সেই ভয়াল স্মৃতি...

মুক্তিযুদ্ধে হানাদার আর দেশীয় দোসরদের হাতে পরিবারের সকলকে হারিয়ে বেঁচে যাওয়া একমাত্র আব্দুর রশিদ জীবন বাঁচাতে বেছে নিয়েছেন বাবুর্চির পেশা। বছর ঘুরে মার্চ এলেই প্রিয়জনদের স্মৃতি তার বুকে হাহাকার করে ওঠে।
স্মৃতি যেন ভোলা যায় না। বিস্মৃত হয়না চেতনা। মাত্র দশ বছর বয়সের ভয়াল সেই নৃশংসতা ৩৯ বছর ধরে বয়ে চলেছেন তিনি। আর তাঁর চোখের সামনে যখন সেই হানাদারদের দেশীয় দোসররা বুক ফুলিয়ে হেঁটে চলে তখন রশিদের মনে খুন চেপে বসে। কিন্তু পারে না রশিদ ওই দোসরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। রশিদের জীবনের শেষ ইচ্ছে সেই দোসর আব্দুল্লাহ আর ইজাহারের বিচার দেখে যাওয়া।
বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুরে গুরুত্বপূর্ণ কেউ এলে অধিকাংশ সময় রান্নার গুরুদায়িত্বটি রশিদের ঘাড়ে পড়ে। কারও মুখে রশিদ রান্নার তারিফ শুনলে খুশি হন। কিন্তু তাঁর মনের ঝড় থামে না। '৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে রশিদ হারিয়েছে বাবা-মা, দাদা-দাদি, ভাই-বোনসহ পরিবারের দশ সদস্য। ভাগ্যক্রমে রশিদ বেঁচে গিয়ে হয়েছে এতিম আর নিঃসঙ্গ। ৩৯ বছরের পথ চলায় রশিদের সঙ্গী এখন স্ত্রী আর সন্তান। এখন নীরবে তাঁর অশ্রু ঝড়ে। সেদিন রশিদকে লুকিয়ে এক হৃদয়বান ব্যক্তি বুকে তুলে আশ্রয় দিয়ে তাকে কোলেপিঠে মানুষ করেছেন। রশিদ তার হারানো অতীত আর কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন। '৭১-এর মার্চে স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরম্নতেই পাকহানাদার আর দেশীয় দোসররা তার পরিবারের দশ সদস্যকে একে একে হত্যা করে। অবাঙালী অধ্যুষিত নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ি মহল্লায় ছিল রশিদের বাবা শহিদ হোসেনের রম্নটির কারখানা। রম্নটির সঙ্গে গোপনে প্রচারপত্র বিতরণ করা হতো পাকিসেনাদের বিরুদ্ধে রম্নখে দাঁড়ানোর জন্য। সেই কারখানা আজ নেই। জীবনের সেই ভয়াল দিনটির কথা বলতে গিয়ে রশিদ কেঁপে ওঠেন। তাঁর চোখের সামনেই একের পর এক হত্যা আর উল্লাস করছিল পাকিসেনা আর দোসররা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস- রশিদের কপালে জোটেনি কিছুই। বর্তমানে রশিদের সংসারে সদস্য সংখ্যা আট। বাবুর্চির আয়ের ওপর তাঁর সংসার চলছে। টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছেন না।
_তাহমিন হক ববি, নীলফামারী থেকে

No comments

Powered by Blogger.