মোবাইলে প্রতারণা?

মোবাইলফোন সারা বিশ্বে জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই বিস্ময়কর প্রযুক্তি পৌঁছে গেছে।
এখন আর শহরে বসবাসকারী সন্তানকে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চিঠি লিখতে হয় নয়। আগে চিঠি পৌঁছাতে লেগে যেত চার পাঁচদিন। কিন্তু এখন বাংলাদেশে নিমেষেই যোগাযোগ করা সম্ভব মোবাইলফোনের মাধ্যমে। এর ব্যবহার পদ্ধতি এত সহজ যে, রিকশাওয়ালা, কৃষক, গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত মহিলা যে কেউ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম। প্রযুক্তির এই উন্নতি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ব্যবসায়ীরা অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ টেলিফোনেই সারছেন। এমনকি ইদানীং টাকা পাঠানোর বিষয়টিও নিরাপদে মোবাইলফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। যত দূরেই থাকুন না কেন, টাকা পাঠানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য খরচ তেমন বেশি নয়। সুতরাং প্রযুক্তির উন্নতিকে কিছুতেই চেপে রাখা সম্ভব নয়। যা মানুষের উপকারে লাগে, তা মানুষ ব্যবহার করবেই এবং তার জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বাড়বেই। যেমনটি হয়েছে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে। সমাজজীবনে উপযোগিতার কারণেই এর চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বস্তরের কয়েক কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন।
তবে সবকিছুর কমবেশি ভালোমন্দ আছে। যে মোবাইলফোন বাংলাদেশে সর্বস্তরের অসংখ্য মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে, তার কিছু অপব্যবহারের দৃষ্টান্তও আছে। দলবদ্ধ সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা নিজেদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এতে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে সুবিধা হচ্ছে। এ জন্য মোবাইল ফোন প্রযুক্তির কোন দোষ আছে কি? বরং চিহ্নিত সন্ত্রাসী বা অপরাধীরা যাতে নিজেদের নামে মোবাইলফোন না রাখতে পারে সে লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। মোবাইলফোনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব হচ্ছে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক গড়ে উঠছে। সম্প্রতি রাজধানীতে মোবাইলের মাধ্যমে গড়ে ওঠা প্রেমের করুণ পরণতির খবর পাওয়া গেছে। প্রেমিক কর্তৃক প্রেমিকাকে খুনের মাধ্যমে ]মোবাইলফোনের প্রেমের সমাপ্তি ঘটেছে। ফোনে প্রেম করার সময় প্রেমিক ও প্রেমিকা নিজেদের সম্পর্কে ভালভাবে জানত না। ফোনে প্রেম হওয়ার পর দু’জনের দেখা-সাক্ষাত হলে আসল খবরটা তারা জানতে পারে। প্রেমিক জানতে পারে তার প্রেমিকা বিবাহিত ও দু’ সন্তানের জননী। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে সে প্রেমিকাকে খুন করে। এরপর পলাতক প্রেমিককে পুলিশ ধরে কারাগারে পাঠিয়েছে। এতে মোবাইল ফোনের কোন দোষ আছে কি? বরং প্রেমের নামে প্রতারণার জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মোবাইলফোন ব্যবহারের বিষয়ে তাই সবারই সতর্ক থাকা দরকার।
উল্লেখিত খুনের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এব্যাপারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হবে- এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.