বিদেশে উচ্চশিক্ষা যা জানতে হবে

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য দেখা যায়। দূতাবাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য দীর্ঘ লাইন দেখে এক কথা অনুমান করা যায়। আসুন জেনে নেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রাথমিক প্রস্তুতির বিস্তারিত।
ভাল ফল : মূলত আপনি ভাল ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিদেশে পড়তে যাবেন। আপনার বিগত সময়ের পরীক্ষার ফলাফল ভাল না হলে উচ্চশিক্ষার প্রশ্নই আসে না। যারা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হবেন তাদের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে ভাল ফল থাকতে হবে।
ভাষাগত দক্ষতা : বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজন ভাষাগত দক্ষতা। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজীর প্রাধান্য বিশ্বব্যাপী। প্রায় পৃথিবীর সব দেশেই ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায়। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ইংরেজী বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। আমেরিকায় পড়াশোনার জন্য ঞঙঊঋখ (ঞবংঃ ড়ভ ঊহমষরংয ড়ৎ ধ ঋড়ৎবরমহ খধহমঁধমব), ঝঅঞ-ও, ঝঅঞ-ওও, এগঅঞ, এজঊ ইত্যাদি স্কোর থাকতে হয়। বিষয় ও ডিগ্রী অনুযায়ী এসব কোর্স ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ওঊখঞঝ (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঊহমষরংয খধহমঁধমব ঞবংঃরহম ংুংঃবস) হচ্ছে ব্রিটিশ ইংলিশ পদ্ধতি। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঞঙঊঋখ ন্যূনতম ৫৫০ এবং ওঊখঞঝ ৫.৫ প্রয়োজন। অনেক দেশ তাদের নিজস্ব ভাষায় লেখাপড়া করানোর ওপর জোর দেয়। যেমন : জামার্নীতে পড়তে চাইলে জার্মান ভাষার ওপর প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে। এছাড়া জাপানের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ও জাপানী ভাষায় শিক্ষাদান করে থাকে। ইউরোপের প্রায় সব দেশই তাদের নিজস্ব ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
বিষয় নির্বাচন : প্রত্যেকেরই পছন্দের বিষয় থাকে। কি বিষয় নিয়ে আপনি পড়তে আগ্রহী প্রথম সে বিষয় নির্বাচন করুন। কারও কথায় বা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেখা কোন বিষয়ে পড়তে না যাওয়াই ভাল।
কোথায় পড়বেন : অনেকেরই পছন্দের দেশ বা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় থাকে। আপনার এ রকম কোন পছন্দ থাকলে সেটাকে গুরুত্ব দিন। পড়াশোনার জন্য প্রথম সারির দেশ হচ্ছেÑআমেরিকা, ইল্যান্ড, কানাডা, জার্মানী, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, বেলজিয়াম প্রভৃতি।
অন্যান্য বিষয় : পাসপোর্ট : বিদেশে আপনার পরিচয় বহন করবে পাসপোর্ট। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করার পর আপনার প্রথম কাজ পাসপোর্ট তৈরি করা।
শিক্ষা ব্যয়ভার : বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। প্রথমেই নিশ্চিত হোন আপনার পরিবার খরচের যোগান দিতে পারবে কি না। এ ছাড়া পরিবারের সদস্য ছাড়া যদি অন্য কেউ আপনার ব্যয়ভার বহন করে তাহলে তার সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক তা স্পষ্টভাবে নিশ্চিত হন। প্রতিটি দেশের ভিসা অফিসার চান শিক্ষার ব্যয়ভার বহনকারীর সঙ্গে যেন শিক্ষার্থীর রক্তের সম্পর্ক থাকে। আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণস্বরূপ প্রতিটি দূতাবাসেই ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। যা ব্যাংক থেকে গ্রহণ করতে হবে।
মেডিক্যাল সার্টিফিকেট : দূতাবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিক্যাল সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। মেডিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে হেপাটাইটিস, এইচআইভি, এইডস, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষা করা হয়।
অফার লেটার : সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে ভর্তির প্রাথমিক অনুমতি জানিয়ে যে চিঠি দিবে তাই অফার লেটার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত অফার লেটার প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বারবার পড়তে হবে। ভালভাবে জেনে নিন টিউশন ফির পরিমাণসহ অন্যান্য বিষয়।
আবাসন ব্যবস্থা : বিদেশে আপনার আবাসন ব্যবস্থা কে করবে? আপনি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়? দূতাবাসে সাক্ষাতকারের আগে এ বিষয়টি ঠিক করুন।
পাঠ বিরতি : বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠ বিরতির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য করে। যদি আপনার পাঠ বিরতি হয়ে থাকে তাহলে এর সপক্ষে প্রমাণ দিন। যদি কোথাও চাকরি করে থাকেন তাহলে অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিন। অসুস্থ থাকলে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের মান যাচাই : ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান সে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। সব চাইতে ভাল হয় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে খোঁজ নিলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা পাঠানোর আগে এর বৈধতা যাচাই করুন।
একাডেমিক কাগজপত্র : এসএসসি, এইচএসসি বা স্নাতক প্রতিটি পর্যায়ে সনদপত্র, মার্কশিট, প্রশংসাপত্র, নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট অবশ্যই ইংরেজীতে হতে হবে। আপনার কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর পূর্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক সত্যায়িত করে নিন।
খ-কালীন কাজ : অনেকেই চাকরির আশায় বিদেশে পড়তে যেতে চান, যা একদমই ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় যদি আপনাকে চাকরির অনুমতি দেয় তাহলে তা প্রসপেক্টাসে উল্লেখ থাকবে। ভালভাবে জেনে নিন সপ্তাহে ন্যূনতম কত ঘণ্টা এবং সামারে কাজের অনুমতি আছে কি না?
সাবধানতা অবলম্বন : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম সাবধানে পূরণ করুন। প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের ফটোকপি সংরক্ষণ করুন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং দূতাবাস যেসব কাগজপত্র চেয়েছে তা যথাযথভাবে সরবরাহ করুন। ভিসা অফিসারের সঙ্গে মার্জিতভাবে এবং শুদ্ধ ইংরেজীতে কথা বলার চেষ্টা করুন।
বিকল্প ভর্তি : বিকল্প ভর্তি হচ্ছে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভর্তি। এ মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার আগে বিভিন্ন বিষয় ভালভাবে জেনে নিন।
১। প্রতিনিধিত্ব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদিত কিনা।
২। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী রেকর্ড জানার চেষ্টা করুন।
৩। সার্ভিস চার্জ কত? টিউশন ফিসহ অন্যান্য খরচ কী কী?
৪। টাকার লেনদেনে লিখিত ডকুমেন্ট ব্যবহার করুন।
মাঈনউদ্দিন

No comments

Powered by Blogger.