জরুরী বিভাগ নেই ঢাকার বেসরকারী হাসপাতালে by নিখিল মানখিন

রাজধানীর অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতালে জরম্নরী বিভাগ নেই। দুর্ঘটনায় জখম হলে তাৎৰণিক চিকিৎসার নেই কোন ব্যবস্থা। গুলিবিদ্ধ, বোমাহতদের ও ছুরিকাহত চিকিৎসা দেয়া হয় না।
পরামর্শ দেয়া হয় সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। বাসার কাছে বেসরকারী হাসপাতাল থাকলেও দূরবর্তী সরকারী হাসপাতালে নিতে গিয়ে রাসত্মায় মৃতু্য ঘটে অনেকের। বেসকারী হাসপাতালগুলোতে জরম্নরী বিভাগ খোলা বাধ্যতামূলক করতে তাগিদ নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের। জরম্নরী চিকিৎসা পাওয়া একজন রোগীর মৌলিক অধিকার উলেস্নখ করে প্রতিটি হাসপাতালে জরম্নরী বিভাগ খোলার দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহ মনির হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন আইন না থাকায় জরম্নরী বিভাগ নেই এমন বেসরকারী হাসপাতালগুলোর বিরম্নদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। ১৯৮২-এর অর্ডিন্যান্সে এ সম্পর্কে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বর্তমানে পুরনো অর্ডিন্যান্স হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলছে। বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জরম্নরী চিকিৎসাসেবা দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
রাজধানীতে বেসরকারী হাসপাতাল-কিনিকের কমতি নেই। ছোট-বড় মিলিয়ে নগরীতে চার শতাধিক হাসপাতাল ও কিনিক গড়ে উঠেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ওই সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সুসজ্জিত ভবন। রয়েছে দৰ চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয় ও অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। কিন্তু এসব অধিকাংশ বেসরকাীর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন জরম্নরী বিভাগ। সব ধরনের অত্যাধুনিক চিকিৎসার সামর্থ্য থাকলেও ফিরিয়ে দেয়া হয় রোগীদের। বেসরকারী হাসপাতাল ও কিনিক থেকে বিতাড়িত এসব রোগীর সবশেষে ঠাঁই হয় সরকারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরম্নরী বিভাগে।
সম্প্রতি কলেজপড়ুয়া এক আদিবাসী ছাত্র অমিত রাজধানীর মোহাম্মদপুর রাজিয়া সুলতানা রোডে নিজ বাসার কাছে ছিনতাইাকারীদের কবলে পড়েন। মোবাইল সেট ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার সময় বাধা দিলে তার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় ছিনতাইকারীরা। অমিতের শরীরের ভেতরে শুরম্ন হয় প্রচুর রক্তৰরণ। মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে অমিতকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে নিশ্চিত হয় অমিতের মৃতু্য। তাৎৰণিকভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে অমিতকে বাঁচানো সম্ভব হতো বলে আৰেপ প্রকাশ করেন তাঁর অভিভাবকরা। অমিতের মতো আরও অনেক রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে জরম্নরী বিভাগ না থাকায় মৃতু্যর মুখে পড়তে হচ্ছে। কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতালের কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, পুলিশী ঝামেলা এড়াতেই জখমের শিকার রোগীদের তারা চিকিৎসা দেন না। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ ধরনের রোগী মারা গেলে তথ্য সংগ্রহের নামে পুলিশ নানাভাবে হয়রানি করে। অনেক সময় সাৰী হিসেবে আদালতে দৌড়াতে হয়। এৰেত্রে তাঁরা রোগীকে সরকারী হাসপাতালে রেফার করে দেন।
জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব জনকণ্ঠকে জানান, জরম্নরী চিকিৎসা পাওয়া একজন রোগীর মৌলিক অধিকার। কিন্তু বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ব্যবসা করাই থাকে ওই সব হাসপাতালের মূল উদ্দেশ্য। মানবিক দিক বিবেচনা করা হয় না। বিভিন্ন ধরনের জখমের শিকার রোগীদের অধিকাংশের কাছে তাৎৰণিকভাবে টাকা-পয়সা থাকে না। তাই বেসরকারী হাসপাতাল এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার বিষয়টি এড়িয়ে চলে। তিনি জানান, উন্নত বিশ্বে সরকারী-বেসরকারী যে কোন হাসপাতালে মুমূষর্ু রোগীদের জরম্নরী চিকিৎসা দেয়া বাধ্যতামূলক। এদেশের বেসরকারী হাসপাতালে জরম্নরী চিকিৎসার বিল পরিশোধের বিষয়ে সরকার ও বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থাকে দায়িত্ব না নিলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না।

No comments

Powered by Blogger.