উৎসবমুখর প্রাণের মেলা, বই কেনায় ব্যাপক আগ্রহ- অমর একুশে গ্রন্থমেলা by মোরসালিন মিজান

আবারও সেই জনস্রোত। আবারও উৎসবমুখর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ। লেখক, কবি, সাহিত্যিক সাংবাদিক প্রকাশক সকলেই যোগ দিয়েছেন প্রাণের মেলায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া মেলার নামÑ অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
বিকেলে মাসব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম বইটির ক্রেতাও ছিলেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর যেন ঢল নামে সাধারণ মানুষের। চেনা চেহারায় ফিরে আসে একাডেমী প্রাঙ্গণ।
সন্ধ্যায় মেলা ঘুরে দেখা যায়, বেশ পরিপাটি সবকিছু। চমৎকার করে সাজানো হয়েছে পুরো প্রাঙ্গণ। এখানে ওখানে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আলোকচিত্র। রফিক, শফিক, বরকতদের নামে এবারও আলাদা চত্বর করা হয়েছে। চত্বরগুলো সাজানোও হয়েছে তাঁদের ছবি দিয়ে। মুখগুলোর দিকে তাকালে মন গর্বে ভরে ওঠে। মায়ের ভাষা বাংলার জন্য এরাই যে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল ১৯৫২ সালে! সেই চেতনার রঙে রঙিন আজকের বইমেলা।
ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে, এবারের মেলা কেবলই প্রকাশকদের। মেলায় ঢোকা মাত্র সেটি বোঝা যায়। প্রায় সকলেই স্টল সাজানোর কাজ শেষ করেছেন। নতুন নতুন বই দেখাতে ব্যস্ত বিক্রয় প্রতিনিধিরা। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিন বিক্রিও হয়েছে ভাল। হাতে বই নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখার পাশাপাশি অনেকে কিনেছেন। বাকিরা চারপাশ ঘুরে মেলার চেহারাটা বোঝার চেষ্টা করেছেন। আড্ডা জমিয়েছেন।
তবে বই বিক্রির আলোচনায় বার বারই আসছিল হুমায়ূন আহমেদের কথা। এই লেখকের পুরনো বইগুলোও নতুনের মতোই বিক্রি হয়েছে। মেলা এবার উৎসর্গও করা হয়েছে প্রয়াত এই লেখকের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
তবে একইসঙ্গে সত্য যে, মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্যটি একবারের জন্যও কেউ তুলে ধরেননি। কারও আলোচনায় উঠে আসেনি লেখকের কথা। ফলে হুমায়ূন ভক্তরা দারুণ আহত হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বাংলা একাডেমীর অসচেতনতার কারণেই এমনটি হয়েছে।
নতুন বই ॥ মেলার প্রথম দিন অনেক নতুন বই এসেছে। তবে সংখ্যায় কত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একাডেমী এ তথ্য দিতে পারেনি। তবে বিভিন্ন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিন মেলায় এসেছে অর্ধশতাধিক নতুন বই। এগুলোর মধ্যে অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘ভ্রমনসমগ্র’, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্পাদিত ‘হুমায়ূন আহমেদ স্মারকগ্রন্থ’ ও হুমায়ূন আহমেদের দু’টি বইয়ের ইংরেজী সংস্করণ। এ্যাডর্ন এনেছে নতুন চারটি বই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শামসুল আলম সাঈদের ‘চর্যাপদ : তাত্ত্বিক সমীক্ষা’ ও শিরিন আখতারের ‘নারী রাজনীতি ও রাষ্ট্র।’ শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্পাদিত গবেষণাগ্রন্থ ‘মোতাহের হোসেন চৌধুরী’, আল মাহমুদের ‘সনেটসমগ্র’, সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘যদি পাই পুনরাবৃত্তি।’ আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে তসলিমা নাসরিনের ‘নারীর কোন দেশ নেই’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ‘ইউটোপিয়া’ ও সৈয়দ আবুল মকসুদের ‘ভাসানী কাহিনী।’ অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকেও কম বেশি নতুন বই মেলায় এসেছে।
মেলা মঞ্চের আজকের আয়োজন
আজ শনিবার মেলার মূল মঞ্চে থাকছে ‘অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনাসভা। এতে ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন খোন্দকার ইব্রাহিদ খালেদ। আলোচনা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিন, বর্তমান গবর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ ও প্রাবন্ধিক মাসুদা ভাট্টি।

No comments

Powered by Blogger.