নিজের গায়ের কাদা অন্যের গায়ে ছিটিয়ে প্রাণ পেতে চায় বিএনপি by মুহম্মদ শফিকুর রহমান

বিএনপি নিজের গায়ে এত কাদা লাগিয়েছে এখন অন্যের গায়ে কিছু না ছিটালে যে দলকে খাড়া করে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে বিগত নির্বাচনে চরম ভরাডুবি অন্যদিকে ২০০১ থেকে ২০০৬-এ মতায় থাকাকালে গায়ে দুর্নীতির কাদা ধুয়েও সাফ করা যাচ্ছে না, বরং আরও লেপটে যাচ্ছে।
অবশ্য বিএনপির জন্মই সামরিক শাসনের কাদা লাগিয়ে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এখন সন্তানের গায়ের দুর্নীতির কাদা।
দলের চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর ছেলে তারেক রহমানকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বানিয়ে আগেই দলের মধ্যে এমন ম্যাসেজ দিয়েছেন যে তিনি আর নেতৃত্বে থাকছেন না। নেতৃত্বে আসছেন তারেক রহমান। তাকে 'তারুণ্যের মডেল', 'যুবরাজ' কত কিছু বলে একটা ইমেজ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হলো, কিন্তু তিনি দুর্নীতির এমন এক ইমেজ গড়ে তুলেছেন যে এখন গোটা দলই দুর্নীতির কাদায় ডুবে আছে। পক্ষান্তরে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ক্লিন ইমেজ নিয়ে রাজনীতিতে আসছেন। তাঁর মেধা, পশ্চিমা আধুনিক উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা, এ সবের তুলনায় তারেক রহমানকে কিছুতেই মিলানো করানো যাচ্ছে না। বিএনপি আজকের দুশ্চিন্তা এখানেই।
তাহলে কি করতে হবে? যুগ্ম-মহাসচিব থেকে প্রমোশন দিয়ে এবার দলের কো-চেয়ারম্যান বানিয়ে দিলেন। তাতেও কিছু হচ্ছে না। কাজেই এখন বিকল্প পদ্ধতি বের করে এগোতে হবে, যাতে নিজের গায়ের কাদা সাফ না হলেও কিছু যায় আসে না, যাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে তাদের গায়ে কাদা লাগিয়ে দেয়া গেলেই হলো, সব এক লেবেলে চলে আসবে, আর ইমেজ সঙ্কট থাকবে না। এমন একজনকে খুঁজে বের করতে হবে যার গায়ে কাদা তো নেই-ই, বরং পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং সেই তরুণ হলেন সজীব ওয়াজেদ জয়_ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রখ্যাত অণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে।
জয় নিজে কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং আইটি এক্সপার্ট। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিশেষজ্ঞ শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। নিজের ধমণীতে বহন করে চলেছেন এক গৌরবময় উত্তরাধিকার। পশ্চিমা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দেননি, বরং বলা যায় মনেপ্রাণে বাঙালী। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন তাঁর পিতৃভূমি রংপুর থেকে। কাজেই তারেকের গায়ের কাদা ছিটানোর জন্য টার্গেট করতে হবে সজীব ওয়াজেদ জয়কেই। কিন্তু সমস্যা হলো জয়কে মোকাবেলা করতে হলে সেই মাপের শিক্ষা, মেধা ও ব্যক্তিত্ব চাই। তা তো জিয়া-খালেদা জিয়ার তনয় তারেক রহমান বা আরাফাত রহমানের মধ্যে নেই। 'মানি মাসল দিয়ে আর যাই হোক জ্ঞান অর্জন করা যায় না। জ্ঞান অর্জন করতে হলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়, ক্লাস করতে হয়, লেখাপড়া করতে হয়, পরীক্ষায় বসতে হয়।
তাহলে জয়ের গায়ে কাদা ছিটানোর জন্য এমন একজনকে ঠিক করতে হবে যার চোখে পর্দা বলতে কিছু নেই এবং অনর্গল উদ্ভট কথা বানিয়ে বলতে পারেন। পাওয়াও গেল সেই মানুষ। পার্লামেন্টে যখন-তখন দাঁড়িয়ে যান, সব সময় তর্জনী উঁচিয়ে স্পীকার বা ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে নির্দেশ করে হাঁক ছাড়েন। তার নাম জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং সংসদে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ। নিজ সংসদীয় দলের শৃঙ্খলা রাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত (প্রয়োজনে চাবুক মেরে হলেও)।
বিএনপির এই পেশীবহুল নেতাকে সম্ভবত ৮০-এর দশকে দেখেছিলাম আতাউর রহমান খানের ধানমন্ডির বাসভবনে। আমার সাংবাদিকতা জীবনে বিচিত্র মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে বা পেশার স্বার্থে দেখা করতে হয়েছে। আতাউর রহমান খান স্বাধীনতা পূর্ব পূর্ব-পাকিস্তানে প্রাদেশিক সরকারের চীফ মিনিস্টার ছিলেন। ষাটের দশক থেকে মুক্তিযুদ্ধ, এই সময়টা আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও ঐ সময়টাতেই তিনি সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাজনীতির মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিলেন। '৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়া-এরশাদের সামরিক আমলে আবার কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। জেনারেল এরশাদের সময় সিনিয়র মন্ত্রী হন। সে সময় সংবাদ সংগ্রহে প্রায় রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি যেতে হতো আমাকে। তখন এখনকার মতো মোবাইল বা কম্পিউটার ছিল না বলে আমাদের বেশি দৌড়াতে হতো। এভাবে আতাউর রহমান খানের বাড়িতে এক তরুণকে দেখেছি কখনও আতাউর রহমান খানের হুক্কায় আগুন দিয়ে নলটা এগিয়ে দিতে কখনও অতিথি আপ্যায়নে চা-নাস্তা পরিবেশন করতে। পরবর্তীতে তাকে দেখলাম পার্লামেন্টে কথায় কথায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণকারী বক্তা হিসেবে। এই তরুণই জয়নুল আবদিন ফারুক। আমার খারাপ লাগছে আতাউর রহমান খানের বাড়িতে তাকে চিনতে পারিনি।
পদাধিকার বলেই জয়নাল আবদিন ফারুক বিএনপিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ নেতা। দলে সংসদে দুই ফ্ল্যাট ফরমেই। হঠাৎ তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে একটা সিরিয়াস অভিযোগ উত্থাপন করলেন যে, সজীব ওয়াজেদ জয় ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তিনি নিউইয়র্ক ও কানাডায় বসে এর নিয়ন্ত্রণ করছেন। লক্ষ্য সজীব ওয়াজেদ জয়ের ক্লিন ইমেজে দাগ। এর আগেও একবার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরীর সঙ্গে জড়িয়ে জ্বালানি সংক্রান্ত একটি দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তা রাজনৈতিক অঙ্গনে খাওয়ানো যায়নি। বরং উল্টা মানহানির মামলা ফেস করতে হচ্ছে। ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরী মামলাটি করেছেন। এখানে সুবিধা করতে না পেরেই এখন জয়ের বিরুদ্ধে ভিওআইপি ইস্যু সামনে এনেছেন।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ সাংবাদিকদের কাছে বলে দিলেন বর্তমান সরকারের ১৩ মাসে দেশের শতকরা ২০ ভাগ নারী নির্যাতিত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশারফুল ইসলাম বেগম জিয়ার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বললেন, বেগম জিয়াকে এর জন্য তথ্য- উপাত্ত পেশ করতে হবে। অর্থাৎ নির্যাতিত নারীদের নাম, ঠিকানা, ঘটনাস্থল, অপরাধী ইত্যাদি তথ্যাবলী পেশ করতে হবে। বেগম জিয়া চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন কি করলেন না তা জানা গেল না। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকারকেই প্রমাণ করতে হবে ২০ ভাগ নারী নির্যাতিত হননি। তিনি আরও বলেছেন, তাদের কাছে তথ্য আছে এবং সময়মতো তা প্রকাশ করবেন।
যদ্দুর জানি এখনও প্রকাশ করেননি। তবে স্বাভাবিক রীতি হলো কারও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। পাল্টা চ্যালেঞ্জও করতে পারেন, এটাই প্রচলিত রীতি। কিন্তু যিনি চ্যালেঞ্জ দিলেন তাকেই প্রমাণ করতে হবে এটা তো রীতি হতে পরে না। যিনি অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তাকেই প্রমাণ করতে হবে। কাজেই এই ঢিলও কাজে লাগল না। এবার তৃতীয় ফ্রন্ট ওপেন করতে হবে। করলেন তো করলেন আবার সজীব ওয়াজেদ জয়কে টার্গেট করে। এবারও বুমেরাং হলো। কারণ জয়ের ইমেজ এত ক্নিন যে তাঁর গায়ে কাদা লাগানো যাবে না। আর তারেক জিয়ার গায়ে এত কাদা যে শতকরা এক ভাগ কাদাও অন্য কোন রাজনৈতিক নেতানেত্রীর সনত্মানের গায়ে নেই। সজীব ওয়াজেদ জয় তো আরও ক্নিন ইমেজের তরুণ। লেখাপড়া করেছেন ভারত এবং আমেরিকার বিখ্যাত স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বশেষ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং তথা আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তিতে স্পেশালাইজেশন করেছেন। তাঁর স্ত্রীও পিএইচডি করা আইনজীবী এবং দু'জনই চাকরি করে যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাপন করছেন।
বেগম খালেদা জিয়া সবচেয়ে বড় ভুলটি করলেন ছেলেদের যোগ্য করে গড়ে না তুলে অন্যদের অযোগ্য বলে ছেলের অবস্থান তৈরি করতে চাইলেন। সে ক্ষেত্রে তিনি টার্গেট করলেন তো করলেন বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার বহনকারীদের। মনে পড়ে জেনারেল এরশাদের পতনের পর একানব্বইতে নির্বাচন হলো এবং সে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যাবার বা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবার কথা ছিল না। তবু তিনি সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ নিয়ে ক্ষমতায় গেলেন। অবশ্য তারেক রহমান তারও আগে জেনারেল এরশাদের আমলেই ব্যবসায় নেমেছেন এবং এরশাদের তৎকালীন মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সহায়তায় মানি ইজ নো প্রোব্লেমের পথে এগোতে শুরু করেছেন। মওদুদ সাহেব তখন এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন। এরশাদের পতনের পর আবার বিএনপিতে ফিরে জায়গা করে নিয়েছেন। এদিকে তারেক রহমানের হাওয়া ভবনও চালু হয়ে গেছে। এবার দলেও হস্তক্ষেপ করার গঠনতান্ত্রিক অধিকার পেয়ে গেছেন। এরই মধ্যে তারেক বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালকে কটাক্ষ করে একটা বিবৃতি দিলেন। দৈনিক ইত্তেফাক তা প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্ব সহকারে ছেপে দিল। সম্ভবত এটাই তারেকের বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি প্রথম প্রকাশ্য আক্রমণ। একই দিন বিএনপি মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ারও একটি বিবৃতি ইত্তেফাকে ছাপা হয়। পরদিনই মান্নান ভূঁইয়ার জবাবে জিল্লুর রহমান এবং তারেকের বিবৃতির জবাব দেন ওবায়দুল কাদের এবং তাও ইত্তেফাক গুরুত্ব সহকারে ঠিক একই ট্রিটমেন্ট দিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় ছেপে দেয়। ওবায়দুল কাদের বিবৃতিতে বললেন, শহীদ শেখ কামাল ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ভারতে ট্রেনিং নিয়ে শহীদ শেখ কামাল ও শহীদ শেখ জামাল সরাসরি সশস্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অনন্যগুণের অধিকারী শেখ কামাল ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলেন এবং ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দক্ষতা প্রমাণ করেন, অল্পদিনেই দলে এসেই নেতৃত্বের শীর্ষে বসেননি, যদিও জাতির জনকের সন্তান হিসেবে সে সুযোগ তাঁর ছিল। কেবল তাই নয়, ছায়ানটের ছাত্র হিসেবে যেমন গিটার, সেতার বাজাতেন তেমনি খেলাধুলার মাঠেও ছিলেন সমানভাবে। গড়ে তুললেন আবাহনী ক্রীড়াচক্র, স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী, যার মাধ্যমে সঙ্গীতে এবং খেলাধুলায় আধুনিক ধারার প্রবর্তন হলো সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম।
এই উচ্চশিতি মেধাবী এবং ক্রীড়া সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে যোগ্য সংগঠক সম্ভাবনমায় যুব কর্মীর তুলনায় ড্রপ-আউট এবং অর্থলোভী কোন অর্বাচীনের তুলনা করা ধৃষ্ঠতা। একজন গড়েন আবাহনী ক্রীড়াচক্র, স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী, নাট্য গোষ্ঠী, আরেকজন হাওয়া ভবন, ডান্ডি ডাইং, মার্শাল ডিস্টিলারী, পার্থক্যটা এখানেই। সম্ভবত বিবৃতির সারাংশ ছিল এটাই। তারেক রহমান বা তার মা প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন) খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এ প্রেক্ষিতে আর কোন বিবৃতি লক্ষ্য করা যায়নি।
বেগম খালেদা জিয়া ভুল করেছেন বা বাধ্য হয়েছিলেন ছেলেদের লেখাপড়া ও যোগ্যতায় গড়ে না তুলে অর্থ ও ক্ষমতার হাওয়া ভবন গড়তে দিলেন, যার ফলে নিজেকে (তারেক রহমান) দলে ও ভবিষ্যত কর্ণধার এবং সেই সুবাদে সরকারেও এক নম্বর ভাবতে শুরু করলেন।
পাক্ষান্তরে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর যেমন রয়েছে গৌরবময় রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, তেমনি এই উত্তরাধিকার নিয়ে বসে থাকেননি। বাস্তব কারণে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন বলেই ভারতের মুশৌরীতে পাবলিক স্কুল, চেন্নাইর কোদাই ক্যানেল ও বেঙ্গালোর সেন্ট জোসেফ কলেজ এবং পরে আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং তথা আইটিতে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে নিজেকে তৈরি করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া এবং দু'বার প্রধানমন্ত্রী ও তিনবার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সন্তান হয়েও আমেরিকায় চাকরি করে লেখাপড়া করেছেন এবং চাকরি করে সংসার চালাচ্ছেন। স্ত্রী ড. ক্রিস্টিনও চাকরি করেন এবং তাঁরা দু'জন মাঝে মধ্যে দেশে এসে মাকে সাহায্য করছেন, বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে।
পক্ষান্তরে, তারেককে নিয়ে খুব কম লোকই এখন রাজনীতি আলোচনা করেন। তারেকের নাম আসলেই দুর্নীতি, হাওয়া ভবন, ডান্ডি ডায়িং ইত্যাদি নানা বিষয় আলোচনায় চলে আসে। আর তাই জয়ের সঙ্গে তারেককে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে তুলনামূলক আলোচনায় এনে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করাই বেগম খালেদা জিয়া কৌশল হিসেবে নিয়েছিলেন। কিন্তু এ কৌশল একেবারেই বেখাপ্পা। জয়ের উত্তরাধিকার রাজনীতি আর তারেকের উত্তরাধিকার সামরিক শাসন। জয়ের রাজনীতি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা মূলধারার রাজনীতি। আর তারেকের রাজনীতি তার সম্পূর্ণ উল্টো, পশ্চাদপদ পাকি-ধারার। বেগম জিয়া তারেককে এক লাফে দলের শীর্ষপদে বসিয়ে যে ভুলটি করেছেন শেখ হাসিনা তা করেননি, জয় প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে একেবারে সাধারণ কর্মী থেকে গড়ে উঠছেন।
কাজেই জয়নুল আবদিন ফারুক বা অন্য কোন নেতাকে দিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে যতই বলানো হোক, তাতে কিছু যায় আসে না।

ঢাকা-১৭ মার্চ ২০১০
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.