এক লাখ টন ধান মজুদ ॥ মজুদদারি বাড়াবে by মিজান চৌধুরী

এক লাখ মেট্রিক টন ধান মজুদের অনুমতি থেকেই মজুদদারি শুরু হবে। বড় চালের মিলগুলোতে এক হাজার মেট্রিক টনের বেশি ধান মজুদ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক নির্দেশে বলা হয়েছে, এক লাখ টনের বেশি ধান মজুদ করা যাবে না।
ওই পরিমাণের চেয়ে বেশি মজুদকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের কারণে অবৈধ মজুদদারি বন্ধের চেয়ে অতিমাত্রায় উৎসাহিত হবে মিল মালিকরা। ফলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মজুদবিরোধী সরকারের পুরো পদক্ষেপ ব্যর্থ হবে।
কারণ মজুদদার মিল মালিকরা এক লাখ মেট্রিক টনের কমই ধান মজুদ করছে। দেশের কোথাও এক লাখ মেট্রিক টন ধান মজুদ করার মতো গুদাম গড়ে ওঠেনি। মজুদের সীমা মন্ত্রণালয় প্রকাশ করায় এখন আর কাউকে অবৈধ মজুদদার হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই নির্দেশ শেষ পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদের অন্যতম সুযোগ বয়ে আনবে মিল মালিকদের।
সরকারী হিসেবে ৫শ' মেট্রিক টন ধান মজুদের জন্য ৪ হাজার স্কয়ারফুটের গুদাম দরকার। এক মেট্রিক টন ধানের জন্য দরকার ৮ স্কয়ারফুট। ওই হিসেবে এক লাখ মেট্রিক টন ধান মজুদের জন্য প্রয়োজন ৮ লাখ স্কয়ারফুট গুদামঘর; যা সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে এ ধরনের অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। মূল্যের দিক থেকে এককেজি ধানের শুক্রবারের মূল্য হচ্ছে ১৭.৭০ টাকা। এক মেট্রিক টন ধানের মূল্য হচ্ছে ১৭ হাজার ৭শ' টাকা। ওই হিসেবে এক লাখ মেট্রিক টন ধান মজুদ করতে প্রয়োজন ১৭৭ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কের দিক থেকে একসঙ্গে এত টাকার ধান মজুদ প্রায় অসম্ভব। গত ইরি মৌসুমে সরকার প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ করে। ওই ধান-চাল সংগ্রহ করতে সরকারের প্রায় চার মাস সময় লেগেছে। সারাদেশ থেকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ক্রয় করতে এ সময় পার হয়েছে। এ হিসেবে এক লাখ মেট্রিক টন ধান একজন ব্যবসায়ীর পৰে ক্রয় করে মজুদ করা আরও সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বড় রাইস মিলগুলোতে প্রতিদিন কমপৰে ৬শ' মণ ধানের প্রয়োজন হয়। সেখান থেকে চার শ' মণ চাল উৎপাদিত হচ্ছে। ছোট মিলগুলোতে প্রয়োজন হয় ২শ' থেকে আড়াই শ' মেট্রিক টন। ফলে ছোট বড় রাইস মিলগুলোতে বর্তমান অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুদ করা হচ্ছে। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ধান ব্যাংকের গুদামে মজুদ করে রেখেছে। কিন্তু ওইসব মজুদের পরিমাণ হচ্ছে এক লাখ মেট্রিক টনের কম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইসু্যকৃত লাখ টনের বেশি ধান মজুদ রাখা যাবে না এমন নির্দেশের ফলে সকল রাইস মিলে মজুদ বৈধতায় রূপ নেবে। অসাধু রাইস মিলাররা এ নির্দেশের সুযোগ নিয়ে আরও বেশি পরিমাণ মজুদ করবে, যা কিনা এক লাখ মেট্রিক টনের চেয়ে কম।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত মনিটরিং সভা থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সকল জেলার ডিসিদের কাছে এ ব্যাপারে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। ডিসিদের কাছে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব মিল মালিক এক লাখ মেট্রিক টনের ওপর ধান মজুদ করেছে তাদের শনাক্ত করতে হবে। বিশেষ করে এক লাখ মেট্রিক টন ধান রেখে অতিরিক্ত ধান তাৎৰণিক বিক্রির ব্যবস্থা করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয় ডিসিদের।
এ ব্যাপারে শেরপুর সারোয়ার রাইস মিলের সারোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, দেশে এক লাখ মেট্রিক টন ধান মজুদ করার মতো ব্যবসায়ী তৈরি হয়নি। বড় মিল মালিকের পক্ষে এক হাজার মেট্রিক টন ধান মজুদ করা সম্ভব হয়। একটি গুদামে ৮০ কেজি ওজনের কমপক্ষে ১২ হাজার বস্তা মজুদ করে থাকে।
নওগাঁ ধান-চাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি নিরোদ সাহা জনকণ্ঠকে জানান, কয়েকটি গুদাম একসঙ্গে করেও এক লাখ মেট্রিক টন ধান গুদামজাত করা সম্ভব নয়। এ ধরনের সিদ্ধানত্ম মজুদ প্রথা ভাঙতে কোন কাজে আসবে না। দেশে এত বড় গুদাম ও ব্যবসায়ী হয়নি, যারা এক লাখ মেট্রিক টন ধান মজুদ করবে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন রাইস মিলে চাল ও ধান মজুদ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তা ধরা পড়েছে। এভাবে মজুদ গড়ে তোলার কারণে খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চালের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এ ধান মজুদ ভাঙতে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৯০ দিন থেকে কমিয়ে ৪৫ দিন করা হয়েছে। পাশাপাশি মজুদের পরিমাণ নির্ধারণ করতে গিয়ে লাখ টনের ইসু্যই শেষ পর্যনত্ম সকল সরকারী পদক্ষেপ ব্যর্থ করে দেবে বলে আশঙ্কা বাজার বিশেষজ্ঞদের।

No comments

Powered by Blogger.