র‌্যাংকসটেলের সুইচ সেন্টার সিল, ৩ কর্মকর্তা আটক- অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি র‌্যাংকস টেল কর্তৃপক্ষের

 অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাংকসটেলের সুইচ সেন্টার সিলগালা করেছে বিটিআরসি। সেইসঙ্গে ৩ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ সরকারী তদন্ত দাবি করেছে র‌্যাংকসটেল কর্তৃপক্ষ।
বিটিআরসি ও র্যাব সূত্র জানায়,র‌্যাংকসটেলের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার খবরটি বিটিআরসির কাছে আগেই যায়। পরে র‌্যাংকসটেলের সঙ্গে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার বিষয়টি তদন্ত করতে বিটিআরসি ও র‌্যাব পৃথক অনুসন্ধানী দল গঠন করে। বিষয়টি তদন্ত করতে ভিওআইপি এক্সপার্টদের নিয়ে বিটিআরসি একটি অনুসন্ধানী দল গঠন করে। অন্যদিকে র‌্যাবের তদন্ত দলটিও মাঠে নামে। পৃথক দল দু'টি দীর্ঘদিন ধরেই র‌্যাংকসটেলের ওপর নজরদারি ও তাদের কললিস্ট যাচাই বাছাই করে আসছিল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুসন্ধানী দল দু'টি ইস্কাটনের র‌্যাংকসটেলের হেড অফিসে অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা র‌্যাংকসটেলের হেড অফিস থেকে কললিস্ট যাচাই করে। এ সময় বেশ কিছু ডাটাও সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে বিলিং সিস্টেমের কাগজপত্রও দেখা হয়। পরবর্তীতে রাত ৩টা পর্যন্ত সংগ্রহ করা কাগজপত্র, বিলিং কপি ও ডাটা যাচাই বাছাই করে বিটিআরসি ও র‌্যাবের গোয়েন্দারা র‌্যাংকসটেলের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
এরপরই গভীর রাতে বিটিআরসির উর্ধতন কর্মকর্তা ও র‌্যাবের উর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জরুরী বৈঠক করে। বৈঠকে রাতেই র‌্যাংকসটেলের সুইচ সেন্টারে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় অনুসন্ধানী দল ২টিকে সঙ্গে নিয়ে বিটিআরসি ও র‌্যাবের উর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তেজগাঁও ১৪৭ নম্বর নভো টাওয়ারে অভিযান চালায়। শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত টানা অভিযান চলে। র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, অভিযানকালে র‌্যাংকসটেলের জিএম (টেকনিক্যাল) কামরুজ্জামান, ডিজিএম (সেলস) করিম ইকবাল ভূঁইয়া ও ডিজিএম (টেকনিক্যাল) মমিনুর রহমান চৌধুরীকে সুইচ সেন্টারে পাওয়া যায়। পরে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের সবার বেতন লাখ টাকার ওপর। একজন উর্ধতন কর্মকর্তার গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে সুইচ সেন্টারে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করার বিষয়টি নিশ্চিত হয় বিটিআরসি ও র‌্যাব। অনুসন্ধানী দল ২টি সরকারের কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়। পরে বিটিআরসি র‌্যাংকসটেলের সুইচ সেন্টারটি সিলগালা করে দেয়।
বিকালে ইস্কাটনের বোরাক টাওয়ারে রাংকস টেলের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাংকসটেলের চীফ অপারেটিং অফিসার কালাম আজাদ দাবি করেন, রাংকসটেল অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। বিটিআরসি ও র‌্যাব র‌্যাংকসটেলের সুইচ সেন্টারে অবৈধ কোন কিছুই পায়নি। পরে রাংকস গ্রুপের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর এনামুর রেজা দীপু প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র‌্যাংকসটেল ২০০৪ সাল থেকে সুনামের সঙ্গে এদেশের মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে। বিটিআরসি বিধিবহির্ভূতভাবে র‌্যাংকসটেলের সুইচ সেন্টার সিলগালা করেছে। কোন পিএসটিএন কোম্পানি অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলে বিটিআরসি কোম্পানিকে জরিমানা করতে পারে। ইতোপূর্বে কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানি ও পিএসটিএন কোম্পানিকে জরিমানা করেছে বিটিআরসি। কিন্তু তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়নি। ব্যাংক, বীমা, জরুরী সার্ভিস, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ৩ লাখ গ্রাহক রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রায় ৫শ' কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। প্রায় ৫শ' টেকনিক্যাল কর্মী প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। সুইচ সেন্টার সিলগালা করার ফলে প্রতিষ্ঠানের দৈনিক ২০ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে। সুইচ সেন্টার সিলগালা করার বিষয়টি নিরপেৰ সরকারী তদন্ত দাবি করেছে র‌্যাংকসটেল কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.