পরিযায়ী পাখির দেহে স্যাট ট্রান্সমিটার ও রিংগিং শুরু

বার্ডফু বা এভিয়েন ইনফুয়েঞ্জা শনাক্ত করতে এবার দেশে শুরু হয়েছে পরিযায়ী পাখির মধ্যে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন ও বার্ড রিঙ্গিংয়ের কাজ। স্যাটেলাইট স্থাপন করে এসব পাখি থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গবেষণা করা হবে।
তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর পাখিগুলোকে আবার অবমুক্ত করা হবে। স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে দেশের সকল পাখির মাইগ্রেশন রুটের তথ্য ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের বিশেষজ্ঞরা সংগ্রহ করবে এবং তা বন অধিদফতরকে সরবরাহ করবে।
এজন্য পরীৰামূলকভাবে ৩ মার্চ থেকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, পাশ্ববর্ত্বী হাকালুকি হাওড় এলাকায় ফাঁদ পেতে চলছে পাখি ধরার কাজ। এভিয়েন ইনফুয়েঞ্জার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধানত্মক্রমে ওয়ার্ল্ড ট্রাস্ট লাইফ, বনবিভাগ ও বাংলাদেশ বার্ড কাবের বিশেষজ্ঞরা পাখি ধরার কাজ তদারকি করছেন। ইতোমধ্যে গত ৫ তারিখে মিস্টনেট ও তারের ফানেল ফাঁদে আটক হওয়া ১টি খয়রা, চখাচখি (রাডিশেল ডাক), একটি গিরিয়া হাঁস (গারগেনি) ও পিয়াংশ হাঁসে (গাডওয়াল) ৫ গ্রাম ওজনের ৩টি স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছে। ট্রান্সমিটার লাগানোর সময় এসব হাঁস ও পরিযায়ী পাখির ওজন মাপা হচ্ছে। কারণ ট্রান্সমিটারের ওজন হাঁসের ওজনের শতকরা ৩ ভাগের মধ্যে থাকতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩০টি পাখিকে রিং পরানো ও সোয়াব সংগ্রহের পর অবমুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ইনফুয়েঞ্জা ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য চলছে তাৎৰণিক গবেষণার কাজ।
শীতের তীব্রতা কমে আসার কারণে এ বছর সীমিতভাবে ২০ জাতের পাখিকে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার পরানোর সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধানত্মক্রমে এ ২০টি জাতের মধ্যে মোট ৫শ' পাখিকে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার রিং ও মলমূত্র পরীৰার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। বর্তমানে যেসব পরিযায়ী হাঁস দেশের বাইরে সাইবেরিয়া, চীন, নেপাল ভারতসহ বিভিন্ন দেশ অতিক্রম করে থাকে এমন পাখি ধরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার পরানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। ২০০৩ সালে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে বার্ডফু মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে সকলের মধ্যে ধারণা স্পষ্ট হতে থাকে, বিদেশী অতিথি পাখির দ্বারা এ ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তখন এমনটা অনুমান করা হলেও এর সমর্থনে জোরালো যুক্তি ছিল অনুপস্থিত। এসব অভিযোগের প্রেৰিতেই বিদেশী পাখিরা কোন ভাইরাস বহন করছে কিনা তা নিয়ে শুরম্ন করা হয়েছে গবেষণার কাজ।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রম্নয়ারি বন অধিদফতরের অডিটরিয়ামে ওয়ার্ল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ, বনবিভাগ, বাংলাদেশ বার্ড কাব, এফএও, বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে ও আইসিডিডিআরের যৌথ উদ্যোগে পরিযায়ী পাখির ওপর একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেশ-বিদেশের একাধিক পাখি বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। এ সেমিনারের ফলের ওপর ভিত্তি করে গত ১ মার্চ সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার ও বার্ড রিঙ্গিংয়ের মাধ্যমে এভিয়েন ইনফুয়েঞ্জার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য হাতেকলমে প্রশিৰণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র, শিৰক ও গবেষক। এ প্রশিৰণের পরেই বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধানত্মক্রমে ডবিস্নউটিবিও ও আইসিডিডিআরকে সম্পৃক্ত করে পরীৰামূলকভাবে শুরম্ন করা হয়েছে ট্রান্সমিটার স্থাপনের কাজ।
পাখিদের দেহ থেকে ভাইরাস শনাক্তকরণের এ পদ্ধতি দেশে নতুন হলেও অনেক আগ থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাখি ধরে মলমূত্র ও রক্ত নিয়ে গবেষণা চলছে। এক পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা অতিথি পাখি ধরে মার্কিং, বেন্ডিং, রিঙ্গিং ও স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার পরানোর কাজ শুরম্ন করে। উপমহাদেশে প্রায় ৫০ বছর আগে এ কাজে হাত দিয়েছিলেন বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ সলিম আলী। তারপর বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি প্রতিবছর এ ভাইরাস পরীৰা করে আসছে। বিশেষ করে ছোট আকারে স্যাটেলাইট আবিষ্কার হওয়ার পর পাখির দেশানত্মরী যাত্রা পর্যবেৰণ সহজ হয়ে গেছে। কম্পিউটারের ওয়েবসাইটের মধ্যে অবলোকন করা যাচ্ছে পাখি কোন দেশে যাচ্ছে বা কোথায় অবস্থান করছে। এতদিন এ কাজে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্তকরণে দেশে নতুন মাত্রা যোগ হলো।
বন সংরৰক ড. তপন কুমার দে জানান, কয়েক দশক আগেও দেশে ৬২০ প্রজাতির পাখি ছিল। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ প্রজাতিতে। এর মধ্যে ৩১০ প্রজাতি স্থায়ী বাসিন্দা এবং ১৭৬ প্রজাতি পরিযায়ী। তিনি বলেন, চলমান গবেষণার কাজটি খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.