বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতার অঙ্গীকার- ঢাকা-বেজিং যুক্ত ইশতেহার

 চীন বাংলাদেশী পণ্যের ক্ষেত্রে আরও অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক সুবিধা প্রদান এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। দু'দেশের যৌথ ইশতেহার ঘোষণাকালে এ অঙ্গীকার করা হয়।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, উভয়পৰ তাদের জনগণের কল্যাণে দ্বিপৰীয় বাণিজ্য সমপ্রসারণ ও বাণিজ্যে অসমতা দূরে সক্রিয় পদৰেপ গ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের মধ্যে বৈঠকের একদিন পর শুক্রবার এই যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। এতে আরও বলা হয়, উভয়পৰ ৮ম মৈত্রী সেতুর (দ্বিতীয় মেঘনা) এবং চীনের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ দ্রম্নত শুরম্নর প্রচেষ্টা জোরদার করবে।
ইশতেহারে বলা হয়, তারা উভয়মুখী বিনিয়োগ পরিচালনা ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতায় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান এবং উভয়পৰের প্রকল্প বন্দোবন্তে ও শ্রমিক সার্ভিস প্রদানে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে একমত হন।
যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী চীন বাংলাদেশের জ্বালানি, যোগাযোগ, পরিবহন, শিল্প ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে সহযোগিতা প্রদানে তার দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ প্রদান করবে।
এতে বলা হয়, উভয়পৰ পরিবহন, যোগাযোগ সমপ্রসারণ এবং দু'দেশের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।
এ ছাড়া তথ্যের নিয়মিত আদানপ্রদান এবং ইয়ারলুজাংহু কিংবা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সম্পদ ব্যবহার বিষয়ে উভয় দেশ ভবিষ্যতে অভিন্ন অববাহিকাসংক্রানত্ম এ ধরনের আলোচনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কর্মপ্রক্রিয়া গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সম্মত হয়েছে।
দশ দফা ইশতেহারে আরও বলা হয়, চীন ও বাংলাদেশ হাইব্রিড রাইস কাল্টিভেশন টেকনোলজি, হাইব্রিড রাইস সিড প্রোডাকশন টেকনোলজি ও জার্ম পস্নাজম রিসোর্সেস অব ক্রপস বিনিময়, ফার্ম প্রোডাক্টস প্রসেসিং এবং টেকনিক্যাল পার্সোনাল ট্রেনিং বিষয়ে সক্রিয় সহযোগিতা দেবে।
এতে বলা হয়, উভয় দেশ কৃষি, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশিস্নষ্ট সদস্যদের সফর বিনিময় জোরদার এবং কৃষিৰেত্রে সহযোগিতা সমপ্রসারণের সুনির্দিষ্ট উপায় অনুসন্ধান করবে। ইশতেহারে আরও বলা হয়, উভয় দেশ পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পানি বিজ্ঞান বিষয়ক উপাত্ত বিনিময়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুযের্াগ হ্রাস বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া চীন নদী খনন এবং প্রশিৰণের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের সমতা তৈরিতে সহযোগিতা প্রদানেও সম্মত হয়েছে। দু'দেশ উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময় ও উভয়দেশের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা এবং সরকারী সংস্থা, পার্লামেন্ট, রাজনৈতিক দল, সশস্ত্র বাহিনী ও দু'দেশের বেসরকারী গ্রম্নপসমূহের বন্ধুত্বপূর্ণ সফর বিনিময় জোরদার ছাড়াও চীন স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্রদানে সম্মত হয়েছে।
যৌথ ইশতেহারে বলা হয়েছে, কৌশলগত দিক এবং দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক কল্যাণের নীতির ভিত্তিতে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি 'সহযোগিতার নিবিড় ব্যাপক অংশীদারিত্ব' গড়ে তুলতে উভয় পৰ সম্মত হয়েছে।
ইশতেহারে বলা হয়, উভয় দেশ বেজিং ও ঢাকায় স্মরণীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন এবং দু'টি দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক সমপ্রসারণ ও আরো উন্নত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
এতে বলা হয়, উভয় পৰ পরিবহন, যোগাযোগ জোরদার এবং এ ৰেত্রে দু'টি দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের ব্যাপারে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।
ইশতেহারে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ নিকট ভবিষ্যতে কৰপথে একটি যোগাযোগ ও দূর অনুধাবন স্যাটেলাইট চালু করার আগ্রহ ব্যক্ত করায় চীন এ লৰ্যে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশী শিৰাথর্ীদের জন্য চীনা সরকারের বৃত্তির সংখ্যা আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাড়িয়ে ৮০ থেকে ১৫০ এ উন্নীত করার বিষয়টি বিবেচনা করার ব্যাপারে চীন সম্মত হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদী মাস্টার্স কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগদানে দু'জন করে তরম্নণ বাংলাদেশী কূটনীতিককে বিশেষ বৃত্তি প্রদানে বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেৰিতে চীনা পৰ বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।
যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, উভয় পৰ সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা ও পর্যটনের ৰেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, থিংক ট্যাংক, শিৰাবিদ, ফ্রেন্ডশিপ গ্রম্নপস, নারী গ্রম্নপ, সাংস্কৃতিক দল, এ্যাথলেট ও তরম্নণদের মধ্যে যোগাযোগ সক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি করবে।
এতে বলা হয়, 'উভয় পৰ স্ব স্ব জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার সুরৰা এবং এ অঞ্চলে শানত্মি ও স্থিতিশীলতার সমপ্রসারণে বিভিন্ন পর্যায় ও ৰেত্রে সামরিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।'
এতে আরও বলা হয়, চীনা পৰ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখ-গত অখন্ডতার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা এবং জাতীয় স্থিতিশীলতা সমুন্নত ও সামাজিক উন্নয়ন জোরদার করতে বাংলাদেশী প্রচেষ্টার প্রতি তাদের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশও 'এক চীন নীতি' এবং সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও ভূখ-ের অখন্ডতা সমুন্নত রাখতে চীনের প্রচেষ্টার প্রতি তাদের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.