প্রজন্ম চত্বর পঞ্চম দিনেও কানায় কানায় পূর্ণ ॥ প্রাণের বদলা নিতে প্রাণ মেতেছে

 বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে শাহবাগের আন্দোলন। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার প্রতিবাদী কণ্ঠ। ক্ষেভে বিক্ষোভে ফুঁসে লাখো জনতার ঢল নেমেছে রাজপথে।
পঞ্চম দিনের মতো মিছিল আর স্লোগানে দিনভর উত্তাল ছিল শাহবাগ। এতে সংহতি প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ইউনিফর্ম পড়ে যোগ দিয়েছে তারুণ্যের বিদ্রোহে। হাজার-হাজার প্রতিবাদী কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে-‘কারা মোর ঘর ভেঙ্গেছে স্মরণ আছে/ গ্রেনেড রাইফেলে আজ/ যে সাথীর প্রাণ গিয়েছে/ সে প্রাণের বদলা নিতে/ প্রাণে প্রাণ আজ মেতেছে’ এরকম অসংখ্য গণসঙ্গীত। ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, গণস্বাক্ষরসহ ব্যঙ্গচিত্র আর কবিতায় রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা জানিয়েছেন সবাই। সন্ধ্যার পর কানায় কানায় পূর্ণ হয় গণজাগরণ চত্বর। মোম আর মশালের আলোয় আলোকিত হয় পুরো এলাকা। আলোর মোহনায় এসে শামিল হন দেশপ্রেমিক জনতা। এখান থেকে সকলেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে কোন আপোস রফার চেষ্টা হলে পরিণাম শুভ হবে না।
এদিকে গণজাগরণের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় আমার দেশ ও নয়াদিগন্ত পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে আমার দেশ ও নয়া দিগন্ত পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ করার আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ মঞ্চ থেকে। কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামানের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিলের জন্য রাজধানীতে অনশন করেছে সাংবাদিকরা। দুপুরে এক মহিলা ভিক্ষুক পোস্টার হাতে নিয়ে শাহবাগে এসে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। পোস্টারে লেখা ছিল-‘ভিক্ষা চাই না-রাজাকারদের ফাঁসির পর রাজপথ ছাড়ব।’ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। শাহবাগের আন্দোলন বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী ও জামায়াত-শিবির।
চলছে ভাষার মাস। আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি। তাই তরুণদের মনেপ্রাণে এখন একুশের চেতনা। বিপ্লবী মন। ২১ যত ঘনিয়ে আসছে চেতনার প্রদীপ জ্বালিয়ে শাহবাগের দিকে ছুটে আসছে তরুণ সমাজ। বাড়ছে ভিড়। দেশপ্রেমের ডাকে কেউ ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে পারছেন না। আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সবারই যেন দাবি একটাই-‘জামায়াত শিবির রাজাকার/রক্তচোষা জানোয়ার।’ তাই তাদের সঙ্গে কোন আপোস নয়। তরুণ সমাজের দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না। স্লোগানে স্লোগানে বলছেন-‘আমাদের ধমনীতে/শহীদের রক্ত/এ রক্ত কোন দিনও/ বৃথা যেতে দেবনা। বুকের ভেতর জ্বলছে আগুন/ সারা বাংলায় ছড়িয়ে দাও/ জয় বাংলা/ তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা/ পাকিস্তানের প্রেতাত্মা/পাকিস্তানে ফিরে যা/ কাদের মোল্লা-নিজামী-কামারুজ্জামান-সাঈদী-বাচ্চু-সাকা’র কবর হবে পাকিস্তানের মাটিতে।’
একুশের চেতনায় বর্ণমালার অক্ষরে চলছে আন্দোলন। পেয়েছে নতুন মাত্রা। যেমন-‘ক’ তে কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামান, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার, ‘গ’-তে গোলাম আযম-তুই রাজাকার, তুই রাজাকার/ ‘ব’ তে বাচ্চু-তুই রাজাকার, তুই রাজাকার/ ‘জ’-জামায়াত, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার। বর্ণমালার আদ্যক্ষর মিলিয়ে দেয়া হচ্ছে নানা স্লোগান। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগেও চলছে রাজাকারবিরোধী আন্দোলন। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মন্তব্য লিখছেন লাখো মানুষ।
বিশ্বজুড়ে আন্দোলন ॥ গত মঙ্গলবার থেকে ব্লগারদের ডাক দেয়া আন্দোলন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন বিশ্বজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। ফুঁসে উঠেছেন প্রবাসী বাঙালীরা। সবার চোখে মুখে এখন বিদ্রোহের ছাপ। কণ্ঠে বিপ্লবী স্লোগান। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামছেন। সংহতি প্রকাশ করছেন শহাবাগ প্রজন্ম স্কয়ারের আন্দোলনের প্রতি। তাদেরও দাবি একটাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছেন এই আন্দোলনে।
শুক্রবার লন্ডনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি আরও তীব্র করার শপথ নিয়েই শেষ পর্যন্ত ঘরে ফিরেছেন ব্রিটেন প্রবাসীরা। শহীদ মিনারে আসতে বাঁধা সৃষ্টি করে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের লোকজন। এ দিয়ে দেখা দেয় ক্ষোভ। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনরত তরুণ-তরুণীরা সকল যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেন। ফুল দিয়ে ঘরে ফেরার পথে শহীদ মিনার গেট থেকে বেরিয়ে এলে আন্দোলনকারী তরুণদের কারও কারও ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে জামায়াত ক্যাডাররা। এছাড়া সৌদি আরব, আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া, তাহরির স্কয়ার, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালীরা বিক্ষোভ করেছে।
অস্ট্রিয়া প্রবাসীরা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন এ আন্দোলনের সঙ্গে। কাদের মোল্লাসহ একাত্তরের জল্লাদদের ফাঁসির দাবিতে ৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার আলটেলায় প্রবাসী বাঙালীদের এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলমত নির্বিশেষে ঘাতকদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাঙালী এতে উপস্থিত হন। কোন সংগঠনের আহ্বানে নয়, বরং নিজ নিজ উদ্যোগে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বতঃস্ফূর্তভবে সবাই একসঙ্গে জড়ো হন, যা সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
অচেতন হয়ে গেলেন এক আন্দোলকারী ॥ শাহবাগে গণজাগরণ চত্বরে টানা পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন চলছে। শুক্রবারের মহাসমাবেশের পর থেমে নেই তারুণ্যের জোয়ার। আন্দোলন চলছে। পঞ্চম দিনের মাথায় অনেকেই ক্লান্ত। ২৪ ঘণ্টার পরিশ্রম যেন আর সইছে না। শনিবার দুপুরের পর এক তরুণ প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। সহকর্মীরা তাকে ধরে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
সংহতি জানালেন মতিয়া ও গওহর রিজভী ॥ অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী এসেছিলেন সংহতি জানাতে। তাঁকে কাছে পেয়ে মহাখুশি তরুণ সমাজ। করতালির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানান সবাই। তবে কোন বক্তব্য দেননি মতিয়া। বলেন-আমি তোমাদের আন্দোলনের সঙ্গে শুধুমাত্র সংহতি জানাতে এসেছি। গত চার দিনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাহারা খাতুন, মাহাবুব-উল আলম হানিফ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিতে আসতে লাঞ্ছিত হন। শনিবার গণজাগরণ চত্বরে (শাহবাগ) সংহতি জানাতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনগণের অবস্থানের সঙ্গে সরকারের অবস্থানের কোন পার্থক্য নেই। এখানে সমবেত সবার উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। মতের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সবাই একমত।
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে যাব জীবনের জয়গান ॥ একজন মুক্তিযোদ্ধা কখনই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না এটাই স্বাভাবিক। তার কর্মে, চিন্তায় বিপ্লব, প্রতিবাদ আর সত্যের অমোঘ বাণী এমন এক মুক্তিযোদ্ধাকে দেখা গেল শাহবাগে। এক হাতে পানির বোতল। আরেক হাতে একটি লাঠি। সঙ্গে দৈনিক পত্রিকা। একা এদিক সেদিক হাঁটছেন। ষাটোর্ধ এই মানুষটির চোখ মুখে কিসের যেন অপ্রাপ্তি আর ক্ষোভ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন। বাড়ি গাজীপুরে। কচুক্ষেতে থাকেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের মহাসমাবেশে সংহতি জানাতে আসেন। বললেন, দেশ স্বাধীন করেছি যুদ্ধ করে। আবার যারা দেশের, দেশ মায়ের বিরোধিতা করেছিল তাদের ফাঁসির দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। বড় হতভাগা আমরা বাবা। কথাগুলো বলেও যেন আর বলতে পারলেন না। চোখ ভিজে যায়। তবু বলেন, দাবি একটাই, ফাঁসি চাই রাজাকারদের। শিক্ষকতা করতেন জালাল উদ্দিন। জানালেন, ২২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশকে বাঁচাতে। যুদ্ধ করেছেন তিন নম্বর সেক্টরে। জালাল উদ্দিন বলেন, এখানে এসে একটি তৃপ্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। এই নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেম দেখে ভাল লাগছে। যে আশা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম আজকের এই প্রজন্ম পারবে সেই আশা পূরণ করতে। এগিয়ে যেতে হবে ওদের। ওদের সাহস যোগাতে নিজের মনের টানে আজ এখানে এসেছি।
লাশের অপেক্ষায় কফিন ॥ কফিনের আয়োজন শেষ। অপেক্ষা লাশের। লাশ এলেই কফিনে পুরে পাঠিয়ে দেয়া হবে পাকিস্তানে। ঘৃণিত সব রাজাকারের কবর হবে সেখানে, তাদের প্রিয় ভূমিতে। যারা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে না। এদেশের স্বাধীনতা, ভাষা কোন কিছুই তাদের কাছে প্রিয় নয়। বাংলাদেশে থেকে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। ‘৭১-এর ঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে চলমান গণআন্দোলনের পঞ্চম দিনে একটি কফিন নিয়ে আসেন আন্দোলনকারীরা। সেই কফিনে লেখা, ‘সিকিউরিটি চেকড-রাজাকারের কফিন-পার্সেল ফর পাকিস্তান।’ আরও লেখা ‘কাদের মোল্লা কবে আসবি এই কফিনে?’ অপর এক কফিন এনেছেন বিএএফ শাহীন কলেজের ছাত্ররা। তাতে লেখা-‘কফিন রেডি, লাশ কই?’
কফিনগুলো ঘিরে রাখেন ক’জন আন্দোলনকারী। কফিনের পাশে বড় ব্যানারে রাজাকারবিরোধী স্লোগান। কদাকার, বীভৎস ছবিতে রাজাকারের চোখ ফুঁড়ে যেন ফুটে উঠছে নৃশংসতা, বেরিয়ে এসেছে রক্তচোষা লকলকে জিভ। আন্দোলন চত্বরে কফিনগুলো নজর কাড়ছে সবার। পিঠে কাগজের ঝাঁপি বয়ে চলা এক কিশোরী এক টুকরো সবুজ কাপড় দিয়ে রাজাকারের জিভ ঢেকে দিল হঠাৎ। আন্দোলনকারীরা জানালেন, তারা কফিনের ডালা বন্ধ করার অপেক্ষায় আছেন। লাশ এলেই ডালা এঁটে এই কফিনটি পাঠানো হবে রাজাকারদের আস্তানা-পাকিস্তানের মাটিতে। তাদের বক্তব্য এদের কবর দেশের মাটিতে হবে না। তাহলে লাখো শহীদ কষ্ট পাবে।
শিবির আয় ॥ বৃহস্পতিবার কয়েক শিবির কর্মীকে ধরে গণধোলাই দেয়া হয়েছে শহবাগ স্কয়ারে। এর পরও গণজাগরণ ঘিরে জামায়াত-শিবির চক্রের অপচেষ্টা থেমে নেই। শুক্রবারের মহা-সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই হলের দুই শিবির নেতা এসেছিল এখানে। ঘোষণা মঞ্চ থেকে তাদের সতর্ক করা হয়। শনিবারও এক শিবির কর্মীকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানান-জামায়াত শিবির গোষ্ঠী আন্দোলনে নাশকতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে ছাড়া হচ্ছে উসকানিমূলক লিফলেট। অকারণে অনেকে ছবি তুলছেন। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই তাদের দিক থেকে আমরা সতর্ক অবস্থানে। শনিবার ঘোষণা মঞ্চ থেকে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়- জামায়াত-শিবিরের কর্মী হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলে বা প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। শিবিরের উদ্দেশে বলা হয়-সাহস থাকলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে সামনে আয়। আমরা প্রতিরোধ করব।
প্রতিবাদী হলো স্কুলের শিশুরাও ॥ লাখো শহীদ ডাক পাঠালো/ সব সাথীদের খবর দে/ সারা বাংলা ঘেরাও করে/ জামায়াত-শিবির কবর দে।’ শাহবাগের প্রতিবাদী মানুষের এ আহ্বানে সারা দিয়ে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে গণজাগরণে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। সকল রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে স্কুল থেকে বিক্ষাভ মিছিল নিয়ে অবস্থান কর্মসূচীতে যোগ দেয় তারা। ব্যানার ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ডে লেখা হয় রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান। সংহতি প্রকাশ করে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে যোগ দেন। প্রতিবাদী স্লোগানে সরকারী বিজ্ঞান কলেজের শির্ক্ষীদের জমায়েত সকলের নজর কাড়ে।
গলা ঠিক রাখার ওষুধ ও খোলা চিঠি ॥ টানা স্লোগান দিয়ে গলা বসিয়ে ফেলা বিক্ষোভকারীদের জন্য ওষুধ পাঠালেন এক হোমিও চিকিৎসক। সঙ্গে লিখে দিলেন খাওয়ার নিয়ম। খোলাচিঠিতে সকালে ৫টি ও বিকেলে ৫টি বড়ি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বদরুদ্দিন নামের ওই চিকিৎসক লেখেন- কোন বিশ্রাম ছাড়াই সেøাগান দিতে থাকবেন। আমার ওষুধে যদি কাজ না হয় তাহলে বুঝব, আমি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই না। গণমঞ্চ থেকে মাইকে অষুধের খবর দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কিছু প্রতিবাদকারী ওষুধ নেয়া শুরু করেন। গত পাঁচ দিনে ধরে যারা টানা আন্দোরনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের গলা বসে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাইতো গলা ঠিক রাখতে হোমিও ওষুধ খেলেন আন্দোলনকারীরা।
অনশনে ককটেল ॥ যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিলের দাবিতে চলমান অনশন কর্মসূচীর পাশে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে কর্মসূচীর কাছেই (ডিআরইউ) ককটেল বিস্ফোরিত হয় বলে জানা গেছে। তরুণ সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে সেখানে অনশন কর্মসূচী চলছে। শুক্রবার শাহবাগের মহাসমাবেশ থেকে কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিলেও দাবি ওঠে। আন্দোলনকারীরা অবিলম্বে ’৭১-এর ঘাতকদের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল করতে নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.