প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে যশোর আ'লীগের কোন্দল মেটাবেন- পাবনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাসায় জেলা নেতৃবৃন্দের দীর্ঘ বৈঠক

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল দীর্ঘদিনের। আর এই কোন্দলকে ঘিরে লাশ পড়ছে অনেক আগে থেকেই। কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে দলের নেতাকমর্ীরা।
এই কোন্দলের কারণে দল বার বার তিগ্রসত্ম হয়েছে। এখনও হচ্ছে, কিন্তু কেন্দ্র নেতৃত্বের যেন কোন মাথাব্যথা নেই। তবে দলের বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক বুধবার রাতে পাবনায় গিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যশোরের পরিস্থিতি ব্যাখা করেন। দলনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন থেকে ফিরলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে এক নেতা জানান।
বর্তমানে দলের নেতৃত্বে ভারসাম্যহীনতার কারণে কারও কারও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা শুরম্ন হয়েছে। এজন্য দলটি বিশৃঙ্খলায় ভরে ওঠে বলে সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মনে করছেন। আর এ কারণে এখন চলছে পরস্পরবিরোধী বাকযুদ্ধ। এর পরিণতিতে আরও রক্ত ঝরতে পারে, পুনরায় ঘটতে পারে বিয়োগানত্মক ঘটনা। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথর্ী আলী রেজা রাজুর প েকাজ করেনি একটি গ্রম্নপ। তারা প্রকাশ্যে নির্বাচন করেছেন বিদ্রোহী প্রাথর্ী কাজী শাহেদ আহমেদের প।ে সেই কোন্দল দীর্ঘদিন ধরে দলে ছিল। এ সময় দলে বিভক্তি দেখা দেয়। জেলা আওয়ামী লীগে এ নাজুক অবস্থায় দলে একজন বলিষ্ঠ সাংগঠনিক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতার প্রয়োজনে খালেদুর রহমান টিটোকে দলে নেয়া হয়। তিনি ২০০৬ সালের ৮ মার্চ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন তার যোগ্য নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠ সাংগঠনিক কাঠামোর ওপর দাঁড়াবে। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা তো ফিরে আসেইনি বরং টিটোকেন্দ্রিক ও রাজু-চাকলাদার কেন্দ্রিক দুটি শক্তিশালী গ্রম্নপের সৃষ্টি হয়। টিটোর বিরম্নদ্ধে জেলা নেতৃত্বের একাংশ এক মঞ্চে সমবেত হয়ে সন্ত্রাসের উস্কানি দেবার অভিযোগ করেন। এ ঘটনাটি ঘটে আনসারম্নজ্জামান কচি নামে এক ঠিকাদার কর্তৃক জেলা সভাপতি আলী রেজা রাজুকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ায়। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তোলেন কচি হচ্ছেন টিটোর অনুগত। তার হুমকির প্রতিবাদে টিটো মুখ না খোলায় নেতৃবৃন্দের কাছে তার ভূমিকা রহস্যজনক মনে হয়।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এক পর্যায়ে দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে খালেদুর রহমান টিটো ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী কতর্ৃক আহত হন। তারা টিটোর শরীরে বিভিন্ন স্থানে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরম্নতর জখম করে। এই হামলায় ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ আব্দুর রাকিব ও অন্যতম নেতা কাজী নাবিল আহমেদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৮ নেতা কর্মীকে দল থেকে সাময়িক বরখাসত্ম করা হয়।
টিটোর ওপর হামলার পরিপ্রেেিত জেলা নেতৃবৃন্দ এক মঞ্চে আসেন। প্রতিবাদে মিছিলও বের করা হয়। ওই মিছিলে রাকিবকে দেখে সেস্নাগান দেয়া হয় 'ধর ধর রাকিবকে ধর, ধরে ধরে জবাই কর'। নেতারা এক মঞ্চে আসলেও সেস্নাগানের ব্যাপারে জেলা সভাপতি সেস্নস্নাগানের জন্য টিটো পকে দায়ী করে বলেন, যাদের দলে যোগদানের বয়স মাত্র কয়েক মাস তারাই ত্যাগী নেতাদের বিরম্নদ্ধে আপত্তিকর সেস্নাগান দিয়েছে। চিকিৎসা শেষে টিটো যশোর ফিরলে দলের প থেকে যে শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করা হয় সেখানে জেলা সভাপতি অনুপস্থিত থাকেন। এসব ঘটনায় বিভক্তি বাড়ে। টিটোকে দলে ভেড়ানোর কারণেই জেলা সভাপতি নাখোশ হন। কারণ এতে সদর আসনে জাতীয় নির্বাচনে তার মনোনয়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
গত সংসদ নির্বাচনের সময় জোড়াতালি দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে নির্বাচন পার করলেও কিছুদিন না যেতেই ফের শুরম্ন হয় সংঘাত। জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে এ সংঘাত শুরম্ন হয়। গত বছর ২ এপ্রিল সরকারী এম এম কলেজে ছাত্রলীগের এক গ্রম্নপ আর এক গ্রম্নপকে কলেজ থেকে অস্ত্রের মুখে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় আহত হয় বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদ ও রবি। অভিযোগ রয়েছে টিটো গ্রম্নপ সমর্থিত ছাত্ররা চাকলাদার গ্রম্নপকে তাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে শিাঙ্গন ছাড়াও সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে বাইরে। এমনই এক অবস্থায় সাত বছর পর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৩ মার্চ। সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি গঠনে ভোট গ্রহণের সময় ঘটে সহিংস ঘটনা। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা রিপন হোসেন প্রতিপরে হামলায় নিহত ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল আজিজ তপু আহত হয়ে মৃতু্যর সঙ্গে লড়ছেন। পাঁচ দিনেও তার অবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। দলের অভ্যনত্মরীণ দ্বন্দ্বে বিভিন্ন সময় আরও ছয় জন অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁরা হলেন মকিম বাবু, বিপস্নব, শহীদ, বাবু, রবি ও ডাকু।
দ্বন্দ্বের রেশ এখনও চলছে। তবে বোমা গুলির যুদ্ধ নয়। এবার চলছে পরস্পরবিরোধী নোংরা বাকযুদ্ধ। যশোরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ সদস্যের একটি দল গত বুধবার রাতে পাবনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘৰণ কথা বলেছেন। দলের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, দলনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন থেকে দেশে ফিরে এলে এই ঘটনার একটা সুরাহা হবে বলে তিনি মনে করেন।
সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো বলেন, আমি নোংরামি পছন্দ করি না। এ কারণে আমাকে অস্ত্রাঘাতে হত্যার চেষ্টা করা হলেও কারও বিরম্নদ্ধে মামলা পর্যনত্ম করিনি। আমি মনে করি ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির কারণেই ঘটেছিল। অনেকে আমাকে বার বার দলত্যাগী বলে মনত্মব্য করেন। কিন্তু দল বদলিয়ে যখন যে দলে গিয়েছি সে দলে নিবেদিতভাবে কাজ করেছি। কাদা ছোড়াছুড়ি এবং পুলিশকে প্রভাবিত করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার একটি অভিযোগও কেউ দিতে পারবে না। তাছাড়া আমি নেত্রীর নির্দেশিত রাজনীতি করি। সেটা হলো দুর্নীতি, কালো টাকামুক্ত স্বচ্ছ রাজনীতি। তিনি দলে সহিংসতার ব্যাপারে কালো টাকার মালিকদের দায়ী করেন।
এ ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, কালো টাকা ও দুনর্ীতিকে প্রশ্রয় দেবার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমি পারিবারিকভাবেই লাখ লাখ টাকা আয় করে থাকি। দল করতে এসে এই মুহূর্ত পর্যনত্ম কারও কাছ থেকে এক টাকা চাঁদাবাজি করেছি এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেন না। দলে কোন গ্রম্নপিং নেই। টিটো-চাকলাদার গ্রম্নপ মিডিয়ার সৃষ্টি। এখানে দল ঐক্যবদ্ধ আছে। জেলা সভাপতি আলী রেজা রাজু বলেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে অনত্মর থেকে ধারণ করতে পারেননি এবং যারা বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধানত্মের বাইরে ভিন্ন প্রার্থীর প েনির্বাচন করেছেন তারাই দলে সহিংসতার জন্য দায়ী।

No comments

Powered by Blogger.