আয় বেড়েছে মার্কিন নাগরিকদের

বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি মার্কিন অর্থনীতি অনেকদিন থেকেই মন্দার কবলে আটকে আছে। ঋণভার ও ঋণসীমা নিয়ে সমস্যা, ফিসক্যাল ক্লিফ সংক্রান্ত সমস্যা মার্কিন অর্থনৈতিক সঙ্কটকে ত্বরান্বিত করছিল।
বিগত বছরে শেয়ারবাজারে ধস, শিল্প উৎপাদন হ্রাস, কর্মী ছাঁটাই ও বেকারত্বের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ছিল সমালোচিত ঘটনা। জনগণের আয় কমছিল আর কমছিল ভোক্তা ব্যয়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঘটে ছন্দপতন। দ্বিতীয়বারের মতো ওবামা প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার পরপরই ওবামাকে অনেক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। বারাক ওবামা ফিসক্যাল ক্লিফ নিয়ে পড়েছিলেন চরম সঙ্কটে । ধনীদের ওপর করের পরিমাণ বাড়িয়ে ফিসক্যাল ক্লিপ এড়ানোর যে পরিকল্পনা ওবামা নিয়েছিলেন তার বিরোধিতা করেছিলেন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা। তারা ধনীদের ওপর কর না বাড়িয়ে ব্যয় সঙ্কোচনের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু ব্যয় সঙ্কোচনের পদক্ষেপ নেয়া হলে দেশজুড়ে একদিকে বেকারত্ব যেমন বেড়ে যাবে তেমনি মধ্যবিত্তের ওপর অর্থনৈতিক করের বোঝা বেড়ে যাবে। এই চিন্তা থেকে অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রিপাবলিকানরা ওবামার নীতিকেই সমর্থন করে। আর এর ফলে আমেরিকার অর্থনীতি আশু করুণ পরিণতির হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ঋণসীমা নিয়ে। একটি বড় ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে ওবামা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি আমেরিকার অর্থনীতির জন্য বিরাট বোঝা। তাছাড়া বিভিন্ন খাত অনুযায়ী সরকারকে মোট অর্থ পরিশোধ করতে হবে ৪৫২ বিলিয়ন ডলার। অথচ রেভিনিউ আসবে মাত্র ২৭৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ ঘাটতি মোকাবেলা করা ওবামা প্রশাসনের জন্য সত্যিই কঠিন। এই রকম সঙ্কটাপন্ন অবস্থার মধ্যেই হঠাৎ করে মার্কিন জনগণের আয় বেড়ে যায়। মূলত ওবামা সরকারের ঘোষিত নতুন কর আইন বাস্তবায়নের আগেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাড়াহুড়ো করে জনগণকে লভ্যাংশ দেয়ায় মার্কিনীদের আয় বেড়ে যায়। সম্প্রতি জনসাধারণের আয় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সার্বিক আয় বৃদ্ধির পরিমাণ বিশ্লেষকদের হিসাবের চাইতেও শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এটি মার্কিন জনগণের জন্য যেমন সুখবর তেমনি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও আশীর্বাদস্বরূপ। গত বছরের তুলনায় এ বছর মজুরির হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আর এতে আয় বাড়ছে মার্কিন জনগণের। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আকস্মিকভাবে সঙ্কুচিত হলেও জনগণের আয় বৃদ্ধির কারণে ভোক্তা ব্যয় বাড়ছে । আর এতে মার্কিন অর্থনীতিও যথেষ্ট গতি পাচ্ছে। বণ্টিত লভ্যাংশের বড় একটি অংশ পেয়েছে বেশি বিনিয়োগ করা ধনীরা। এ আয় বৃদ্ধি সমানভাবে বণ্টিত না হলেও তা নতুন বছরে সার্বিক ভোক্তা ব্যয়ে একটি শক্ত ভিত্তি দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মজুরি এবং বেতন সাম্প্রতিক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এতে সঞ্চয়ের হার বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ যা ২০০৯ সালের মে মাসের পরে সর্বোচ্চ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি এখনও ফেডের লক্ষ্য ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। এর ফলে জনগণ মূল্যস্ফীতির ভয়াবহতা থেকেও কিছুটা পরিত্রাণ পাচ্ছে। ধীরে ধীরে কর্মসংস্থানের হারও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার এখনও ৭ দশমিক ৮ শতাংশেই সীমাবদ্ধ আছে। পরিবহন এবং আবাসন খাতের ছোট ছোট ফার্মই কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। লভ্যাংশ বন্টন,মজুরি বৃদ্ধি.কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি পদক্ষেপের কারণে মার্কিন জনগণের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোক্তার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ফিরে পাচ্ছে তার গতি। যদি জনগণের আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় তবে সামগ্রিক মার্কিন অর্থনীতির জন্য সঙ্কট নিরসন সহজ হয়ে আসবে। এখন দেখার বিষয়, এই ধারাবাহিকতা কতদিন ধরে রাখতে পারবে ওবামা প্রশাসন। ইব্রাহিম নোমান

No comments

Powered by Blogger.