মুরসির প্রাসাদের সামনে বিক্ষোভ- গুলিতে নিহত ১

মিসরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত একজন মারা গেছে। গত শুক্রবার রাজধানী কায়রোয় প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে সংঘটিত ব্যাপক ওই সংঘাতে আহত হয়েছে ৫৩ জন। পুলিশ জানিয়েছে, ২০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভবনসংলগ্ন এলাকা ছাড়াও রাজধানীর তাহরির স্কয়ারেও এদিন হাজারো মানুষ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিবিরোধী বিক্ষোভ করেছে। সেনা উপস্থিতি উপেক্ষা করে সুয়েজ খালসংলগ্ন শহরগুলোতে এবং ভূমধ্যসাগরীয় শহর আলেকজান্দ্রিয়ায় এদিন রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের পতনের লক্ষ্যে দুই বছর আগে শুরু হওয়া বিপ্লবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন মুরসি। বিক্ষোভকারীরা মুরসির পদত্যাগ দাবি করে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা 'চূড়ান্ত প্রতিরোধমূলক' পদক্ষেপ নেবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন মুরসি। যাঁরা সহিংসতায় জড়িত থাকবেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ধর্মীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বৈঠককে স্বাগত জানান মুরসি।
ওই বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনায় বসার ব্যাপারে একমত হয়েছে বিরোধী ও সরকার সমর্থক ইসলামপন্থীরা। একটি সনদে সই করে তারা বিক্ষোভের নামে সহিংসতারও নিন্দা জানিয়েছে। বৈঠকে যোগ দেওয়া বিরোধীদের জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্টের (এনএসএফ) নেতা মোহাম্মদ এলবারাদি বলেন, আলোচনার টেবিলে বসে সংকট নিরসনের ব্যাপারে তিনি 'আশাবাদী'। মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্তর্ভুক্ত ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির প্রধান সাদ এল-কাতাতনি দিনটিকে 'ঐতিহাসিক' বলে অভিহিত করেন।
সরকারি দলের সঙ্গে এ সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে এনএসএফ। মুরসিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের 'সর্বোচ্চ সংযম' দেখানোরও আহ্বান জানায় তারা। গত ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক বিক্ষোভের অংশ হিসেবে এদিনের কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল এনএসএফ-ই।
তবে শুক্রবার বিক্ষোভের কয়েক ঘণ্টা আগে এলবারাদি সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক টুইটারে লেখেন, 'নতুন সরকার, গণতান্ত্রিক সংবিধান ও স্বাধীন বিচার বিভাগ- জনগণের এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সহিংসতা ও অস্থিরতা থামবে না।' বিশ্লেষকদের ধারণা, সংঘাতে জড়িয়ে পড়া বিক্ষোভকারীদের ওপর বিরোধী জোট সামান্য হলেও প্রভাব ফেলছে। প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে মুখোশ পরা এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'এনএসএফ কেবল তাদের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা মুরসি বা বিরোধী কারোর কর্মকাণ্ডেই সন্তুষ্ট নই।'
২৫ জানুয়ারি স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকবিরোধী বিপ্লবের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আগের দিন থেকেই রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা। তাদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন মারা যায়। গত বছর পোর্ট সাইদ শহরে সংঘটিত ফুটবল মাঠের দাঙ্গা মামলার রায় ঘোষণা হয় ২৬ জানুয়ারি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। সহিংসতার কেন্দ্রস্থল পোর্ট সাইদ, সুয়েজ ও ইসমাইলিয়ায় জরুরি অবস্থা ও সান্ধ্য আইন জারি সত্ত্বেও গত সপ্তাহে প্রায় ৬০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এদিকে গত সপ্তাহে তাহরির স্কয়ারসহ অন্যান্য জায়গায় ২৫ জন নারী যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে জাতিসংঘ দাবি করেছে। এরপর শুক্রবার থেকে তাহরির স্কয়ারে এক ডজন স্বেচ্ছাসেবী যোগ দিয়েছে। তারা বিক্ষোভে যোগ দেওয়া নারীদের যৌন নিগ্রহের হাত থেকে রক্ষায় 'বডিগার্ড' হিসেবে কাজ করবে। সূত্র : এএফপি, এপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.