শিবির বিদ্রোহ সামাল দিতে পারছে না জামায়াত

সদস্যদের ভোটে নয়, বরং জামায়াতের তিন নেতা ও শিবির সভাপতি রেজাউল করিমের ইচ্ছা অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে শিবিরের নতুন কার্যকরী পরিষদ। রেজাউল করিমের পৰে বার বার স্বতঃস্ফূর্ত ভোটের দাবি করা হলেও নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন সারাদেশের ৪ হাজার ১৩৪ শিবির সদস্যের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২০০ জন।
বিদ্রোহীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বাকি প্রায় তিন হাজার শিবির সদস্যই নির্বাচন বর্জন করেছেন। যাঁরা ভোট দিয়েছেন তাঁদেরও অধিকাংশ ভোট পরেছে বিদ্রোহী নেতাদের পৰে। কেবল তাই নয়, অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতাদের মদদপুষ্ট হওয়ায় অছাত্র, বিবাহিত, ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে নতুন কার্যকরী পরিষদ। ইবনেসিনায় চাকরিরত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অছাত্র ডা, ফখরম্নদ্দিন মানিককে করা হয়েছে সেক্রেটারি।
জানা গেছে, বিদ্রোহ সামাল দেয়ার আশায় তড়িঘড়ি করে গত ২৭ ফেব্রম্নয়ারি ছুটির দিনেই শিবিরের নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠন করেছিল জামায়াত শিবির নেতারা। ঐদিনই শিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম নির্বাচনকে সঠিক ও সুন্দর বলে দাবি করে বলেন, সারাদেশে তাদের সদস্যগণ সতঃস্ফূর্তভাবে পরিষদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছেন। কিন্তু 'সেভ শিবিরে'র ব্যানারে আন্দোলনরত সারাদেশে শিবিরের কর্মী, সমর্থক, সাথী ও সদস্যরা ঐ দিনই সেক্রেটারি ও পরিষদ গঠনকে অবৈধ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। একই সঙ্গে তাঁরা দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে জামায়াত নেতা মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম খান, নুরম্নল ইসলাম বুলবুল এবং শিবির সভাপতি রেজাউল করিমকে দেশব্যাপী প্রতিরোধের ডাক দেন। বিদ্রোহীদের শক্ত অবস্থানে কমিটি গঠনের এক সপ্তাহেও অভ্যনত্মরীণ সঙ্কট কাটাতে পারেনি জামায়াতের এই সংগঠনটি। বরং একে একে বেরিয়ে আসছে অভিযুক্ত ৩ জামায়াত নেতা এবং শিবির সভাপতির ইচ্ছেমতো কমিটি গঠনের নানান তথ্য। বিদ্রোহীরা এবার ঘোষণা দিয়েছেন, দুর্নীতিবাজ নেতাদের মদদপুষ্ট সেক্রেটারি ও পরিষদ মানা হবে না। আবার প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আনা হয়েছে অছাত্র, বিবাহিত, ব্যবসায়ীদের। সূত্র জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ে সদস্যদের বৃহৎ অংশই 'বিদ্রোহীদের পৰে। ফলে জামায়াত নেতারা জোর করে কিছু চাপাতে চাইলেও তা মানছে না শিবিরের কর্মী, সমর্থক, সাথী ও সদস্যরা। সারাদেশে শিবিরের মোট সদস্য হলো ৪ হাজার ১৩৪। যাদের মধ্যে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১২শ'। বাকি ২ হাজার ৯৩৪ জনই নির্বাচন বর্জন করেছে। আবার যে ১২শ' ভোট দিয়েছেন তাদের একটি বড় অংশ বিদ্রোহীদের পৰে বলে দাবি করেছেন বিদ্রোহীরা। এই সদস্যদের ভোটেই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ১০ পদত্যাগী কার্যকরী সদস্য। যদিও এতো পরে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্রোহীরা জামায়েত নেতাদের অবৈধ হসত্মৰোপ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, জামায়াতের গুটিকয়েক নেতার অবৈধ হসত্মৰেপ আজ শিবিরের এই অবস্থা। যতদিন এই লোভী, দুনর্ীতিবাজ লোকদের হাত থেকে শিবির মুক্ত না হবে ততদিন সংগঠিত হতে পারবে না শিবির। বিদ্রোহীরা সভাপতি রেজাউল করিমকে দুর্নীতিবাজ অভিহিত করে বলেন, সংগঠন ভেঙ্গে সেও আজ প্রকাশ্যে চলার সাহস পায় না। ভয়ে জামায়াতের অফিস আর নিজ বাসা ছাড়া কোথাও যাওয়ার সাহস নেই অবৈধ সভাপতি রেজাউল করিমের।
বিদ্রোহীরা তাঁদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, শিবিরের নতুন পরিষদ আমরা সারাদেশের কর্মী, সাথী, সমর্থক ও সদস্যরা মানি না। মানব না কখনই। কারণ শিবিরের অধিকাংশ সদস্য এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। জামায়াতের কয়েক নেতা ও শিবির সভাপতি রেজাউল করিম তাদের ইচ্ছেমতো এই পরিষদ গঠন করেছে। কারও ইচ্ছায় নয়, বরং সংবিধান অনুযায়ী নতুন করে সভাপতি-সেক্রেটারি নির্বাচন করতে হবে। ভোটে যারা আসবে তারাই পরিষদ গঠন করবে। অছাত্র, বিবাহিত, ব্যবসায়ীদের সরিয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রকৃত ছাত্রদের আনতে হবে। নির্বাচনে জেতার পরেও যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় দাবি বাসত্মবায়ন না হওয়া পর্যনত্ম দেশব্যাপী বিদ্রোহ চলবে।

No comments

Powered by Blogger.