে দেন যে, 'পূর্ব বাংলার স্বঘোষিত স্বাধীনতা হলে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করবে না।' এর আগে ৬ মার্চ চরম কোন সিদ্ধানত্ম ঘোষণা না করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন, "আমার অনুরোধ তাড়াতাড়ি কোনো সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করবেন না। আমি শিগগিরই ঢাকা এসে আপনার সঙ্গে বিসত্মারিত আলাপ করব। আমি আশ্বাস দিতে পারি যে, জনগণের কাছে আপনার প্রদত্ত ওয়াদা পালিত হতে পারে।" (বাংলাদেশের তারিখ : মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পৃষ্ঠা ৩৮)। এমন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কী সিদ্ধানত্ম নিতে পারতেন? জানা যাক খ্যাতনামা আইনজীবী, বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের একটি বিশেস্নষণের উদ্ধৃতি থেকে : "এটা পরিষ্কার ছিল যে, ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ এবং রাজনীতি সচেতন ব্যাপক জনগণের কাছে স্বাধীনতার চেয়ে কম কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এেেত্র দায়িত্বের ভার ছিল শেখ মুজিব ও তাঁর দলের ওপর ন্যসত্ম। ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার সার্বিক ফলাফল তাই সতর্কভাবে বিবেচনা করে দেখার প্রয়োজন ছিল। একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার অর্থ দাঁড়াত সামরিক বাহিনীকে তার সকল শক্তি নিয়ে সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়তে প্ররোচিত করা। এতে তারা যে শক্তি প্রয়োগের ছুতো খুঁজে পেতো তাই নয়, বল প্রয়োগে তাদের ইচ্ছে চরিতার্থ করতে তারা সব কিছুর ওপর সকল উপায়ে আঘাত হানত। কোনো নিরস্ত্র জনগোষ্ঠী কি ওই ধরনের হামলার আঘাত সহ্য করে বিজয়ী হতে পারে? বহির্বিশ্বে এর প্রতিক্রিয়াই বা কী দাঁড়াবে? অন্যান্য দেশের সরকারগুলো কি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে? একটি সুসংগঠিত সামরিক আক্রমণের বিরম্নদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার আনত্মর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য যতদিন প্রয়োজন ততদিন টিকে থাকতে পারবে তো? অজস্র প্রশ্নের মধ্যে এগুলো ছিল কয়েকটি যা অত্যনত্ম সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা হলো। বৈঠকে শেখ মুজিব বিভিন্ন মত শুনলেন, তবে নিজের অভিমত সংরতি রাখলেন।" কাজেই চূড়ানত্ম ল্য হলো 'স্বাধীনতা'। কিন্তু শেখ মুজিব কেবল একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত রইলেন। কেননা, এটা পরিষ্কার ছিল যে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং নগরীর গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে তারা অবস্থানও নিয়ে ফেলেছে যাতে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়া হলে তৎণাৎ তারা আক্রমণ শুরম্ন করতে পারে।
উলেস্নখ করা প্রয়োজন যে, পূর্ববর্তী মধ্যরাতে (৬ মার্চ) ইয়াহিয়ার একটি বার্তা নিয়ে একজন ব্রিগেডিয়ার এসেছিলেন দেখা করতে। বার্তায় বলা হয়েছিল, ইয়াহিয়া খুব শিগগিরই ঢাকায় আসার ইচ্ছা রাখেন এবং এমন একটি মীমাংসায় পেঁৗছার আশা করছেন যা বাঙালীদের সন্তুষ্ট করবে। এটা ছিল এক চাতুর্যপূর্ণ যোগাযোগ... এটাকে তাঁর (ইয়াহিয়ার) জন্য একটা অজুহাত তৈরির চেষ্টা হিসেবেও দেখা হলো এভাবে যে, যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয় তাহলে ইয়াহিয়া সারা পৃথিবীকে বলতে পারবে যে, একটি শানত্মিপূর্ণ মীমাংসায় পেঁৗছার জন্য তিনি ঢাকায় যাওয়ার প্রসত্মাব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবই একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শক্তি প্রয়োগে বাধ্য করেছেন। ৭ মার্চ একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া থেকে শেখ মুজিবের বিরত থাকার েেত্র এটাও ছিল বিবেচনার আর একটি বিষয়। (ড. কামাল হোসেন: মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল : পৃষ্ঠা ৬১-৬৩-৬৪)।
সুতরাং যাঁরা বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা যুদ্ধ ঘোষণা না করে ভুল করেছিলেন তাঁদের জন্য লেখক, রাজনীতিবিদ প্রয়াত আবুল মনসুর আহমদের একটি অভিমত উপস্থাপন করে এ লেখার ইতি টানব। তিনি লিখেছেন, "আমি যেমন মনে করি ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব ভুল করিয়াছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পরিষদ ডাকার ব্যাপারে সুযোগ গ্রহণ না করিয়া, তেমনি এক শ্রেণীর লোক আছেন যারা মনে করেন ৭ মার্চে শেখ মুজিব ভুল করিয়াছেন ঐদিন স্বাধীনতা ঘোষণা না করিয়া। এদের কেউ কেউ কাগজে-কলমে সে কথা বলিয়াছেন, অনেকে আমার সাথে তর্কও করিয়াছেন। তাদের মত এই যে, শেখ মুজিব যদি ৭ মার্চ ঘোড়দৌড় ময়দানে ২৫ লাখ লোকের সমাবেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া গভর্নর হাউস, রেডিও স্টেশন ও ক্যান্টনমেন্ট দখল করিতে অগ্রসর হইতেন, তবে একরূপ বিনা রক্তপাতে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করিতে পারিতেন। তাতে পরবর্তীকালে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ও ৯ মাসের যুদ্ধ, তাতে ভারতের সাহায্য এসবের কিছুরই দরকার হইত না। এই মতের আমি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আমার ুদ্র বিবেচনায় এই ধরনের কথা যারা বলেন অথবা চিনত্মা করেন যারা, তাদের রাজনীতি বা সমরনীতির কোন অভিজ্ঞতা নাই। তারা বড়জোর থিউরিস্ট মাত্র। ৭ মার্চের ভাষণের সময় স্বাধীনতার ঘোষণাটা না করিয়া মুজিব কত বড় দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়াছিলেন, সেটা বুঝিবার মত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ঐসব থিউরিস্টের নাই, এ সম্পর্কে অনেক কথাই বলা যায়। সেসব কথার মতামতের দুইটা দিক আছে। ৭ মার্চ শেখ মুজিবের সামনে দুই দিকের সমান উপস্থিতি ছিল। (এক). যুক্তির দিক (দুই). বাসত্মব দিক। সংেেপ এই দুইটা দিক সম্বন্ধে বলা চলে কোন দিক হইতে ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা সমীচীন হইত না। যুক্তির দিক থেকে হইত না এই জন্য যে, প্রেসিডেন্টের প েবেআইনিভাবে পরিষদের বৈঠক বাতিল করাটাই স্বাধীনতার ঘোষণার প েযথেষ্ট কারণ ছিল না। আর বাসত্মবতার দিক হইতে সেটা সমীচীন হইত না এজন্য যে, তাতে সভায় সমবেত ২০ লাখ নিরস্ত্র জনতাকে সুসজ্জিত বাহিনীর গুলির মুখে ঠেলিয়া দেওয়া হইত। তাতে নিরস্ত্র জনতাকে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকা-ের চেয়েও বহুগুণ নিষ্ঠুরতম হত্যাকা-ের শিকার বানানো হইত।
হত্যাকা- বাদেও যেসব নেতা বাঁচিয়া থাকিতেন তাহাদের গ্রেপ্তার করা হইত, বিচারও একটা হইত। আরও জানা কথা, স্বাধীনতা বা অটোনমির আন্দোলন বহুদিনের জন্য চাপা পড়িত। পূর্ব পাকিসত্মান বা বাংলাদেশের জন্য সেটা হইত অনেক গুরম্নতর লোকসান। অতএব ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা না করিয়া শেখ বিজ্ঞ জননেতার কাজ অবশ্যই করিয়াছেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে।"
লেখক : সাংবাদিক
কথা ছিল ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। কিন্তু ১ মার্চ পাকিসত্মানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় ৩ মার্চের প্রসত্মাবিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বাংলার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল এবং ৭ মার্চ রেসকোর্সে জনসভার কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ওই দিনই (১ মার্চ) ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির অনির্ধারিত বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু অপেমাণ সাংবাদিকদের জানান, "আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম এবং সাত কোটি বাঙালির মুক্তির জন্য আমি চরম মূল্য দিতে প্রস্তুত রয়েছি। ষড়যন্ত্রকারীদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে আমরা নতুন ইতিহাস রচনা করবো।" বস্তুত 'নতুন ইতিহাস রচনা করবো' কথাগুলোর দ্বারা বঙ্গবন্ধু পরোভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
এদিকে ৩ মার্চ থেকে চলে আসছিল দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এলো ৭ মার্চ। এখনকার মতো আধুনিক মোবাইল যোগাযোগ, শ' শ' সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে তাৎণিক কর্মসূচী ঘোষণার সহজ কোন পদ্ধতি ছিল না সে সময়। তবু ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের রাজপথ ভেঙ্গে নেমেছিল জনতার ঢল। বিশাল রেসকোর্স ময়দানের (পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, একাংশে স্থাপিত হয়েছে শিশু পার্ক। ৯৭-এর স্বাধীনতা দিবসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই উদ্যানের একাংশে স্থাপন করেন শিখা চিরনত্মন) কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সেদিন শ্বাসরম্নদ্ধকর অপোর প্রহর ভেদ করে অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধু ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন তা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
বস্তুত ৭ মার্চের ভাষণের পর দেশের সাধারণ কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর থেকে গাঁয়ের গৃহবধূর মুখে মুখেও তখন বলাবলি হচ্ছিল, বাংলাদেশ আর পাকিসত্মানের সঙ্গে থাকছে না। যে কোন মুহূর্তে প্রত্য যুদ্ধ শুরম্ন হয়ে যেতে পারে। যেসব বাঙালী সামরিক কর্মকতর্া ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং অস্ত্র তুলে নেবার আহ্বান মনে করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক, (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চেই যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তা উলেস্নখ করে জিয়াউর রহমান লিখেছেন, "এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরিস্থিতির দ্রম্নত অবনতি ঘটছিল। সামরিক বাহিনীর অন্যান্য বাঙালী অফিসাররা অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাদের সবার মনে একটি চিনত্মাই পাক খেয়ে ফিরছিল কি করা যায়? কি করবো? ...এরপর এলো ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন। বললেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হও। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসাররা একে অস্ত্র তুলে নেবার আহ্বান বলেই মনে করলেন।" ('একটি জাতির জন্ম' জিয়াউর রহমান, দৈনিক বাংলা, ২৬ মার্চ, ১৯৭২)।
মুক্তিযুদ্ধের আর এক সেক্টর কমান্ডার পাক বাহিনীর বিরম্নদ্ধে চট্টগ্রামে প্রথম প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী ইপিআর কমান্ডার, মেজর রফিকুল ইসলাম (পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেন, "সমসত্ম পূর্ব পাকিসত্মানে বিােভ মিছিল, হরতাল চলছে এবং ঘোষণা করা হয়েছে ৭ মার্চ রেসকোর্স এর মাঠে বঙ্গবন্ধু গুরম্নত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। আমরা অপোয় আছি যে সে ঘোষণায় তিনি কী দিক নির্দেশনা দেন।... সেদিন আমার অনুভব হয়েছিল, তাঁর ভাষণে আমাদের প্রত্যেকের জন্য শুধু নয়, সামরিক বাহিনীর প্রতিটি বাঙালির জন্য কী করণীয় তিনি সে নির্দেশে সুস্পষ্টভাবে সে ভাষণে দিয়েছিলেন। (চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় দেয়া বক্তৃতা-১৯৯৪ সালে)
সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেন, বঙ্গবন্ধু কেন সেদিন (৭ মার্চ) স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি? যদি তিনি তা করতেন তাহলে আজ এত লোকের জীবন দিতে হতো না ৯ মাসের যুদ্ধে। আসলে রেসকোর্সের সেই সমুদ্রের কিংবা তারও কয়েকদিন আগে থেকেই ছাত্র-জনতার অনেকের ধারণা এবং আকাঙ্া ছিল ওই জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। কিন্তু সে রকম করলে তাৎণিক বিশ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি সংশিস্নষ্টরা মাথায় রাখেন বলে মনে হয় না। তখনও বিশ্বের অন্যতম প্রধান সুপার পাওয়ারের অধিকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শক্তি চীন পাকিসত্মান সরকারের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা মানেই হলো যুদ্ধ ঘোষণা। কিন্তু এই যুদ্ধ শুরম্ন হলে তা দীর্ঘায়িত বা স্বল্পকালীন হওয়ার বিষয়টি আনত্মর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভ ও বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের মৈত্রী চুক্তি তখনও সম্পাদিত হয়নি। এমনই এক পরিস্থিতিতে ৭ মার্চ সকালে পাকিসত্মানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্বল্পকালীন একানত্ম বৈঠকে বসে জানিয়ে দেন যে, 'পূর্ব বাংলার স্বঘোষিত স্বাধীনতা হলে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করবে না।' এর আগে ৬ মার্চ চরম কোন সিদ্ধানত্ম ঘোষণা না করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন, "আমার অনুরোধ তাড়াতাড়ি কোনো সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করবেন না। আমি শিগগিরই ঢাকা এসে আপনার সঙ্গে বিসত্মারিত আলাপ করব। আমি আশ্বাস দিতে পারি যে, জনগণের কাছে আপনার প্রদত্ত ওয়াদা পালিত হতে পারে।" (বাংলাদেশের তারিখ : মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পৃষ্ঠা ৩৮)। এমন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কী সিদ্ধানত্ম নিতে পারতেন? জানা যাক খ্যাতনামা আইনজীবী, বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের একটি বিশেস্নষণের উদ্ধৃতি থেকে : "এটা পরিষ্কার ছিল যে, ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ এবং রাজনীতি সচেতন ব্যাপক জনগণের কাছে স্বাধীনতার চেয়ে কম কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এেেত্র দায়িত্বের ভার ছিল শেখ মুজিব ও তাঁর দলের ওপর ন্যসত্ম। ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার সার্বিক ফলাফল তাই সতর্কভাবে বিবেচনা করে দেখার প্রয়োজন ছিল। একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার অর্থ দাঁড়াত সামরিক বাহিনীকে তার সকল শক্তি নিয়ে সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়তে প্ররোচিত করা। এতে তারা যে শক্তি প্রয়োগের ছুতো খুঁজে পেতো তাই নয়, বল প্রয়োগে তাদের ইচ্ছে চরিতার্থ করতে তারা সব কিছুর ওপর সকল উপায়ে আঘাত হানত। কোনো নিরস্ত্র জনগোষ্ঠী কি ওই ধরনের হামলার আঘাত সহ্য করে বিজয়ী হতে পারে? বহির্বিশ্বে এর প্রতিক্রিয়াই বা কী দাঁড়াবে? অন্যান্য দেশের সরকারগুলো কি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে? একটি সুসংগঠিত সামরিক আক্রমণের বিরম্নদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার আনত্মর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য যতদিন প্রয়োজন ততদিন টিকে থাকতে পারবে তো? অজস্র প্রশ্নের মধ্যে এগুলো ছিল কয়েকটি যা অত্যনত্ম সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা হলো। বৈঠকে শেখ মুজিব বিভিন্ন মত শুনলেন, তবে নিজের অভিমত সংরতি রাখলেন।" কাজেই চূড়ানত্ম ল্য হলো 'স্বাধীনতা'। কিন্তু শেখ মুজিব কেবল একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত রইলেন। কেননা, এটা পরিষ্কার ছিল যে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং নগরীর গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে তারা অবস্থানও নিয়ে ফেলেছে যাতে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়া হলে তৎণাৎ তারা আক্রমণ শুরম্ন করতে পারে।
উলেস্নখ করা প্রয়োজন যে, পূর্ববর্তী মধ্যরাতে (৬ মার্চ) ইয়াহিয়ার একটি বার্তা নিয়ে একজন ব্রিগেডিয়ার এসেছিলেন দেখা করতে। বার্তায় বলা হয়েছিল, ইয়াহিয়া খুব শিগগিরই ঢাকায় আসার ইচ্ছা রাখেন এবং এমন একটি মীমাংসায় পেঁৗছার আশা করছেন যা বাঙালীদের সন্তুষ্ট করবে। এটা ছিল এক চাতুর্যপূর্ণ যোগাযোগ... এটাকে তাঁর (ইয়াহিয়ার) জন্য একটা অজুহাত তৈরির চেষ্টা হিসেবেও দেখা হলো এভাবে যে, যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয় তাহলে ইয়াহিয়া সারা পৃথিবীকে বলতে পারবে যে, একটি শানত্মিপূর্ণ মীমাংসায় পেঁৗছার জন্য তিনি ঢাকায় যাওয়ার প্রসত্মাব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবই একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শক্তি প্রয়োগে বাধ্য করেছেন। ৭ মার্চ একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া থেকে শেখ মুজিবের বিরত থাকার েেত্র এটাও ছিল বিবেচনার আর একটি বিষয়। (ড. কামাল হোসেন: মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল : পৃষ্ঠা ৬১-৬৩-৬৪)।
সুতরাং যাঁরা বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা যুদ্ধ ঘোষণা না করে ভুল করেছিলেন তাঁদের জন্য লেখক, রাজনীতিবিদ প্রয়াত আবুল মনসুর আহমদের একটি অভিমত উপস্থাপন করে এ লেখার ইতি টানব। তিনি লিখেছেন, "আমি যেমন মনে করি ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব ভুল করিয়াছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পরিষদ ডাকার ব্যাপারে সুযোগ গ্রহণ না করিয়া, তেমনি এক শ্রেণীর লোক আছেন যারা মনে করেন ৭ মার্চে শেখ মুজিব ভুল করিয়াছেন ঐদিন স্বাধীনতা ঘোষণা না করিয়া। এদের কেউ কেউ কাগজে-কলমে সে কথা বলিয়াছেন, অনেকে আমার সাথে তর্কও করিয়াছেন। তাদের মত এই যে, শেখ মুজিব যদি ৭ মার্চ ঘোড়দৌড় ময়দানে ২৫ লাখ লোকের সমাবেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া গভর্নর হাউস, রেডিও স্টেশন ও ক্যান্টনমেন্ট দখল করিতে অগ্রসর হইতেন, তবে একরূপ বিনা রক্তপাতে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করিতে পারিতেন। তাতে পরবর্তীকালে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ও ৯ মাসের যুদ্ধ, তাতে ভারতের সাহায্য এসবের কিছুরই দরকার হইত না। এই মতের আমি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আমার ুদ্র বিবেচনায় এই ধরনের কথা যারা বলেন অথবা চিনত্মা করেন যারা, তাদের রাজনীতি বা সমরনীতির কোন অভিজ্ঞতা নাই। তারা বড়জোর থিউরিস্ট মাত্র। ৭ মার্চের ভাষণের সময় স্বাধীনতার ঘোষণাটা না করিয়া মুজিব কত বড় দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়াছিলেন, সেটা বুঝিবার মত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ঐসব থিউরিস্টের নাই, এ সম্পর্কে অনেক কথাই বলা যায়। সেসব কথার মতামতের দুইটা দিক আছে। ৭ মার্চ শেখ মুজিবের সামনে দুই দিকের সমান উপস্থিতি ছিল। (এক). যুক্তির দিক (দুই). বাসত্মব দিক। সংেেপ এই দুইটা দিক সম্বন্ধে বলা চলে কোন দিক হইতে ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা সমীচীন হইত না। যুক্তির দিক থেকে হইত না এই জন্য যে, প্রেসিডেন্টের প েবেআইনিভাবে পরিষদের বৈঠক বাতিল করাটাই স্বাধীনতার ঘোষণার প েযথেষ্ট কারণ ছিল না। আর বাসত্মবতার দিক হইতে সেটা সমীচীন হইত না এজন্য যে, তাতে সভায় সমবেত ২০ লাখ নিরস্ত্র জনতাকে সুসজ্জিত বাহিনীর গুলির মুখে ঠেলিয়া দেওয়া হইত। তাতে নিরস্ত্র জনতাকে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকা-ের চেয়েও বহুগুণ নিষ্ঠুরতম হত্যাকা-ের শিকার বানানো হইত।
হত্যাকা- বাদেও যেসব নেতা বাঁচিয়া থাকিতেন তাহাদের গ্রেপ্তার করা হইত, বিচারও একটা হইত। আরও জানা কথা, স্বাধীনতা বা অটোনমির আন্দোলন বহুদিনের জন্য চাপা পড়িত। পূর্ব পাকিসত্মান বা বাংলাদেশের জন্য সেটা হইত অনেক গুরম্নতর লোকসান। অতএব ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা না করিয়া শেখ বিজ্ঞ জননেতার কাজ অবশ্যই করিয়াছেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে।"
লেখক : সাংবাদিক
No comments