খালেদা জিয়ার চিঠি ॥ ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে নিজ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা by মুনতাসীর মামুন

খালেদা জিয়ার কিছু কিছু বিষয়ের সঙ্গে, দেখেছি আমারও কিছু সমস্যার মিল আছে। আমি বানানটানান করে ইংরেজী কিছুটা পড়তে পারি, সব যে বুঝি তা নয়। খালেদার অবস্থাও অনুরূপ।
বেগম জিয়া ইয়েস নো ভেরি গুড বলে চালিয়ে দিতে পারেন, আমার অবস্থাও সে রকম। আমার সঙ্গে কেউ ইংরেজী বললে কিছু বুঝি বাকিটা হাসি দিয়ে কভার করি। খালেদার অবস্থাও সে রকম। আমরা দু’জনই ইংরেজী লেখায় কিন্তু লবডংকা। সে জন্য আমি নিশ্চিত হয়েছি খালেদা জিয়ার যে নিবন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে তা তার লেখা নয়। কেউ লিখে দিয়েছেন। সেটি স্বাভাবিক। নেতারা কেউ লেখেন না, অন্যরা লিখে দেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি এটি লিখে দিয়েছেন তিনি কি সেটি অনুবাদ করে শুনিয়েছিলেন খালেদাকে, বা পড়তে দিয়েছিলেন তাকে? কেননা, সুস্থ মস্তিষ্কের কোন জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এরকম কিছু লিখে হারিকিরি কেন করবেন তা বোধগম্য নয়। আর যদি বুঝে ‘লিখে’ থাকেন তা’হলে বুঝতে হবে, তার হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা নিরাপদ নয়। যদি ইংরেজী পুরোপুরি না বুঝিয়ে কেউ কাজটি করে থাকেন তা’হলে বুঝতে হবে তিনি আওয়ামী লীগের টাকা খেয়েছেন। বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে ডোবানোর জন্য স্যাবোটাজ করেছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের হাসিমুখের মন্তব্য শুনে শুনে অনেকের ধারণা কাজটি হয়ত তিনিই করলেন! কারণ এর আগে অনেকবার এ ধরনের কাজ করার খ্যাতি তার আছে।
কেউ কেউ বলছেন, যা ছাপা হয়েছে তা চিঠি আকারে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ। প্রথমে শুনেছিলাম ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপা হয়েছে। কয়েকটি চ্যানেলে তা বলাও হলো। মনে হলো, ওয়াশিংটন পোস্ট রক্ষণশীল, ইসরায়েল সমর্থক; সেখানে খালেদা লিখবেন? আর লেখা পাঠালেই কি তারা ছাপবে? ছাপলে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপতে হবে? সে পয়সা কে দিল? পরে মনে হলো, মানি লন্ডারিংয়ে তো তারা খ্যাত। সুতরাং ডলার কম হওয়ার কথা নয়। পরে শুনলাম, না, তা ছাপা হয়েছে ওয়াশিংটন টাইমসে। ওয়াশিংটনে এর পুরনো গুদাম সদৃশ অফিস চোখে পড়েছে। পত্রিকাটি বিনে পয়সায় সরবরাহ করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। ওয়াশিংটনে আমাদের দূতাবাসেও ফ্রি কপি পায়। পত্রিকাটি রক্ষণশীল বটে, আরববিরোধী, মুসলমানবিরোধী ও ইসরাইল সমর্থনকারী। এর মালিক ইউনিফিকেশন চার্চ আর এ চার্চের মালিক একজন ভ- কোরিয়ান। এ হেন পত্রিকায় ৩০ জানুয়ারি। অনলাইন সংস্করণে ১০টি চিঠি ছাপা হয়েছে যার মধ্যে দশমটি খালেদা জিয়ার। এরকম একটি পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগেও ১০ জনের মধ্যে ১০ম আমাদের জাতীয় নেতা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ওয়াশিংটন টাইমসের মতো একটি পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গিও খালেদা জিয়ার প্রতি এমন। লজ্জাই লাগল দেশ ও আমাদের জন্য। কিন্তু লজ্জা থাকলে নাকি রাজনীতিতে নামতে নেই তার ও বস্তুটির অভাব বিএনপির মধ্যে প্রচ-।
এখানে এ চিঠি নিয়ে বেশ হৈ চৈ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে রাজনীতিবিদরা খালেদাকে দেশদ্রোহী বলছেন। আর বিএনপি মনে করছে এ চিঠির জন্য খালেদা জিয়া নোবেল প্রাইজ পেতে পারেন শান্তির জন্য। খালেদা নোবেল পেলে অবশ্য আর কেউ খুশি না হোক আমি হব। কারণ, এ দেশ দু’টি নোবেল পাবে। তাও শুধু শান্তিতে যেখানে সবাই বলে এটি অশান্তির দেশ।
নোবেল পান আর নাই পান ইতিহাসের ছাত্র এবং রাজনীতি সচেতন হিসেবে এ চিঠি সম্পর্কে আমাকে দু’একটি কথা বলতেই হবে।
প্রথমেই বলি, ছোট এই চিঠিতে একটি ভুল আছে। এটি অবশ্য খালেদার দোষ নয়, তিনি পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী ছিলেন। বাইরের জগত সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। আর বিএনপি যারা করে তাদের অধিকাংশ মানবিকভাবে অভিবাসী, ১৯৭৫ সালের আগের কোন ইতিহাস তাদের কাছে বোধগম্য নয়। চিঠির প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে বিশ্বের যে কটি দেশ প্রথমদিকে স্বীকৃতি দেয়,তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণহত্যা ও গণধর্ষণকে সমর্থন করেছিল, পাকিস্তানের প্রধান সমর্থক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বেগম জিয়া নিশ্চয় তা জানেন; কারণ, তিনি তো পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী ছিলেন। বাংলাদেশকে প্রথমদিকে স্বীকৃতি দেয় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো। যারা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। ইউরোপে প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় খুব সম্ভব পোল্যান্ড। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু ঢাকার মার্কিন দূতাবাসকে বলেন, স্বীকৃতি না দিলে পাততাড়ি গোটাতে। সে পরিপ্রেক্ষিতে এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়। এটি ‘প্রথম দিকে’ হলো কী ভাবে?
খালেদার চিঠির মূল বক্তব্য, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে দেশ গণতন্ত্র হারাচ্ছে, ‘বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম উজ্জ্বল গণতান্ত্রিক দেশের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে দ্রুত একটি পরিবারকেন্দ্রিক ক্ষমতা কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।’ [সমকাল ১.২.২০১৩]
২০০১-২০০৬ সালে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তাঁর পরিবারকেন্দ্রিক শাসন বাংলাদেশে এক দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল যার কারণে সেনাবাহিনীর আগমন ঘটে। তাঁর দু’পুত্রের বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ ছিল না যা উত্থাপিত হয়েছে। উইকিলিকসের ফাঁস করা রিপোর্টে দেখা যায়, তখন মার্কিন দূতকে তিনি অনুনয়-বিনয় করছেন তাঁর পুত্রদ্বয়কে ছেড়ে দিতে। ‘খালেদা জিয়া স্বীকার করেন যে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে তাঁর ওপর চাপ রয়েছে এবং তিনি বলেন, তাঁর উভয় পুত্রকে তার সঙ্গে যেতে দেয়া হলে তিনি দেশ ছাড়তে প্রস্তুত। [তারবার্তা ০৭. ঢাকা ৮৭৫; ৩০ মে, ২০০৭]। হাসিনার পুত্র-কন্যারা কেউ দেশে থাকেন না। খালেদার আমলে তার ভাই ইস্কান্দারকে নিয়েও অনেক অভিযোগ ছিল। এসব আলোচন আছে মার্কিন দলিলপত্রেই।
এ ধরনের মিথ্যাচারের কারণ দুটিÑ এক, বিএনপির মিত্র একাত্তরের খুনী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বন্ধ করা ও দুই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এ দু’টি দাবি আবার পরস্পরযুক্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, বিএনপি বলতে পারবে তাদের দাবি ছিল যৌক্তিক এবং যেহেতু তারা দাবি আদায় করতে পেরেছে সেহেতু তারা ভোট পাওয়ার অধিকারী। মানবতাবিরোধীদের বিচার না হলে এবং জামায়াত নেতাদের মুক্ত করতে পারলে, তাদের ঐক্যবদ্ধ ভোটের কারণে তারা ক্ষমতায় অবশ্যই যাবে।
এ কারণে আমেরিকার যাবতীয় প্রশংসা করা হয়েছে এবং অনুরোধ জানান হয়েছে এ দু’টি দাবি হাসিনা সরকারকে মানাতে যাতে আমেরিকা হুমকি প্রদান করে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে খালেদা মনে করেনÑ ‘এ বিচার নিয়ে হাসিনা সরকার কী ধরনের কুকর্ম করেছে এবং তারা কীভাবে হাসিনা রাজনৈতিক বিরোধীদের মৃত্যুদ- দেয়ার পাঁয়তারা করছে। ‘[ঐ] তিনি বলতে চাইছেন, এটি রাজনৈতিক ইস্যু কারণ জামায়াতীরা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামীবিরোধী। এটি জাতীয় ইস্যু মানতে তিনি নারাজ। এ বিষয়টি বুঝতে অক্ষম আমি যে, তারা রাজনৈতিক বিরোধী হলে বিএনপি কেন প্রায়ই বলে, আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে মিলে আন্দোলন করেছে। তারা এবং তাদের মিত্র পদাধিকারবলে পরিচিত বুদ্ধিজীবীরা প্রমাণ করতে চায়, জামায়াত ও আওয়ামী লীগের মিল। তাই যদি হবে তাহলে, জামায়াতীদের বিচার হচ্ছে কেন বা জামায়াতীরা পুলিশ হত্যা ও রাস্তায় তা-ব করছে কেন?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না এবং তার ভাষার ‘বাংলাদেশ যদি একটি পরিবারের শাসনে আটকা পড়ে, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্যই পশ্চাপদতার দিকে যাত্রা।’ [ঐ]
সমস্যা হচ্ছে, মোটামুটি সবাইর জানা যে, বিএনপির আন্দোলন মূলত খালেদার দুই পুত্রকে ফেরত আনা যাতে মা-ছেলেরা মিলে আবার দায়হীন শাসন চালাতে পারেন এবং তাতে বিএনপি, জামায়াত ও মিত্ররা উপকৃত হয়।
খালেদা জিয়া যতই হাসিনার পরিবার হাসিনার পরিবার করেন তার পরিবারের সদস্যদের তো বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা তো যুক্তরাষ্ট্র সরকারও জানে। অন্যদিকে খালেদার পুত্রের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ও ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ তো এনেছে প্রথমে মার্কিন সরকার। খালেদা এলে যে, জঙ্গীবাদ আবার বিকশিত হবেÑ এ ধরনের আকার ইঙ্গিত তো মার্কিন দলিলপত্রেই আছে। খালেদা কাকে কী বোঝাচ্ছেন? এতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই তো খেলো হয়ে পড়ছেন।
তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলছেন, শেখ হাসিনা যদি খালেদার কথা না শোনেন। তাহলেÑ
১.‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রদত্ত সুবিধা তুলে নেয়া’ ও অর্থনৈতিক অবরোধের সৃষ্টি
২. সরকারের নীতি নির্ধারকদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা
৩. ড. ইউনূসকে সমর্থন করতে হবে
৪. ‘অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ’ করতে হবে
৫. এবং এসব এমনভাবে করতে হবে যাতে তা ‘দৃশ্যমান’ হয়।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে যাতে সুবিধা থাকে তার জন্য সরকার ও ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছে। এই ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিএনপি সমর্থকরাও অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য বিদেশীদের কাছে সরাসরি আবেদন এই প্রথম কোন রাজনীতিবিদ করলেন। এটা খুব আশ্চর্যজনক যে, কোন রাজনীতিবিদ এতো ন্যক্কারজনকভাবে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে বলতে পারেন। তবে, এর ইতিবাচক দিকও আছে। বিএনপি নেত্রীর আসল প্রকৃতি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। অর্থাৎ, দেশ, দেশের স্বার্থ নয়, নিজ পুত্র ও নিজের স্বার্থ আগে। জিএসপি বন্ধ হলে বিএনপি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেখা যাক, তারা কী প্রতিক্রিয়া জানায়? অর্থনৈতিক অবরোধ হলে তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, গত তিন দশক ব্যবসা-বাণিজ্য তারাই পেয়েছে। তবে, যারা বিএনপি করে বা সমর্থন করে তারা এসবে মাইন্ড করে না। কারণ, আওয়ামী লীগের ব্যবসারীরাও তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং সেটিই শ্রেয়। তাদের সব চিন্তাভাবনার কেন্দ্র আওয়ামী লীগ। দেশ, দশ মুখ্য নয়। আর খালেদা জিয়ার পদাঘাতও তাদের জন্য আনন্দময়। খালেদা জিয়া একমাত্র ভয় পান সেনাবাহিনীকে। উইকিলিকসের দলিলপত্রে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ সালে তিনি মার্কিন কর্মকর্তাদের বলছেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, সেনাবাহিনী তার সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করবে। তাদের ‘বিশ্বাসঘাতকতায়’ তিনি হতভম্ব। তা সত্ত্বেও, মার্কিনীদের তিনি বলেননি যে, সেনাবাহিনীর শান্তি মিশন বন্ধ করা উচিত। তাহলে সেটি হাসিনার জন্য বড় হুমকি হতে পারত। বোঝা যায়, সেনাবাহিনী ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ করলেও তিনি তাদের সাহায্যেই এগুতে চান। দেশের নিরস্ত্র জনগণের কী হবে তাতে তার মাথাব্যথা নেই। আমি অপেক্ষা করছি আমাদের সুজন সুশীলরা এখন কী বলেন। নিশ্চিন্ত থাকুন, তারা সরকারের নানা ‘ব্যর্থতার’ কথা বারংবার বলবেন কিন্তু খালেদা যে দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশকে লেলিয়ে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে কিছু বলবেন না।
খালেদা জিয়া বলছেন, সবশেষে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বের পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই সময়।’ [ঐ]
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ভিক্ষুক মনোবৃত্তি ও শ্বেতাঙ্গপ্রীতির সঙ্গে আমরা পরিচিত। এই দুই দলের নেতারাই গত তিন দশকে বিভিন্ন সময় দেশের ‘সমস্যা’ সমাধানে শ্বেতাঙ্গদের কাছে দেন দরবার করেছেন। ঔপনিবেশিক মনোভঙ্গি মুক্তিযুদ্ধের পরও তাদের রয়ে গেছে। এতে আত্মসম্মানের বিষয়টি যে জড়িত এটি তাদের বোধের বাইরে। আমাদের কপাল, কী আর করা?
খালেদা জিয়ার এই চিঠিতে ওবামা সরকার ব্যস্ত হয়ে পড়বে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। তবে, দেশবাসীর এটি ভেবে দেখার সময় এসেছে, কোন রাজনীতিবিদ যদি অপর দেশকে অনুরোধ করেন নিজ দেশের সরকারকে হুমকি দেয়ার জন্য যা মধ্যযুগে হতো, তাহলে তিনি কি সে দেশে রাজনীতি করার উপযুক্ত। বেগম জিয়া যে কা-টি করলেন তা থেকে স্পষ্ট যে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে উঠছেন। তিনি ভাবছেন, যদি তিনি এবার ক্ষমতায় যেতে না পারেন তাহলে মওদুদ আহমদরা সটকে পড়বেন। তিনি পড়বেন গাড্ডায়। জামায়াত যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুন খারাবি করছে তার একটি কারণ, যদি এ সরকার থাকে তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হবেই এবং রায় তাদের পক্ষে না গেলে তারা পড়বে গাড্ডায়। জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি তখন আরও জোরালো হবে। দু’পক্ষের স্বার্থ এখন এখানেই মিলে গেছে। দু’দলই দুভাবে নিজের দেশের বিরুদ্ধে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
খালেদা জিয়া ও বিএনপি প্রায় বলে দেশবাসী তাদের পক্ষে, চাইলে এখনই তারা সরকারকে ফেলে দিতে পারে। নিজের শক্তি সম্পর্কে এত আস্থা থাকলে তিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে হাঁটু গেড়ে বসছেন কেন?
বিএনপি-জামায়াত পাকিস্তানবাদের ধারক-বাহক। বিদেশীদের দিয়ে তাই তারা ট্রাইব্যুনাল বাতিল করাতে চায়। আমরা মনে করি, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার সমর্থন করে না তারা ১৯৭১-এ বিশ্বাস করে না। যারা ১৯৭১-এ বিশ্বাস করে না তারা মূলত বাংলাদেশকেই অস্বীকার করে। সুতরাং ‘স্বদেশে’ যারা বিদেশী তারা নিজের দেশকে সব রকমের হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে। খালেদা জিয়া তাই প্রমাণ করলেন।

No comments

Powered by Blogger.