মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সরাসরি রেল ও সড়ক যোগাযোগের তাগিদ- 'চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে চাই' ॥ কুনমিংয়ে উষ্ণ সংবর্ধনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, ইউনান প্রদেশের নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে পারেন।
তিনি বলেন, তিন দেশের জনগণের কল্যাণে এই যোগাযোগ স্থাপন দরকার। প্রধানমন্ত্রী শনিবার এখানে তাঁর সম্মানে ইউনান প্রদেশের ভাইস গবর্নর লি জিং-এর দেয়া নৈশভোজে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ভোজসভায় ভাইস গবর্নর লি জিংও বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউনান প্রদেশ হলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার। ইউনান প্রদেশসহ চীনের সর্বত্র যে বিপুল অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা তাঁকে মুগ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে আমরা ইউনান প্রদেশের কর্মকাণ্ড থেকে আরও বেশি শিক্ষা নিতে পারব।'
অনুষ্ঠানে ভাইস গবর্নর প্রধানমন্ত্রীকে ইউনান প্রদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নানা উপহারসামগ্রী প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁকে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী তুলে দেন। আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য ভাইস গবর্নরকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'ইউনান প্রদেশ কৃষি, বনজ ও খনিজসম্পদের দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ। আজ স্বচক্ষে দেখেছি এখানকার মানুষ মনের দিক থেকেও কত সম্পদশালী। এ প্রদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যেমন অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছে, তেমনি আমাদের বাংলাদেশেও বিভিন্ন জাতি, উপজাতি ও ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে।'
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীন ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশ। চীন আমাদের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। দৰিণ এশীয় দেশসমূহ ও চীনের মধ্যে ব্যবসায়িক ফোরাম গঠিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ফোরাম এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কুনমিং শহর দক্ষিণ এশীয় পণ্যের মেলায় পরিণত হবে, যার মাধ্যমে ইউনান প্রদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
বর্তমানে ইউনান প্রদেশে যে খরা চলছে সরকার তা মোকাবেলায় সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ভাইস গবর্নর লি জিং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শনিবার দুপুরে চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের উপজাতীয় গ্রামে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা ২৫টি উপজাতীয় জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ গ্রামে এসে পৌঁছলে শিশু-কিশোরসহ কয়েক শ' উপজাতীয় সদস্য ঐতিহ্যবাহী বর্ণিল পোশাক পরে নেচে-গেয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রীকে একটি বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত গাড়িবহর সহকারে নগরীর একটি থিম পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর সামনে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। থিম পার্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মানের নিদর্শন হিসেবে উপজাতীয় বালিকারা তাঁকে তাদের ঐতিহ্যবাহী মুকুট পরিয়ে দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীকে নগরীর একটি মসজিদ ও একটি বৌদ্ধ মন্দির দেখানো হয়।
এরপর উপজাতীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। তিনি অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। পরে তিনি পুষ্প নগরী আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র পরিদর্শন এবং পুষ্প শিল্প সংক্রান্ত একটি ভিডিও কিপ প্রত্যক্ষ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পাবর্ত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, এ্যাম্বাসেডর এ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, বীর বাহাদুর এমপি ও জ্যোতিন্দ্র লাল ত্রিপুরা এবং প্রধানমন্ত্রীর অন্য সফরসঙ্গীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পাঁচ দিনব্যাপী সরকারী চীন সফরের শেষ দিকে শনিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় বেজিং থেকে কুনমিং পেঁৗছেন।

No comments

Powered by Blogger.