স্বপ্ন by সাইফ মাহমুদ সুজন

নাহিন, বয়স কত হবে বড়জোর আট, শানত্মশিষ্ট ছেলেটি হঠাৎ পাল্টে গেছে। কোন কিছুতেই তার মন বসতে চায় না। মনে হাজারও প্রশ্ন, কেন মন্টুকে চলে যেত হলো।
ওরাও তো মানুষ। ওদেরও তো লেখাপড়া শেখার অধিকার রয়েছে। বড়রা কত ভাল ভাল কথাই না বলেন, সব মানুষ সমান। সবার শিৰার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাসত্মবে সব উল্টো। নাহিনের খেলার সাথী হিসেবে ভালই কাটছিল মন্টুর দিনকাল। কাজের ছেলে হলেও নাহিনের সঙ্গেই কাটত তার বেশিরভাগ সময়। নাহিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা। বাসায় ফিরে নাহিনের প্রতি সারাৰণ খেয়াল রাখা। মাঝে মধ্যে নাহিনের মা-বাবা ওকে দোকানে পাঠাত। ছেলেটি ছিল খুবই সৎ। অল্পদিনেই সে বাড়ির সবার মন জয় করে নেয়। বড়িতে নাহিনের আর তার বাবা-মা, দু'জনই চাকরিজীবী হওয়ায় নাহিনের দেখাশোনার সব দায়িত্ব থাকে গৃহকর্মী মন্টু। ১১ বছরের মন্টুকে নাহিনের বাবা গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন। মন্টুর বাবা-মা খুবই গরিব। পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে ঠিকমতো খেতেই পায় না। সনত্মানকে পড়াবে কীভাবে। তাই ঢাকায় বড় ছেলে মন্টুকে কাজে দিতে পেরে মনে মনে খুশিই হয় ওর বাবা-মা। অনত্মত পেটপুরে খেতে তো পারবে। উপরন্তু বড় হলে একটা পিয়ন-দাড়োয়ানের কাজও জুটে যেতে পারে। ঢাকার মগবাজারে থাকে নাহিনরা। মন্টুকে পেয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় নাহিন। এত দিন পর ওর একজন সঙ্গী জুটেছে। স্কুল থেকে আসার পর নাহিন ওর সঙ্গে খেলে। দিনে দিনে ওর ঘনিষ্ঠতম সহচরে পরিণত হয় মন্টু। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নাহিন মন্টুকে অ, আ, ক, খ পড়ায়। অল্পদিনেই সে বাংলা বর্ণমালা শিখে ফেলে। সবকিছু ঠিকমত চলছিল। কিন্তু বিধিবাম। একদিনের ঘটনায় সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায়। সেদিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সকালে ঘর ঝাড়ু দেয়া শেষ হলে মন্টুকে ১ থেকে ১০০ পর্যনত্ম পড়তে দেয় নাহিন। মনযোগ দিয়ে পড়তে থাকে সে। পাশে বসে নাহিন নিজের পড়া শেখে। কিছুৰণ আগে নাহিনের মা মন্টুকে দোকানে যাওয়ার জন্য বলে যায়। কিন্তু মনযোগ দিয়ে পড়তে থাকায় মন্টু বেমালুম ভুলে যায় সে কথা। এক ঘণ্টা পর এসে নাহিনের মা জিজ্ঞেস করেন, এই তোকে দোকান থেকে সাবান আনতে বলছিলাম না। এনেছিস? মন্টু চুপ করে থাকে। রেগে আগুন হয়ে যায় নাহিনের মা। জোরে চড় কষিয়ে দেন মন্টুর গালে। তারপর নাহিনের স্কেল দিয়ে পিঠে মারতে থাকে। এখানেই অঘটন শুরম্ন। মন্টু চলে যায় ওই বাড়ি ছেড়ে। নাহিনের আর পড়ায় মন বসে না। সারাৰণ মনমরা হয়ে থাকে, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না। যা খেতে দেয়া হোক, বলবে খেতে ইচ্ছা করে না। বাসায় কারও সঙ্গে কথা বলে না। শুধু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। মাস খানেক হলো ব্যাপারটি চোখে পড়ে নাহিনের মা-বাবার। ওকে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কিছুই ধরা পড়ে না, পরে যাওয়া হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। তিনি নাহিনের মা-বাবাকে পরামর্শ দেন ছেলেটির মন বোঝার চেষ্টা করম্নন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। অগত্যা নাহিনের মা-বাবা ছুটে যান মন্টুর গ্রামে। ফিরিয়ে আনেন ওকে। এরপর নাহিনও আবার আগের মতো স্বাভাবিক আচরণ শুরম্ন করে। কেটে যায় মা-বাবার দুশ্চিনত্মা। মন্টুর জন্য নতুন বই কিনে দেয়া হয়। নাহিন মন্টুকে পড়াতে থাকে মন দিয়ে এক দশ এক এগার, এক দশ দুই বার ...। মন্টু ও সুর মেলায় জোরে জোরে। জীবনের সুর পাল্টাতে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরম্ন করে।

দশম শ্রেণী (বিজ্ঞান)
মুসলিম মডার্ন একাডেমী

No comments

Powered by Blogger.