নৃশংসতম ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড-ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় কঠোর সাজার বিধান রেখে অধ্যাদেশ পাস করেছে ভারতের মন্ত্রিসভা

ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের অন্যান্য মামলায় কঠোর সাজার বিধান রেখে গত শুক্রবার একটি অধ্যাদেশ পাস করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। ধর্ষণ ও নৃশংস অন্যান্য অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে অধ্যাদেশে মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে।
বার্মা কমিটির সুপারিশগুলো বিবেচনায় রেখেই মন্ত্রিসভা এ অধ্যাদেশ অনুমোদন করে। গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনার পর নারী নির্যাতন রোধে আইন সংস্কারে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিবেচনা করা হচ্ছে এ অধ্যাদেশকে।
চলন্ত বাসে গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর মৃত্যুর পর নারী নির্যাতন আইন কঠোর করার দাবিতে ভারতজুড়ে গণআন্দোলন তৈরি হয়। দিল্লির ঘটনার পরপরই ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি জগদীশ শরণ বার্মাকে প্রধান করে আইন সংস্কারে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। গত ২৩ ডিসেম্বর বার্মা কমিটি ৬৩০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়। দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনার ৪৬ দিন পর শুক্রবার সরকার নারী নির্যাতনবিরোধী আইন কঠোর করার পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল।
সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সংসদে বিল উত্থাপন করে বার্মা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফৌজদারি আইন সংশোধন করতে অনেক সময় লাগত। তাই বাজেট অধিবেশনের তিন সপ্তাহ আগেই অধ্যাদেশ পাস করে নারী নির্যাতন রোধে আইন কঠোর করল সরকার।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গত শুক্রবার নারী নির্যাতনবিরোধী অধ্যাদেশটি পাস করা হয়। অধ্যাদেশে ধর্ষণের পরিবর্তে 'যৌন হামলা' কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। যৌন নির্যাতন বিষয়টির আওতাও বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) বা ই-মেইল পাঠিয়ে বিরক্ত করা, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, ব্যক্তিগত অবস্থায় লুকিয়ে দেখা, শরীরে হাত দেওয়া, নগ্ন করার চেষ্টা, ইভ টিজিং, অনুসরণ বা পিছু নিয়ে বিরক্ত করা, এসিড ছোড়া এবং নারী পাচারের মতো অপরাধকেও এর আওতায় আনা হয়েছে। তবে বার্মা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ককে যৌন নির্যাতনের আওতায় আনা হয়নি।
বার্মা কমিটির সুপারিশে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু কিংবা একই কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থায়ীভাবে স্বাভাবিক জীবন যাপনে অক্ষম (ভেজিটেটিভ স্টেট) হলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ আমৃত্যু কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে অধ্যাদেশে এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। নারীর বিরুদ্ধে নৃশংস সব অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পুলিশ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ২০ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রচলিত আইনে এই সাজা ১০ বছর ছিল। প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি শিগগির এ অধ্যাদেশে সই করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
ভারতের বিদ্যমান আইনে ধর্ষণের মামলায় সর্বনিম্ন সাত বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে ধর্ষণের পর খুন করা হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
অধ্যাদেশ পাসের পর কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করছি ভারতের নারীরা এখন আগের চেয়ে নিরাপদ বোধ করবে। এটি একটি যুগোপযোগী আইন এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এটি প্রণয়ন করা হয়েছে।' স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিং জানান, মূলত বার্মা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই নারী নির্যাতনবিরোধী আইন সংশোধিত হচ্ছে। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.